শুধু ব্যক্তি বা দল নয়, নীতি ও আদর্শের সংস্কার অপরিহার্য: ফয়জুল করীম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেছেন, শুধুমাত্র ব্যক্তি পরিবর্তন করে দেশে শান্তি আসবে না, এর জন্য প্রয়োজন নীতিগত ও আদর্শিক পরিবর্তন। সমাজের নীতিবান, ভদ্র ও আদর্শিক লোকদের রাজনীতিতে জায়গা করে দিতে হবে, ক্ষমতায় বসাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে নীতি ও আদর্শের গবেষণা হয় কিন্তু চর্চা হয় না। একটা সময় আমরা বিএনপির দুর্নীতির সমালোচনা শুনতাম প্রতিদিন। হাওয়া ভবনে গল্প আসতো গণমাধ্যমে। আমরা তাদের সরালাম। তারপর হাসিনা এলো। দেশটাকে ধ্বংস করে ফেললেন। তাকে পালাতে হলো। একটা সরকার পরিবর্তনের পর সুপ্রিম কোর্টের গোটা বেঞ্চ পরিবর্তন করা লাগল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রশাসন পরিবর্তন হলো; তাহলে চিন্তা করুন দেশটা কোথায় আছে। কোথায় নিয়ে গেছে দেশকে। নীতিগত পরিবর্তন ছাড়া এমন ব্যক্তি পরিবর্তন কখনোই শান্তি আনতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘আগামীর বাংলাদেশ: যুব সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ। সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী মানসুর আহমদ সাকীর সঞ্চালনায় যুব সংগঠক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবি, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং আলেম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা দেশকে ঢেলে সাজাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টাকে দ্রুতই দেশের প্রতিনিধিত্বশীল যুব সংগঠনগুলোর সাথে আলোচনার দাবি জানান।
মুফতি ফয়জুল করীম আরও বলেন, দেশের অরাজকতার পেছনে দায় হল, নীতি ও আদর্শের অনুপস্থিতি। সুতরাং ব্যক্তি সংস্কারের পাশাপাশি নীতির সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দেশের সংবিধান সংস্কার করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে নতুন সংবিধান ঢেলে সাজাতে হবে। নচেৎ দেশ আবারো অরাজকতার মুখে পড়বে, দলীয় শাসন ও দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হবে। এবং আবারো শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়ে যাবে। সুতরাং শুধু শাসকের পরিবর্তন নয়, নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ইসলামী শাসন ছাড়া জাতির মুক্তি নাই। ইতোপূর্বে সরকারগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে এসেছে। ইসলামী শাসনের ব্যাপারে জনমনে ভীতি তৈরি করতে স্ক্রিপ্ট তৈরি হয়েছে। এর কারণ ছিল, বিগত সকল সরকার তাদের দুর্নীতি-দুঃশাসন চালাতে গিয়ে ইসলামকে বিষোধগার করেছে। ইসলাম ক্ষমতায় আসলে তারা এসকল অপরাধ করতে পারত না। সুতরাং কেমন শাসন চাই, একথার উত্তরে একবাক্যে বলা যায়, শরীয়াহ ভিত্তিক সংবিধান ও অনুশাসন চাই। এসময় তিনি বলেন ইসলাম, দেশ ও মানবতার ভিত্তিতে ঐক্যে করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।
ফয়জুল করীম বলেন, বিগত দিনে যারাই লুটপাট করেছে তাদেরকে বয়কট করতে হবে। আওয়ামী লীগ মিথ্যা মামলা করেছে, চাঁদাবাজি করেছে; এখনো যদি সেগুলো হয় তাহলে বলতে হবে আওয়ামী লীগের দোষটা কোথায়? আমরা চাই না, আওয়ামী লীগ করার কারণে কারো ওপর হামলা হোক, মামলা হোক, মিল ফ্যাক্টরিতে আগুন দেওয়া হোক। আমরা চাই, যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। আমরা চাই না, কোনো এমপি-মন্ত্রীর জন্য জনগণের রাস্তা বন্ধ করা হবে। আমরা চাই প্রধান উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রী রাস্তায় হাঁটবেন কেউ কিছু বলবে না।
শায়খে চরমোনাই আরও বলেন, রাজনীতিতে-ক্ষমতায় ভদ্র মানুষকে আনতে হবে। যারা লুটপাট করেছে তাদেরকে ভোট থেকে বয়কট করতে হবে। ভালো লোক, নীতিবান লোকদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি করতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে অন্তত ভদ্র মানুষদের রাজনীতিতে আসার সুযোগ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এ, বি, সি সবাই চোর। এক চোর সরিয়ে আরেক চোরকে বসালে দেশে শান্তি আসবে না। আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান সবাই মিলে বাংলাদেশের নাগরিক। যখন এই আলোচনা করি তখন ভুলে যাই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলিম। তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কথা বলতে পারি না। ভয়। কমিউনিজম নিয়ে কথা বলি, গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলি তখন ভয় হয় না। ইসলাম নিয়ে কথা বললে ভয় পাই। কিন্তু মানুষ কী চায়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই চায় শান্তি। ইসলাম সকল মানুষের এমনকি পশুর অধিকারও সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে। ইসলামের এই আদর্শ নিয়ে আমরা আলোচনা করতে ভয় পাই। এই চিন্তা পরিবর্তন করতে হবে। নীতি ও আদর্শের চর্চা করতে হবে। সেটা যদি করতে পারি তাহলে এই বাংলাদেশ হবে গোটা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অর্থনীতির লেখক ও গবেষক মুহাইমিন পাটোয়ারি, ভাসানী যুব পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, যুব জাগপা সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, বিকল্প যুব ধারার সভাপতি আসাদুজ্জামান বাচ্চু, এবি যুব পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেন টুটুল, যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক শাহরিয়ার পলাশ, ব্রাকের এইচ আর ফারহান বাশার, জাতীয় ওলামা মাশায়খ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল করীম আবরার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতী শামসুদ্দোহা আশরাফী, আহ্ছানিয়া মিশন ও সুফিজম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বিশিষ্ট লেখক শায়খ উছমান গনী, কলামিস্ট মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী, গবেষক মুফতী আবদুল্লাহ মাসুম, শাহ ইফতেখার তারিক, অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, ঢাকা টাইমসের সিনিয়র সহ-সম্পাদক শাহনূর শাহীন, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের সহ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতী মঈনুদ্দীন খান তানভীর, অ্যাডভোকেট ইমতিয়াজ আহমেদ, সাইবার উদ্যোক্তা অশীত পাল।