জুলাই বিপ্লব: আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের ফিকশন
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২২ পিএম
হাসিনা
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন ও তার ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যপূর্ণ এক বিশাল ঘটনা। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক পালাবদলের এতো বড়ো ঘটনা এর আগে ঘটেনি।
দুই হাজার চব্বিশ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে ছাত্রসমাজকে কেন্দ্রে রেখে ঘটে যাওয়া এই সফল জাতীয় জাগরণে সর্বস্তরের যত বিপুল সংখ্যক মানুষ সরাসরি শরিক হয়েছে এর আগে তার কোনো নজির নেই। নেতৃত্বের আসনে যে ছাত্ররা ছিলেন তারাও কেউ অতীতের মতো সুপরিচিত ছাত্রনেতা ছিলেন না। তারা সম্ভবত, জুলাই মাসের মধ্যেই তাদের আন্দোলনের সাফল্য অর্জনে এতোটাই বদ্ধপরিকর ছিলেন যে, আন্দোলন জুলাইয়ের চৌহদ্দি পেরিয়ে আগস্টে পৌঁছলেও তারা তা মেনে নিতে রাজি হননি। পয়লা আগস্টকে তারা ৩২ জুলাই এবং এভাবে বিজয়ের দিনকে তারা জুলাই মাসকে টেনে নিয়ে ৩৬ জুলাই বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
সময় ও তারিখকে ভেঙেচুরে নিজেদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার এই দৃঢ় মনোবলের কারণে পাঁচ আগস্টে বিজয় অর্জন সত্বেও তারা এ সফল জাগৃতির 'জুলাই বিপ্লব' নামকরণ করেছেন। অবশ্য পশ্চিম গোলার্ধে এ ছাত্রগণঅভ্যুত্থান 'মনসুন রেভ্যুলিউশন' বলে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সাফল্যে উদ্ভাসিত ছাত্র-জনতার এ বিজয়কে বিপ্লব বলা যায় কিনা তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়ে গেছে। আমি সে বিতর্কে যেতে চাইনা। আমি মনে করি, এ পালাবদল রাষ্ট্র ও সমাজে কতটা মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারবে তার ওপরেই ইতিহাস নির্ধারণ করবে এটি সত্যিকারের বিপ্লব ছিল কিনা।
হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন ও তার বাধ্যতামূলক পালানোকে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতেও অনেকের আপত্তি আছে। আমি অবশ্য জাতীয় জাগৃতির বিশালত্ব বুঝাতে এই পরিবর্তনকে 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' বলাকে গ্রাহ্য করার ও মেনে নেওয়ার পক্ষে। আমার এই পক্ষপাতিত্বের পক্ষে একটা যুক্তি দিই।
বাঙলাভাষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও রাজনৈতিক শব্দভাণ্ডার খুব ঋদ্ধ নয়। তাই বাঙলায় একটা শব্দ দিয়েই অনেক কিছুই বুঝাতে হয়। স্বাধীনতা শব্দটিও তেমনই। ইংরেজিতে ইন্ডিপেন্ডেন্স, লিবার্টি, ফ্রিডম, ইমানসিপেশন-এর মতো অনেকগুলো শব্দ আছে। প্রতিটির ব্যঞ্জনা ও কনোটেশন আলাদা। অথচ বাঙলায় 'স্বাধীনতা' ও 'মুক্তি' ছাড়া এসবের তেমন কোনো প্রতিশব্দ নেই। আর তাই বৃটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা- দুটোকেই আমরা স্বাধীনতাই বলেছি।
একইভাবে ২০২৪ এর বিজয়কেও স্বাধীনতা নাম দিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি না। এতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ম্লান নয়, বরং আরো উজ্জ্বল করে তুলে ধরা হয়। কারণ, যে-সব সামাজিক অধিকার, নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং যেসব মূল্যবোধ সমুন্নত করা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল, তার প্রায় সব কিছুই হরণ করে নিয়েছিল ফ্যাসিবাদ। সেই লক্ষ্যগুলো আবারও ফিরে পাবার প্রত্যয়ে লড়াই করে বিজয় পাওয়াকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বললে মুক্তিযুদ্ধই তো মহিমান্বিত হয়ে ওঠে।
এই বিপ্লবের আরও দু'টি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ট্রাডিশনাল পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর নেতৃত্ব ছাড়াই স্বল্পপরিচিত ছাত্র-তরুণদের হাত ধরে এসেছে বিজয় ও সাফল্য। আর এতো অল্প সময়ে এতো বেশি মানুষের প্রাণদান ও আহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
অতীতের আন্দোলনগুলোতে আমরা মিছিল-সমাবেশের ওপর গুলি চালানোর ফলে প্রাণহানির ঘটনা দেখেছি। এবারে দেখলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। ছাত্রতরুণেরা গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। গুলি খেয়ে একজন লুটিয়ে পড়লে পাশের সাথী ছুটে পালাবার বদলে আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। এসব প্রাণদানের ঘটনা শিহরণ জাগানো বিষ্ময়ের এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। অকাতরে প্রাণ বিলাবার এই স্পর্ধা তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল ফ্যাসিস্ট শাসনের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা থেকে। বিদ্রোহী তারুণ্যের সেই দুর্নিবার ঘৃণা ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি বিজয়লগ্নে গণভবন, ধানমন্ডির মুজিব যাদুঘর ও বিভিন্ন স্থানে তাদের সব স্মারক স্তম্ভে। থানা, পুলিশ, প্রশাসন, প্রচারযন্ত্র কেউ রেহাই পায়নি সেই রুদ্ররোষের কবল থেকে।
