Logo
Logo
×

রাজনীতি

ফারুকের ওপর হামলায় জড়িত আসামিদের জামিনদাতা বিচারকের পদত্যাগ দাবি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০১ পিএম

ফারুকের ওপর হামলায় জড়িত আসামিদের জামিনদাতা বিচারকের পদত্যাগ দাবি

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নাগরিক সমাবেশে ফারুক হাসানের ওপর হামলায় জড়িত আসামিদের জামিনদাতা বিচারকের পদত্যাগ দাবি করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। 

তিনি প্রশ্ন করেন, জামিন অযোগ্য ধারার মামলায় আসামিরা কিভাবে জামিন পেল? 

শুক্রবার ফারুক হাসানকে দেখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে তিনি এ দাবি করেন। 

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও তার সঙ্গে হাসপাতালে যান। এছাড়া তাকে দেখতে যান ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাৎ হোসেন সেলিম ও সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা। 

এ সময় আমির খসরু আহত ফারুক হাসানের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। তিনি জানতে চান- ওই দিন কারা হামলা করেছিল। জবাবে রাশেদ খাঁন বলেন, সমাবেশে গণঅভ্যুত্থান পক্ষের লোক সেজে আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা চালিয়েছিল।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমির খসরু বলেন, ফারুক হাসানের ওপর হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়, আরও নিন্দনীয় আসামিদের জামিন পাওয়া। ঘটনার পেছনে কারা আছে, সরকারের উচিত তদন্ত করে খতিয়ে দেখা। ফারুক হাসানের প্রতি দলের পক্ষ থেকে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাশেদ খাঁন বলেন, হাসিনার আমলে আমরা হামলার শিকার হয়েছি, বিচার পাইনি। এখনো যদি হামলার শিকার হই, বিচার না পাই তাহলে কোথায় পরিবর্তন হলো? আমরা এ ঘটনায় সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও শারমিন মুরশিদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা পেয়েছি; কিন্তু এরপরও আসামিদের জামিন করাল কারা? তারা কি সরকারের থেকেও শক্তিশালী। আমরা বিচারকের পদত্যাগ দাবি করছি, তিনি কিভাবে, কোন গ্রাউন্ডে জামিন অযোগ্য মামলায় অপরাধীদের জামিন দিলেন? 

তিনি বলেন, আসামিরা কতটা মানসিকভাবে বিকারগস্ত যে, জামিনের পর দুধ দিয়ে গোসল করেছে। ঘটনার পেছনের রহস্য উদঘাটন করার আগেই আসামিদের জামিন প্রমাণ করে বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়নি। হাসিনার আমলের মতোই সবকিছু চলছে। 

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আছি। ফারুক হাসান আমাদের সহযোদ্ধা, হাসিনার পতনে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।  তার ওপর হামলার বিচার না হওয়া দুঃখজনক। 

এ সময় ফারুক হাসান বলেন, আসামিদের আমি তো ক্ষমা করিনি, তাহলে বিচারক কিভাবে ক্ষমা করে জামিন দিলেন? আমি আসামিদের গ্রেফতার দাবি করছি। আমার পায়ের লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি হাসপাতালে আর ওরা কিভাবে জামিনে মুক্ত?

উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি শহিদ মিনারে জুলাইয়ের শহিদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে হামলার ঘটনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা ফারুক হাসানসহ জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আহত হন। 

তবে হামলার পর ফেসবুক লাইভে এসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছিলেন ফারুক হাসান। পরে অবশ্য সেই ভিডিও মুছে ফেলেন তিনি। পরে হামলার জন্য জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীদের দায়ী করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন। 

হামলার পর ওইদিনই শাহবাগ থানায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। ৬ জানুয়ারি ভোরে শরীফ মিজি ওরফে এসকে আবীর আহমেদ ওরফে শরীফ (২৭) ও মো. কোরবান শেখ হিল্লোলকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। 

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার সাহা আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের পর আসামিরা দুধ দিয়ে গোসলও করেন।

এদিকে হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী ইহসান। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে শহিদ পরিবারের সদস্যদের না যাওয়ার জন্য ফোন করেন সারজিস। ওই ফোনের একটি রেকর্ড অন্তর্বর্তী সরকারকেও দেওয়া হয়। 

হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশের পর পুলিশ মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফ ও কোরবান শেখ হিল্লোলকে গ্রেফতার করে; কিন্তু গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় তাদের জামিন দেন আদালত। এ মামলার অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও তন্ময়কে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ। 

অপরদিকে হামলার পরদিন ৫ জানুয়ারি হামলাকারীরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দোতলায় সংবাদ সম্মেলন করে। সেই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শহিদ মিনারে হামলার নেতৃত্বে থাকা আসামি মোহাম্মদ আবীর আহমেদ শরীফের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের অনুরোধ করেন সারজিস। ‘জুলাই মুভমেন্ট জার্নালিস্ট’ নামক হোয়াটসআপ গ্রুপে সারজিসের শেয়ার করা ওই পোস্টটি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন হামলাকারী আবীর আহমেদ শরীফ। এসব কারণে শহিদ মিনারে হামলায় সারজিস জড়িত কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ও সারজিসের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি মুখ খুলতে শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। শহিদের তালিকায় নাম ওঠাতে হয়রানির শিকার, শহিদ পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়া এবং আহতদের যথার্থ চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রম ও ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলমের ভূমিকা নিয়ে গত বুধবার প্রথম প্রশ্ন তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। নিজের ফেসবুক ওয়ালে সারজিসকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন- ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনকে এক সপ্তাহের মাঝে ফাংশনাল করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বস্তরের জনগণ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।' শুধু তাই নয়, জুলাই ফাউন্ডেশনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান এই সমন্বয়ক। 

রিফাতের পোস্টের পর থেকে সারজিসকে নিয়ে ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব থেকে সারজিসকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানান। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম