
প্রিন্ট: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৩ এএম
সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে ডিম নিক্ষেপ

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম

আরও পড়ুন
রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের পোস্ট অফিসের গলিতে মানিক নামে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে থানায় নেওয়ার সময় তার ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন উপস্থিত ছাত্র-জনতা।
সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পরেই বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় থানার গেটে পুলিশের গাড়ি আটকে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা তাকে হাতকড়া না পরানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তোপের মুখে পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে মেডিকেল নিয়ে যায়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পর উপস্থিত ছাত্র-জনতা তার ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন।
রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি জানান, পুলিশ দেরিতে হলেও ফ্যাসিবাদের রাঘববোয়ালদের গ্রেফতার শুরু করেছে। এজন্য পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই। তবে রংপুরে আবু সাঈদ হত্যাসহ অনেক মামলার পরিকল্পনাকারীরা এখনো গ্রেফতারের বাইরে রয়েছে; যা আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশের কাছে আমাদের এটি গভীর প্রত্যাশা।
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিন হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালত-৩ এর বিচারক দেবী রাণী রায় এ আদেশ দেন।
এ সময় আদালত চত্বরে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাকে পুলিশের ভ্যানে আদালতে নেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত পথচারী মাহমুদুল হাসান মুন্না হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার এসআই মোস্তাফিজার রহমান তাকে আদালতে তোলেন। এরপর তিনি আদালতে এই সাবেক মন্ত্রীর ১৫ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষে নিজস্ব কোনো আইনজীবী না থাকায় লিগ্যাল এইডের আইনজীবী ইফতে আক্তারের উপস্থিতিতে শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন। পরে তাকে কড়া নিরাপত্তায় আবারও কোতোয়ালি থানায় নিয়ে আসা হয়। রিমান্ড চলাকালীন তাকে এখানেই রাখা হবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন আদালতের ইন্সপেক্টর শাহীনুর রহমান জানান, ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জু করেছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নগরীর সেন্ট্রাল রোডের পোস্ট অফিসের গলিতে মানিক নামে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেন রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী। মন্ত্রীর নামে রংপুর ও ঢাকায় তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, আমাদের কাছে খবর ছিল নগরীর পোস্ট অফিসের গলিতে মানিক নামে এক আত্মীয়ের বাসায় লুকিয়ে আছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী হত্যা মামলার আসামি নুরুজ্জামান আহমেদ। প্রথমে আমরা বিষয়টি যাচাই করি। পরে ওই এলাকা রেকি করে অভিযান চালাই। রাত সাড়ে ৯টায় তাকে গ্রেফতার করে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় আনা হয়।
পুলিশ কমিশনার জানান, নুরুজ্জামান আহমেদ রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত বছর ৪ আগস্ট নগরীর রাজা রামমোহন ক্লাবের সামনে গুলিতে নিহত পথচারী মাহমুদুল হাসান মুন্না হত্যা মামলার আসামি। ওই ঘটনায় নুরুজ্জামান আহমেদসহ ১২৮ জনের নামে গত ৩১ আগস্ট রংপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন মুন্নার বাবা কাউনিয়া উপজেলার বরুয়াহাট এলাকার আব্দুল মজিদ।
পুলিশ কমিশনার আরও জানান, এছাড়াও তার নামে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় ১১ সেপ্টেম্বর এবং ২৪ আগস্ট দায়ের করা দুটি হত্যা মামলা রয়েছে। তিনটি হত্যা মামলায় তিনি এতদিন আত্মগোপন করে ছিলেন।
পুলিশ কমিশনার জানান, পতিত সরকারের মন্ত্রী হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে মাস্টার মাইন্ডদের একজন ছিলেন এই সাবেক মন্ত্রী। সেজন্য আদালতেরে আদেশে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে; যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন-পীড়নের তৎকালীন সরকারের নান ঘটনা উদঘাটন করা যাবে।
নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে ৩ বারের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একবার প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও একবার একই দপ্তরের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।