এই যে যুগান্তকারী এক বিশাল পালাবদল এ নিয়ে মুভি, নাটক, উপন্যাস, কবিতা অনেক কিছুই সৃষ্টি হতে পারে মেধাবী হাতে। স্বল্পমেধার একজন সামান্য লেখক হিসেবে আজ আমি জুলাই বিপ্লব নিয়ে ছোট্ট একটি ফিকশন লিখতে চাই। এ ফিকশনটি হবে মূলতঃ জুলাই বিপ্লবের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের গল্প।
এই গল্প ও তার পেছনের পটভূমির কিছুটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাপ্রসূত, কিছুটা 'হর্সেস মাউথ' থেকে শোনা এবং বাকিটা আনভেরিফাইড তৃতীয় সূত্র থেকে জানা। প্রামাণ্য সূত্র না থাকা স্টোরিকে ফিকশন হিসেবে বয়ান করাই নিরাপদ। তবে কেউ যদি আমার ওপর অতি আস্থাশীল হয়ে ঘটনাবলীর এই বিবরণকে সত্য বলে বিশ্বাস করেন এবং এর ওপর ভর করে বিপ্লবের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে এবং ভবিষ্যত ঘটনাক্রমকে বুঝতে চেষ্টা করেন তবে সেটা তার স্বাধীনতা।
হাসিনার শাসনের প্রকৃতি ছিল ফ্যাসিবাদ ও হাইব্রিড রেজিমের ককটেল। এমন রেজিমকে কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আন্দোলন দিয়ে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব। প্রয়োজন আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক জোরালো সমর্থন এবং রেজিম রক্ষায় সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকাকে নিষ্ক্রিয় করা। এ লক্ষ্য নিয়েই ভারত-নির্ভর হাসিনা রেজিমের বিরুদ্ধে বিএনপি তাদের এককালের নির্ভরযোগ্য মিত্র গণচীনের সমর্থন লাভের সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু চীন অপর দেশের ঘরোয়া রাজনীতিতে কোনো পক্ষভুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নজর ফেরায়।
২০০১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির দিকেই ঝুঁকে ছিল। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসন 'মডারেট মুসলিম ডেমোক্রেসি'র মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপনের যে উদ্যোগ নেয় তাতে বিএনপিই ছিল অধিক ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ার হামলার পর বদলে যায় সমগ্র প্রেক্ষাপট। সে সময়েই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের যে সমঝোতা হয় তাতে ভারতের নিরাপত্তা ও অখন্ডতা রক্ষার প্রতি অকুণ্ঠ মার্কিন সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো প্রতিবেশী দেশের ঘটনাবলী ভারতের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হলে এর প্রতিকারে ভারতের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি মার্কিন সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানায়।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ট্রাম্পের প্রশাসনও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনা তার সরেজমিন অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান গ্রহনের অনুরোধ করেন। তদানিন্তন নবম ডিভিশনের জিওসি জেনারেল সোহ্রাওয়ার্দি সহ কয়েকজন প্রভাবশালী সেনাকর্মকর্তা তাতে সম্মত হলেও সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভুঁইয়া প্রচলিত সংবিধানের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখবেন বলে জানান। তার যুক্তি ছিল, জেনারেল মঈনের এক-এগারোর সামরিক হস্তক্ষেপ ও পিলখানা ম্যাসাকারের পর সেনাবাহিনীর সংবিধান-বহির্ভূত কোনো ভূমিকা রাখতে যাওয়া ঠিক হবে না।
ড্যান মোজেনা দিল্লী সফরে গিয়েও তার উদ্যোগের পক্ষে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে ব্যর্থ হন। মোজেনার উদ্যোগের বিপরীতে হাসিনা রেজিমের পক্ষে ভারত সরাসরি মাঠে নামে। প্রণব মুখার্জি সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক সাদা পোশাকে এসে দেখা করেন, পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এসে জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ দেন এবং একটি ইভেন্টের ছত্রছায়ায় ভারতীয় কমান্ডোদের একটি দলকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সর্বোপরি জাতিসংঘের দূত তারানকোর মধ্যস্ততায় বিএনপি-আওয়ামী লীগ যখন একটি সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে তখন ভারতীয় ডিক্টেশনে তোফায়েল আহমেদ চূড়ান্ত মুহূর্তে সেই বৈঠকে গিয়ে সমঝোতার উদ্যোগ ভন্ডুল করে দেন। প্রভাবশালী নেতাদের একাংশকে প্রভাবিত করে ভারত বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচিও ব্যর্থ করে দেয়।
