ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঘটলে কেউ রেহাই পাবে না: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঘটলে কেউ রেহাই পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রজনতার আন্দোলনের ফসল। গণতান্ত্রিক যে শক্তি সমমানা দল, তাদের সঙ্গে তো এই সরকারের সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিল। আজকে কোনোভাবে যদি শেখ হাসিনার পুনরুত্থান ঘটে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের যদি দু’একজন ভেতরে ভেতরে তাদের (আ.লীগ) সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, তাদের বাদ দিয়ে এই সরকারের তো কেউই রেহাই পাবেন না। আমরা কেউই রেহাই পাব না। আজকে যদি গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য না থাকে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব থাকবে না।
বুধবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক আইজি খোদা বকশ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘এখন কেউ কেউ উপদেষ্টা পরিষদে কিংবা প্রধান উপদেষ্টার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেই আন্দোলনের স্বপক্ষের লোকদের টার্গেট করেন। খোদা বকশ একজন পুলিশের সাবেক আইজি ছিলেন। কিন্তু বিগত সাড়ে ১৫ বছর তার কি ভূমিকা ছিল? তিনি কয়জন লোককে চেনেন। আমরা প্রতিমুহূর্তে নিপীড়িত হয়েছি, বিএনপি অফিস ভেঙে চার-পাঁচবার নিয়ে গেছে আমাদেরকে। এখানে (বিএনপি অফিস) আমরা যারা বসে আছি, শেখ হাসিনার পতনের দিনও জেলখানায় ছিলাম। তার আগের দিন পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলাম। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে স্পিরিট, চেতনা, এটাকে কি তারা ধারণ করেন? ওটা তো তারা ধারণ করেন না। অথচ বড় বড় কথা বলেন, দেখাতে চান যে তারা অত্যন্ত নিরপেক্ষ। আপনি (খোদা বকশ) আইজি ছিলেন, বিএনপির সময় কি করতে পেরেছিলেন? আপনাদের কারণেই তো ১/১১ এসেছিল, অগণতান্ত্রিক শক্তি এসেছিল।’
আলী ইমাম মজুমদার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ হওয়ার পরে আলী ইমাম মজুমদার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করার জন্য ডিসি নিয়োগ দিলেন। বেছে বেছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে যারা প্রশাসনিক লোক ছিল তাদেরকে ডিসি নিয়োগ দিলেন। পরে নানা দিক থেকে বিতর্কিত হয়ে হয়তো এটা পরিবর্তন করেছেন। উনি নিঃসন্দেহে বুদ্ধিজীবী মানুষ, বুদ্ধির চর্চা করেন, পত্রিকায় লেখালেখি করেন। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনার আমলে কখনোই কি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে একটি আর্টিকেল লিখেছেন? আমাদের সমর্থনে কি কখনো একটি কথা লিখেছিলেন অথবা জুলাই-আগস্টে তারা কি কোনো মতামত দিয়েছেন? কিন্তু তারা অন্তরের মধ্যে একটি মত ধারণ করেন সেটার প্রতিফলন আমরা দেখেছি উনি উপদেষ্টা হওয়ার পরে।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা শুনেছি- খোদা বকশ আসার পরে যারা বঞ্চিত ছিলেন, যারা আন্দোলনের পক্ষে সহানুভূতিশীল ছিলেন তাদের বিপক্ষেই উনি অবস্থান নিচ্ছেন। এটা খুবই রহস্যজনক ব্যাপার। টার্গেট করে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিজের পছন্দকে বাস্তবায়ন করার জন্য তারা এই কাজগুলো করছেন। অথচ জেলখানার ভেতরে বসে সালমান এফ রহমান যে কারসাজি করছেন, নানা অপ-তৎপরতা চালাচ্ছেন, এটার ব্যাপারে তো আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। কারাগারের ভেতরে সালমান এফ রহমান রাজার হালে আছেন এবং ওইখান থেকে সমস্ত পরিকল্পনা করছেন, তার তো প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। গার্মেন্টস সেক্টরের অধিকাংশ মালিক হচ্ছে আওয়ামী মনা ফ্যাসিবাদের পক্ষে। এই যে গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তোলার পেছনে নিশ্চয়ই তার অবদান আছে। এগুলোর ব্যাপারে তো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি?’
উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘মূল স্পিরিটের বাইরে কিছু কিছু উপদেষ্টার যে পদক্ষেপ, এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এটা গোটা জাতিকে একটা শঙ্কার মধ্যে নিয়ে গেছে। এ কারণেই আজকে সালমান এফ রহমানদের মত লোকেরা কারাগারের ভেতরে থেকেও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং যারা এখনো গ্রেফতার হননি তারা বিপুল অংকের টাকা ছিটাচ্ছেন অস্থিতিশীল করার জন্য।’
ডক্টর ইউনূস ও আসিফ নজরুলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গণআন্দোলনের সরকার, ছাত্রজনতার বিপ্লবের সরকার। এই সরকারের অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন। তারা কোনো রাজনৈতিক দল করেন না। কিন্তু স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য অনেকেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা যিনি আওয়ামী শাসনকালে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার স্যোশাল বিজনেস মাইক্রোক্রেডিট, যেটা গোটা বিশ্বব্যাপী অভিনন্দিত। এ কারণেই ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস সবার কাছেই শ্রদ্ধাভাজন একজন ব্যক্তি। কিন্তু সবাই তো তার মত এরকম নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হননি। কেউ কেউ হয়েছেন, কারও কারও চেম্বার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ডক্টর আসিফ নজরুল অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করেছেন। এই কারণে নানাভাবে তাকেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে’।
রিজভী বলেন, ‘খোদা বকশ বিএনপির আমলেই পুলিশের আইজি ছিলেন। বিএনপির বিরুদ্ধে এতো অত্যাচার, অবিচার! স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়াকে একটি জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত কারাগারে যেভাবে শেখ হাসিনা নির্যাতন করেছে। সেই সময়ে তো আলী ইমাম মজুমদার অথবা খোদা বকশ কোনো আর্টিকেল লেখেন নি, যে বিএনপির বিরুদ্ধে এত নিপীড়ন নির্যাতন চলছে। এখন এসে একটি স্থিতিশীল সরকারের মধ্যে কে ভালো কে মন্দ উনারা উনাদের বিবেচনা দিয়ে তাদের পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে গণতন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আবু আশফাক, মামুন হাসান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফজলুর রহমান খোকন, রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।