জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ট্রল, যা বললেন আমির
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘ ১৫ বছরে জুলুম নির্যাতনের শিকারে পরিণত হওয়া জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নতুনরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এতে আলোচনা যেমন হচ্ছে তেমনি সমালোচনাও হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
৫ আগস্টের পর থেকে মিডিয়াতে জামায়াত ইসলামীর গুরুত্ব বেড়েছে, এতে প্রশংসাও হচ্ছে আবার ট্রলও হচ্ছে। জামায়াতের আমির হিসেবে আপনি এটাকে কিভাবে দেখছেন?
শফিকুর রহমান: আমরা প্রশংসা হিসেবেও দেখি না আবার ট্রল হিসেবেও দেখি না। আপনারা জানেন, বিগত সরকারের শাসনামলে টানা সাড়ে ১৫ বছর আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন হয়েছে। সেই অধ্যায় আমি আর নতুন করে বলতে চাই না।
আপনার প্রশ্ন হলো ৫ আগস্টের পর মিডিয়াতে জামায়াতের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে, এটাকে কেউ প্রশংসা করছে আবার কেউ ট্রল করছে। আমরা এটাকে প্রংশসা এবং ট্রল হিসেবে দেখছি না। আমরা বলতে চাচ্ছি- সাড়ে ১৫ বছর আমাদের মিডিয়ার সামনে আসতে দেওয়া হয়নি। অনেক জুলুমের মধ্যে এটাও একটা জুলুম ছিল। আপনারাও আমাদের কাছে আসতে পারেননি। আমরাও আপনাদের কাছে যেতে পারিনি। আমরা হঠাৎ করে মিডিয়ার সামনে চলে আসিনি। আমাদের থামিয়ে রাখা হয়েছে। এখন আবার স্বাভাবিকভাবে ফিরে এসেছে। এটাকে আমরা অস্বাভাবিক কিছু দেখছি না।
আর সোশ্যাল মিডিয়ায় জামায়াতকে নিয়ে কে বা কারা ট্রল করে এগুলো আসলে কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলোকেই মেইনস্টেক হোল্ডার মনে করি। তারপরও সোশ্যাল মিডিয়ার একটা গুরুত্ব আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা ট্রল করে, অধিকংশই তার পরিচয়ে করে না। বিভিন্ন পরিবর্তন, পর্যায় পরিবর্তন করে এসব ট্রল করা হয়। আমরা কাউকে ট্রল করি না। ট্রল করা পছন্দও করি না। আমার যদি কারো বক্তব্য পছন্দ হয় আমি তা গ্রহণ করব, অপছন্দ হলে গ্রহণ করব না। এখানে ট্রল করার কোনো বিষয় নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরতে পারি যে- হ্যাঁ এই বক্তব্যটা এই যুক্তির খাতিরে সঠিক বা সঠিক নয়। এই বক্তব্যটা এভাবে না হলে এভাবে হলে জাতির জন্য ভালো হতো।
২০০৯ সালের নির্বাচনের পর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের পরিকল্পিত ফাঁসি দেওয়ার মধ্য দিয়ে জামায়াত যে ধাক্কা খেয়েছে- সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার জন্য...?
শফিকুর রহমান: আসলে কেউ কারো বিকল্প না। যেসব নেতাকে ঠান্ডামাথায় হত্যা করা হয়েছে; তারা হঠাৎ করে একদিনে গড়ে ওঠেনি। তারা এই দেশ এবং মাটির সন্তান। তারা এখানকার আলোবাতাসে বড় হয়েছেন। এখানকার মানুষকে নিয়ে তারা ভাবতেন এবং রাজনীতি করতেন। তাদের রাজনীতি ছিল ইসলামের আদর্শের রাজনীতি। তারা আজীবন চেষ্টা করেছেন কিছু ভালো মানুষ তৈরি করার। আমাদের একটাই দাবি ছিল- ‘আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই’। সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আল্লাহর আইন চাই।
যে সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয় সেই সমাজটা ভালো থাকে। ব্যক্তিগতভাবে সবাই ভালো থাকে, সমাজ ভালো থাকে। আর যেখানে সুবিচার থাকে না, অবিচার বিরাজ করে সেখানে কেউ ভালো থাকতে পারে না। এমনকি বিচারক নিজেও ভালো থাকতে পারেন না। আমরা সেই সুবিচার চেয়েছি।
যাদের খুন করা হয়েছে তারা আর ফিরে আসবে না; কিন্তু তাদের স্মৃতিগুলো আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। তাদের স্মৃতিগুলো আমাদের কাজ করতে শক্তি জোগায়। তারা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন মানুষের প্রতি আমাদের দায় এবং দরদ দুটাই যেন থাকে। ভালোবাসাও থাকে শ্রদ্ধাবোধও থাকে। আমাদের নিজের জায়গা থেকে আমরা এটুকুই চেষ্টা করছি। তবে এটা ঠিক আমাদের নেতাদের হত্যা করার মাধ্যমে তারা চেয়েছিল বাংলার জমিন থেকে জামায়াতে ইসলামীকে মুছে ফেলতে, কিন্তু আল্লাহ সেটা চাননি।
জামায়াতকে মুছে ফেলতে গিয়ে তারা নিজেরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে সেটার সাক্ষী এ দেশের ১৯ কোটি মানুষ। আমরা এজন্য কোনো গর্ব অহংকার করি না। আমরাও যদি এরকম করি তাহলে আমাদেরও এরকম হতে পারে। আল্লাহ সবার প্রতি সুবিচার করেন। যে মজলুম হবে সেই আল্লাহ পক্ষ থেকে সুবিচার পাবে। এটা আল্লাহ কোরআনে বারবার ঘোষণা দিয়েছেন। মজলুম যদি সবর করেন, আল্লাহ বলেছেন আমি তোমাদের সঙ্গী হব। আমরা মনে করি বিগত সরকারের আমলে জামায়াত ইসলামীই মজলুম ছিল না, পুরো জাতি মজলুম ছিল। মজলুক জাতিকে আল্লাহ তা’আলা একটা জুলুমের অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছেন।
আর আমরা সেই নির্যাতিত অবস্থা থেকে অতটা রিকভারি করেছি সেটা বড় কথা নয়। আমরা হাজারো দুখ, কষ্ট, বেদনা বুকে চেপে চেষ্টা করেছি জনগণের পাশে থাকার। আমাদের কাজগুলো যেভাবেই হোক চালিয়ে যাওয়ার। আল্লাহ তা’আলা যদি মেহেরবানী করেন, তাহলে আল্লার পক্ষে অনেক কিছুই এই জমিনের মানুষকে উপহার দেওয়া সম্ভব। আমরা আল্লাহ তা’আলার সেই উপহারের আশায় আছি যেন সামাজিক সুবিচার পূর্ণ একটা সমাজ আমরা পাই।