জো বাইডেন প্রশাসনের পরিবর্তিত পলিসিতে যুক্তরাষ্ট্র ভারত-নির্ভরতার বদলে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে তাদের অগ্রধিকার হিসেবে ঘোষণা করে। হাসিনা সরকারকে আমেরিকার গণতন্ত্র সন্মেলনে দাওয়াত না দেওয়া এবং র্যাবের ওপর স্যাংশন আরোপ বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলোকে উজ্জীবিত করে। হাসিনা রেজিমের দমননীতির বিরুদ্ধে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সোচ্চার ভূমিকা, পদস্থ মার্কিন কূটনীতিকদের একের পর এক বাংলাদেশ সফর এবং তাদের ঢাকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উৎসাহী ভূমিকায় এমন একটা ধারণা গড়ে ওঠে যে, হাসিনা রেজিমের পক্ষে আবার একটি প্রহসনের নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে যাবে।
এই পটভূমিতে ভারত আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। নয়াদিল্লির সর্বাত্মক তৎপরতায় কনভিন্স হয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার কূটনৈতিক বহরকে হাসিনা রেজিম-বিরোধী সব তৎপরতা স্থগিত রাখতে বলেন।
এতে হাসিনা চাপমুক্ত হয়ে আরো জঘণ্য পন্থায় কুখ্যাত 'আমি-ডামি মডেলের নির্বাচনি প্রহসন' সেরে ফেলেন। বিএনপি নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরণের বোঝাপড়া না থাকায় তারা মার্কিনীদের এ পিছু হটাকে ঠেকাবার কোনো চেষ্টাও করতে পারেননি। আচমকা এ বাঁক বদলের ঘটনায় মর্মাহত হয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কূটনৈতিক সার্ভিস থেকে অকালীন অবসরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
এই হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তৃতীয় একটি রাজনৈতিক পক্ষ বিরোধী দলকে ন্যূনতম স্পেস দেওয়ার মাধ্যমে দেশে একটি সহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাতারের শরণাপন্ন হয়। সউদি আরবের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যে কাতারই যুক্তরাষ্ট্রের সবচে' নিবিড় মিত্রের স্ট্যাটাস লাভ করেছে। আফগানিস্তানের তালিবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতার পেছনেও মুখ্য নেগোশিয়েটরের ভূমিকা পালন করে কাতার। কিন্তু হাসিনাকে নমনীয় করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়ে কাতার ব্যর্থ হয়। মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশের প্রিন্সদের একটি অঘোষিত এলিট ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে হাসিনা কাতারের উদ্যোগের প্রতি তাচ্ছিল্য দেখান।
এই উদ্যোগ ব্যর্থ হবার পর তৃতীয় রাজনৈতিক পক্ষটি দক্ষিন এশিয়ার একটি দেশ ও প্রভাবশালী একটি ইউরেশিয়ান দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দেশ দু'টি যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী নিরাপত্তা সংস্থাকে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট রেজিম বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিতে রাজি করাতে সক্ষম হয়। সংস্থাটি বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি দ্রুত বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক আন্দোলনের বদলে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দেয়। তাদের পরামর্শ ও তদারকিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সূচনা করে। এই আন্দোলনে বিএনপি ও জামায়াত সহ বিরোধী দলগুলোকে কোনোভাবেই প্রকাশ্যে অংশগ্রহন না করার পরামর্শ দেয় ওই মার্কিন সংস্থাটি। সম্ভবতঃ ভারতের দিক থেকে পুরো ব্যাপারটা আড়ালে রাখতেই এই কৌশলের আশ্রয় নেয় তারা। সংস্থাটি বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর কাছেও বিভিন্ন মাধ্যমে কিছু বার্তা পৌঁছে দেয়। ভারতের যখন আর কিছুই করার নেই তখন তেসরা আগস্ট তারিখে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে বার্তা দেয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সব খেল খতম।
ফ্যাসিবাদী রেজিমের পতন ও হাসিনা ভারতে পালানোর পর এই পালাবদলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক সমর্থন লাভের অভিপ্রায়ে পাশ্চাত্যে বিপুলভাবে নন্দিত নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম নয়া সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। তিনি সে প্রস্তাবে সায় দেন।
লেখক পরিচিতি : সাংবাদিক ও লেখক। বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক প্রেসসচিব।