ছাত্রদল সা. সম্পাদককে শিক্ষার্থী
ছাত্রত্ব না থাকলে ছাত্র সংগঠনের কিভাবে নেতা হন?
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অংশ নিয়েছিল ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
তবে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কিছুদিন পর থেকেই ছাত্র সংগঠনগুলো প্রকাশ্য বিভেদে জড়িয়েছে।
এক সংগঠনকে আরেক সংগঠনের বিরুদ্ধে জনসভায় বিস্ফোরক
মন্তব্য করতেও দেখা গেছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘রাষ্ট্র
সংস্কার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শিরোনামে মুক্ত আলোচনা আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায়
ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের তরুণ আইনজীবী ও উপস্থাপক মানজুর আল মতিন।
সেখানে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশ
ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এসএম ফরহাদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়
সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের
মজুমদার। এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আলোচনার এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থী ছাত্রদলের
সাধারণ সম্পাদক নাছিরের কাছে জানতে চান- ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল
একসঙ্গে আন্দোলন করলেও এখন কেন বিভেদ তৈরি হয়েছে?
জবাবে নাছির বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারাই
ঐক্যের বিভেদ ডেকে এনেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি যুক্তি দেন- ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে
শুধু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা প্রতিনিধিত্ব করতে চাওয়ায় বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।
এমনকি তাদের মধ্যে থেকেই তিনজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শুধু তারাই ছাত্র
প্রতিনিধি হিসেবে দেখা করে থাকেন।
ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী নাছিরের কাছে জানতে
চান- ‘এখানে যারা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন সবার থেকে আপনার (নাছির) বয়সের
পার্থক্য অনেক। আপনার ছাত্রত্ব আছে কিনা? আর যদি আপনার ছাত্রত্ব না থাকে তাহলে আপনি
কিভাবে ছাত্র সংগঠনের নেতা হন? শুধু তাই নয়, কিভাবে ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন?’
ওই শিক্ষার্থী যুক্তি দেন, ‘রানিং ছাত্রদের দাবি রানিং ছাত্ররাই উপলদ্ধি করবে এবং বুঝবে।
আমাদের প্রত্যাশা ছাত্র সংগঠনের নেতা হবে রানিং ছাত্র। আমার কষ্ট রানিং ছাত্র বুঝবে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা
কী কী সমস্যা ফেস করে থাকেন, সেটি রানিং ছাত্র নেতারা বুঝবেন’।
জবাবে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট
হাসিনার জুলুম-নির্যাতনের কারণে দলীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়নি। ফলে আগের কমিটিই রয়ে গেছে’।
এদিকে গত ২৫ নভেম্বর সভার আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলন। সেখানে ১৯টি ছাত্র সংগঠন অংশ নিলেও ছাত্রদলের কোনো প্রতিনিধি ছিল না।
সভায় উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে ছাত্রদল সাধারণ
সম্পাদক বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার প্রকল্প, শহিদদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগসহ
নানা কার্যক্রমে ছাত্রদের যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে দেখেছি কেবল
একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকেই সব কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে
কোনো প্রকার আলোচনাও করা হয়নি।
অপরদিকে ছাত্রদলের সঙ্গে শুধু বৈষম্যবিরোধী
আন্দোলন নয়, ছাত্রশিবিরের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব চরমে।
উভয় ছাত্র সংগঠনের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
সর্বশেষ প্রায় ১৪ বছর পর ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলনে জাহিদুল ইসলাম সভাপতি এবং নুরুল
ইসলাম সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। পরদিন
ছাত্রশিবিরের এ কাউন্সিলকে পাতানো এবং নাটকপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ
সম্পাদক। পরে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা কয়েকটি লাইন লেখে এ মন্তব্যের জবাব দিয়েছিলেন
ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল।