জাতীয় পার্টি-গণঅধিকার পরিষদের পালটাপালটি সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
শুক্রবার রংপুরে একই দিনে সমাবেশের ডাক দিয়েছে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ। হঠাৎ দল দুটির পালটাপালটি কর্মসূচি ঘিরে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। দুইপক্ষের মাঝে এদিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। যদিও জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবেন।
তবে সচেতন নগরবাসীরা বলছেন, প্রত্যেকের রাজনীতি করার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। তবে তা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। শুক্রবারের সমাবেশ ঘিরে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ করবে গণঅধিকার পরিষদ। সেই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে নগরীসহ বিভাগের জেলা ও উপজেলাগুলোতে মতবিনিময় সভা, শুভেচ্ছা মিছিল, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন সাঁটানো ও মাইকিং করা হচ্ছে।তারাও সমাবেশে নেতাকর্মীসহ ব্যাপক মানুষজন উপস্থিতিরে টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন।
অপরদিকে একই দিন বিকালে নগরীর সেন্ট্রাল রোডের জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মী সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছে মহানগর এবং জেলার নেতারা। সেখানে দলটির কো-চেয়ারম্যান, সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, জেলার সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুর রাজ্জাকসহ মহানগর ও জেলার নেতারা অংশ নেবেন।
দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, রংপুর হচ্ছে দলটির ঘাঁটি। এখানে এরশাদের অসংখ্য সৈনিক ও ভক্ত রয়েছেন। এজন্য দলের নেতাকর্মীর বাহিরেও সাধারণ মানুষজন তাদের সঙ্গে অংশ নেবেন। দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অন্য কোনো দল কি করলো তা নিয়ে চিন্তাও করেন না।
জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর রাজধানীতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সারা দেশে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত শনিবার রংপুরে লাঠি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশে করে জাতীয় পার্টি।
এদিন বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ভিপি নুরের গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে গোটা দেশে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমরা ইসরাইলের টাকায় চলা গণঅধিকার পরিষদকে হিসাব করি না; কিন্তু জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
সাবেক সিটি মেয়র মোস্তফা আরও বলেন, একটি গোষ্ঠী ভিপি নুর, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুলাহকে ব্যবহার করে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আমি ভিপি নুরসহ অন্যদের হুঁশিয়ারি দিতে চাই রাজপথে দেখা হবে, রাজপথে স্লোগান হবে, রাজপথে রক্ত যাবে, রাজপথে মিছিল হবে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রস্তুত আছি ও থাকব।
এর আগেও পরপর দুদিন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা সকল ষড়যন্ত্রকে রাজপথে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টি লাঠি মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ করে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করছেন।
এরপর গত রোববার রংপুর নগরীর সিটি বাজারে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও কটূক্তিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জন্য জাতীয় পার্টির নেতাদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য মো. হানিফ খান সজীব। সেই সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনাসহ বক্তব্য প্রত্যাহার করে না নিলে রংপুরসহ সারা দেশে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে গণবিপ্লব এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এদিকে শুক্রবারের কর্মসূচি সফল করতে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। নগরজুড়ে মাইকিংয়ের পাশাপাশি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পার্টির নেতারা কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন।
অপরদিকে বসে নেই গণঅধিকার পরিষদও। এ দলটি পোস্টার, মাইকিং ও ফেস্টুনসহ নানা ধরনের প্রচারণা করছে।
হঠাৎ দল দুটির এমন পালটাপালটি সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণার মধ্যদিয়ে রংপুরের রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। দুই পক্ষের মাঝে এদিন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। তারা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি রংপুর মহানগর ও জেলার যৌথ কর্মী সমাবেশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে রংপুর মহানগর ও জেলা নেতারা ছাড়াও মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ড এবং আট উপজেলার নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি পার্টির সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা জানান, শুক্রবার আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে যৌথ কর্মী সমাবেশ করব। এরপর অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশ প্রসঙ্গে মোস্তফা বলেন, কে কোথায় কি করল এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করব। এজন্য পার্টির নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা বলছেন, রংপুরে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির নেতারা বিক্ষোভ মিছিল করে। যেখানে ফ্যাসিবাদ পতনের অন্যতম রূপকার ডাকসুর সাবেক ভিপি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও গণঅধিকার পরিষদ সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে ভাষায় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও কটূক্তিমূলক স্লোগানসহ বক্তব্য দেওয়া হয়। গণঅধিকার পরিষদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার সহযোগী জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের এমন অসভ্য আচরণ ও জঘন্য কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। জুলাই বিপ্লবের শহিদ আবু সাঈদের রক্তস্নাত রংপুরের মাটিতে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনার ফ্যাসিস্ট ও তার সহযোগীদের রাজনীতির স্থান হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন দলটির নেতারা।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও রংপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হানিফ খান সজীব বলেন, গণঅধিকার পরিষদ একটি শান্তিপ্রিয় দল। প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, পোস্টারিং হয়েছে। রংপুরসহ বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশের প্রস্তুতি ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। এ মুহূর্তে আমরা জাতীয় পার্টি নিয়ে ভাবছি না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে।