মানি লন্ডারিং মামলায় খালাস পেলেন নুরউদ্দিন অপু

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময়ে দায়ের হওয়া প্রতিহিংসামূলক মানি লন্ডারিং মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সচিব, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও শরীয়তপুর-৩ (গোসাইরহাট-ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরউদ্দিন আহমেদ অপু।
আজ সোমবার জেলা জজ আদালতের বিশেষ জজ রেজাউল করিম তাকে খালাস দিয়েছেন। নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ মইনুল হাসান জানান, সম্পূর্ণ বানোয়াট মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দিয়ে মিয়া নুরউদ্দিন আহমেদ অপুকে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তিনি ন্যায়বিচারের মাধ্যমে খালাস পাওয়ায় আমরা খুবই সন্তুষ্ট।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা করে র্যাব। মামলায় ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) এবং ২০১৩ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৭ ও ৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে মতিঝিল সিটি সেন্টারে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এবং ইউনাইটেড করপোরেশনের অফিসে বিপুল পরিমাণ অর্থ মজুতের অভিযোগ পায় র্যাব-৩। সংবাদ পেয়ে ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে এ এম হায়দার আলীকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে তিন কোটি ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় ছয়জনসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা হয়।
অ্যাডভোকেট খান মোহাম্মদ মইনুল হাসান জানান, বাস্তবতা হলো এই ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত ও সাজানো। অপু ছিলেন রাজনীতির প্রতিহিংসা-জিঘাংসার নির্মম বলি মাত্র। ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোট ডাকাতির ৬ দিন আগে ২৩ ডিসেম্বর শরীয়তপুর-৩ (গোসাইরহাট-ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ) আসনের বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপুর প্রচার মিছিলে হামলা করে প্রাণনাশের চেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। শেখ হাসিনার নির্দেশে গোসাইরহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনের সামনের সড়কে এই নারকীয় হামলা চালিয়ে মিয়া নুর উদ্দিন অপুর মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং গোটা শরীর থেঁতলে দেয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মাথায় ১৭টি সেলাই দিতে হয়। চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু অবস্থায় নির্বাচনে টাকা বিলি করার হাস্যকর মিথ্যা অভিযোগে অর্থ পাচার আইনের ভুয়া মামলায় তাকে ২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি গ্রেফতার করে র্যাব। তার আগে র্যাব ব্যাগ ভর্তি নতুন টাকার বান্ডিল, চেক বই আর অপুর নির্বাচনি রঙিন পোস্টার উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে অপুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এই টাকা দিয়ে নাকি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্র করছিলেন অপু। তারপর ওই নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার নীল নকশা অনুযায়ী একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে অপুকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে দফায় দফায় রিমান্ডে নির্যাতন করে প্রায় পঙ্গু করে দেওয়া হয়। গুরুত্বর অসুস্থ অপুকে কখনও ফাঁসির আসামিদের জন্য নির্দিষ্ট কনডেম সেলে কখনও কেরানীগঞ্জ, কখনও কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়লেও কারাকর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়নি। এই নির্দয়, নিষ্ঠুর বর্বর সরকার তাকে ভয়ংকর রকমের অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতন হলে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান মিয়া নুরউদ্দিন আহমেদ অপু।