ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বক্তব্যের দায় ফারুকেরই: জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৪ পিএম
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নাগরিক সমাবেশে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় আহত গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসান হামলাকারী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে জড়িয়ে যে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন তার দায়-দায়িত্ব শুধু তার ওপরই বর্তায় বলে দাবি করেছেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান। শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়- ফারুক হাসান তার ওপর হামলাকারীদের নাম-পরিচয় না জেনেই প্রথমে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি এ বক্তব্যের দায় চাপিয়েছেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমানের ওপর। এটি মূলত ফারুক হাসানের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের কোন নেতা ছাত্রদলকে জড়িয়ে বক্তব্য দেবেন এটি কল্পনাপ্রসূত অবান্তর কথা। তাই কেউ এমন কথা বলেছে দাবি করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের দায় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের ওপর চাপানোর সুযোগ নাই। এটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞান যে, কেউ অহেতুক দাবি করলেই কোনো রাজনৈতিক নেতা দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনকে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী করতে পারেন না। এটি লাগামহীন বেফাঁস কথা বলার অভ্যাস থেকে হতে পারে অথবা কোনো চক্রান্তের কাজে নিজের ওপর পরিচালিত দুঃখজনক হামলাকে ব্যবহার করার মতলবও হতে পারে। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি যে, এরকম অভ্যাস ভারতের দালাল শেখ হাসিনার ছিল, তিনি একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করে তাদের ঘায়েল করার অপচেষ্টা করেছিলেন।
বিবৃতিতে আনিছুর রহমান আরও বলেন, হামলার বিষয়ে ফারুক হাসানের বক্তব্যেরও স্থিরতা নাই। তিনি ছাত্রদলকে জড়ানোর পর একই হামলাকারীদের জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের লোক বলেও দাবি করেছেন। তার এ দাবির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বিরুদ্ধে বিরতিহীনভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ শুরু থেকেই ভিডিও ফুটেজ সরবরাহসহ হামলাকারীদের নাম-পরিচয় গণঅধিকার পরিষদকে জানিয়েছে। হামলাকারীদের প্রকৃত পরিচয় ও নেপথ্যে কে বা কারা জড়িত তাও তারা অবহিত।
এছাড়া বিবৃতিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে বিরত হতেও আহ্বান জানিয়েছেন দলটির রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান।
উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি শহিদ মিনারে জুলাইয়ের শহিদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানসহ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আহত হন।
তবে হামলার পর ফেসবুক লাইভে এসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছিলেন ফারুক হাসান। পরে অবশ্য সেই ভিডিও মুছে ফেলেন তিনি। পরে হামলার জন্য জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীদের দায়ী করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।
এদিকে ঘটনার ৬ দিনের মাথায় হাসপাতালে ফারুক হাসানকে দেখতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জানতে চান- ওই দিন কারা হামলা করেছিল। জবাবে রাশেদ বলেন, সমাবেশে গণঅভ্যুত্থান পক্ষের লোক সেজে আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা চালিয়েছিল।
তবে এ হামলার পেছনে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে শহিদ পরিবারের সদস্যদের না যাওয়ার জন্য ফোন করেন সারজিস। ওই ফোনের একটি রেকর্ড অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হয়।
হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশের পর পুলিশ মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোলকে গ্রেফতার করে; কিন্তু গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় তাদের জামিন দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও তন্ময়কে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
অপরদিকে হামলার পরদিন ৫ জানুয়ারি হামলাকারীরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শহিদ মিনারে হামলার নেতৃত্বে থাকা আসামি মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের অনুরোধ করেন সারজিস। ‘জুলাই মুভমেন্ট জার্নালিস্ট’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে সারজিসের শেয়ার করা ওই পোস্টটি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন হামলাকারী আবীর আহমেদ শরীফ। এসব কারণে শহিদ মিনারে হামলায় সারজিস জড়িত কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। শহিদের তালিকায় নাম ওঠাতে হয়রানির শিকার, শহিদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং আহতদের যথার্থ চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলমের ভূমিকা নিয়ে গত বুধবার প্রথম প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।' শুধু তাই নয়, জুলাই ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান এই সমন্বয়ক।
রিফাতের পোস্টের পর থেকে সারজিসকে নিয়ে ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানান।