বুলডোজার দিয়ে টানা আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা, ভাঙা যায়নি আমুর বাড়ির দেওয়াল
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩২ পিএম

গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস উপলক্ষে ছাত্র সমাজের উদ্দেশে পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা জানায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এর পরপরই এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা।
হাসিনার এই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা চালায় ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বর্তমানে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এ ঘটনার পর রাজধানীর ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের বাড়ি, শেখ মুজিবের ম্যুরাল এবং মুজিব পরিবারের সদস্যদের নামসম্বলিত ফলক ভাঙচুর শুরু করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
এর রেশ ধরে বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডের অবস্থিত সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনে হামলা চালায় ছাত্র-জনতা।
বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর রাত পর্যন্ত বাড়িটি ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
টানা আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পরও এই বাড়ির একটি ইটও ভাঙতে পারেনি শক্তিশালী বুলডোজার। তিনতলা ওই ভবনটিকে বাড়ি না বলে প্রাসাদ বললেও কম বলা হবে। পরে ভবনের ভেতরে থাকা আসবাব বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ভূতের বাড়ি নামে খ্যাত আমুর বাসভবনের গেট ভেঙে ঢুকলেও প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পরও মূল ভবনের একটি ইটও নড়াতে পারেনি বুলডোজার। আড়াই ঘণ্টা চেষ্টায় ভবনের নিচতলায় থাকা একটি জানালার একাংশ স্থানচ্যুত করা ছাড়া আর কিছুই করা যায়নি। তবে ভবনের ভেতরে থাকা আসবাব ভাঙচুরের পাশাপাশি সব মালামাল বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্র-জনতা।
এর আগে ৫ আগস্ট ওই বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছিল। তখনও মূল ভবনের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি কেউ। গত ৬ মাসে অবশ্য সেই ক্ষতি মেরামত করে ভবনটিতে বসবাস শুরু করেছিলেন আমুসংশ্লিষ্ট লোকজন।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে শিক্ষার্থীরা যখন যান তখনও ভেতরেই ছিলেন তারা। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কারা ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল তা জানাতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয় প্রশাসনকে। অন্যথায় কঠিন অবস্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনের বরিশাল মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা কাজী আবু যাঈদ।
বহু চেষ্টা চালিয়েও আমুর বাসভবনের দেওয়াল ভাঙা যায়নি খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাড়িটি দেখতে ভিড় জমাতে থাকেন উৎসুক নারী-পুরুষ। বিনা অনুমতিতে প্রবেশের সুযোগ না থাকায় বাড়িটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহও ছিল সবার। ৫ আগস্টের ভাঙচুরের পর খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে গেট ও সীমানা দেওয়াল মেরামত করে পুনরায় চালু করা হয়েছিল।
দুপুর ২টা নাগাদ সেখানে গিয়ে চোখে পড়ে বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী-পুরুষের ভিড়। তিনতলা ভবনের ভেতরটা ঘুরে দেখছেন তারা। ডুপ্লেক্স স্টাইলে গড়া ভবনের সিঁড়ি নিচতলা থেকে উঠে গেছে তিনতলার ছাদে। প্রতিটি কক্ষে দামি মার্বেল টাইলস থেকে শুরু করে বহু মূল্যবাস ফিটিংস রয়েছে। বিশাল আয়তনজুড়ে নির্মিত বাড়ির আঙ্গিনায় সুদৃশ্য বাগান। সেখানে থাকা দোলনায় দোল খাচ্ছিলেন ৩ তরুণী। পাশেই থাকা কৃত্রিম ছাতার নিচের বেঞ্চে আড্ডায় কয়েক তরুণ। বাকিরা ব্যস্ত সেলফি আর বাড়ির ছবি তোলায়। অবশ্য বেলা সোয়া ৩টা নাগাদ সবাইকে বাইরে বের করে ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও বাড়ির আঙ্গিনায় রাত পর্যন্ত লেগে থাকে অগণিত মানুষের ভিড়।
আশপাশের বাসিন্দারা জানান, আমির হোসেন আমুর বাড়ি নির্মাণে কম করে হলেও ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। পাশাপাশি গড়ে তোলা হয় মিনি পার্ক। বিপত্নীক আমুর বাড়িটি দেখে চোখ জুড়াতেন নগরবাসী। হাসানাত আব্দুল্লাহর বাড়ি ভাঙা আর আমির হোসেন আমুর বাড়ি ভাঙার চেষ্টা ছাড়াও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নগরের চৌমাথা এলাকায় সাহান আরা বেগম পার্কটিও ভাঙা শুরু করেন ছাত্র-জনতা।