ড. ইউনূসকে শক্ত হাতে সরকার পরিচালনা করার আহ্বান ফখরুলের

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
শক্ত হাতে সরকার পরিচালনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ নতুন করে গড়ে তুলবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার-সেই সুযোগকে আজকে আবার ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে সেখানে বসে অপতৎপরতার পরিকল্পনা ও চক্রান্ত করছেন। কি করে এই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়া যায়, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় এবং একটা অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারই চক্রান্ত হিসেবে আজকে আমরা দেখছি বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে একটা অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
দেশের বিদ্যামান পরিস্থিতি তুলে ধরে মঙ্গলবার
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে
তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির উদ্যোগে ‘২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯
পিলখানায় শহিদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে’ এই আলোচনা সভা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি শক্ত হাতে আপনার সরকারকে পরিচালিত করুন।
আপনি কোনো পক্ষপাতিত্ব করছেন এটা যেন কেউ না বলে। সে কথা আমি শুনতে চাই না। আপনি অনেক
বিখ্যাত মানুষ। সারা বিশ্বে আপনার নাম আছে। সেটা আপনি রাখবেন। আমরা আশা করব, সম্পূর্ণ
নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দ্রুত ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান।
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং ভবিষ্যতের জন্য
সমৃদ্ধি আনবেন। এটাই প্রত্যাশা।
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,
কাদা ছোড়াছুড়ি ও তর্ক-বির্তক বন্ধ করে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। যাতে ঐক্যবদ্ধ থাকার মধ্যে
আমরা একটা গণতান্ত্রিক জায়গায় পৌঁছাতে পারি। অনেকে বলেন ‘আমরা না কি শুধু নির্বাচন,
নির্বাচন করছি, আমরা সংস্কার করতে চাই না’। এতো বড় মিথ্যা প্রচারণা তারা (ষড়যন্ত্রকারী)
বিভিন্নভাবে চালাচ্ছে। কয়েকজন মানুষ, তারা বিএনপিকে টার্গেট করেছে। মিথ্যা ও অপপ্রচার
করে বিএনপিকে হেয় করতে চায়।
ফখরুল বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠিত না করলে আমরা কোনো মতেই একটা স্থিতিশীল অবস্থা পাব না। সেজন্য আমরা বারবার
বলে আসছি, দেশে প্রকৃতপক্ষে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত
করতে হবে। এটার জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছি। আজকে সেই জায়গায় বিভিন্ন রকম প্রশ্ন
তুলে একটা নৈরাজ্যের দিকে দেশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২৫ ফেব্রুয়ারি একটা ‘কালো দিন’ উল্লেখ
করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে
দেওয়ার জন্য এবং যারা লড়াই করে স্বাধীনতাকে রক্ষা করে, তাদের মনোবলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য
ও জাতির মনোবলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের শক্ররা পরিকল্পিতভাবে বিডিআর বিদ্রোহ
ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে পরেই অত্যন্ত পরিকল্পনার সঙ্গে যারা বাংলাদেশের
শক্র তাদের সঙ্গে যোগসাজস করে এই বিদ্রোহের ঘটনা ঘটিয়ে সেদিন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর
প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তাকে তারা হত্যা করেছে। এই যে একটা ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। আমার প্রশ্নটা
ওই জায়গায়-সেদিন যিনি রাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিলেন, শেখ হাসিনা সেদিন কি ভূমিকা পালন করেছেন,
সেদিন সেনাবাহিনী প্রধান কি ভূমিকা পালন করেছেন?
জাতির দুঃসময়ে সেনাবাহিনীর এগিয়ে আসা এবং
তাদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের শক্তি। আমরা
তাদেরকে সব সময় দেখেছি, জাতির দুঃসময়ে তারা এগিয়ে আসেন। আজকে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের
মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৃতপক্ষে একটা দেশপ্রেমিক ভূমিকা পালন করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.)
হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা
রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এর আগে এদিন সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে
পিলখানা ট্র্যাজেডির শহিদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর। তখন তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শত্রুরা ষড়যন্ত্র করে ৫৭ জন সেনা
কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আঘাত হানা এবং
সেনাবাহিনীর মনোবল দুর্বল করে দেওয়া। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনার সঙ্গে যোগসাজশ করেছিল এবং
যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে দুদিন ধরে পিলখানায় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
তিনি অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, আজ পর্যন্ত
এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। তবে সরকারকে (অন্তর্বর্তী) ধন্যবাদ জানাই।
তারা অন্তত এটিকে শহিদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমরা আশা করি, এই ঘটনার সঠিক
তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করা হবে এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা
হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন
বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমরা শহিদদের প্রতি
শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি, সেনা সদস্যদের এই ত্যাগ বৃথা যাবে না এবং বাংলাদেশ
সত্যিকারের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।