পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরিবহণ সেক্টরে দখলদারি, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বন্ধ এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক পরিবর্তন চায় বিএনপি। দলটি বলছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, সেই পরিবর্তন আনতে সড়ক পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। আন্দোলনে অংশ নিয়ে শুধু জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলেরই ৩১ জন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। 

বিএনপি নেতারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ চায় পরিবহণ সেক্টরের গত ১৮ বছরের অপরাধচক্র ভেঙে একটি জনবান্ধব এবং বিশৃঙ্খলা-চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবহণ সেক্টর গড়ে উঠুক। বিএনপি ও দলপন্থি শ্রমিক নেতারা বলছেন, ট্রেড ইউনিয়নের প্রচলিত নিয়ম এবং শ্রমিক সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিবহণ সংগঠন পরিচালিত হবে। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কোথাও কোনো সংকট দেখা দিলে, সেই সংগঠনের সদস্যদের মতামত ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমস্যার সমাধান হবে। 

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতিও। জানতে চাইলে শিমুল বিশ্বাস বলেন, বিএনপি কোনো দখল-বেদখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। কোনো জবরদখল আমরা সমর্থন করি না, বরদাশতও করব না। বিএনপির পক্ষ থেকে দখল-দলীয়করণ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা আছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা, পরিবহণ সেক্টরেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসুক। বিএনপি সেটাই করতে চায়। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, পরিবহণ সেক্টরে গত ১৮ বছর ধরে যে অপরাধচক্র ছিল তা ভেঙে শ্রমিক মালিকদের যুক্ত করে একটি জনবান্ধব, বিশৃঙ্খলা-চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবহণ সেক্টর গড়ে তোলা হবে। পরিবহণ সেক্টরে বিএনপি সেই ইতিবাচক পরিবর্তন চায়।

বিএনপিপন্থি পরিবহণ নেতাদের দাবি, তারা কখনোই দলের নাম ব্যবহার করে কাউকে চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা-অপকর্ম করার ন্যূনতম সুযোগ দেয়নি। দলগতভাবে বিএনপি সবসময় এসব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকেছে। বিশেষ করে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত পরিবহণ সেক্টরে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার থেকে তারা দলকে দূরে রেখেছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও তারা পরিবহণ সেক্টরে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চান। এর কারণ হিসাবে নেতারা বলছেন, বিএনপি কোনো ধরনের দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অরাজকতা সমর্থন করে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের অজ্ঞাতসারে কেউ কোথাও এ ধরনের কাজ করলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’ বলেও জানান তারা। 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুর রহিম বকস (দুদু) ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, বিএনপি কিংবা বিএনপিপন্থি কোনো শ্রমিক নেতা বা নেতারা পরিবহণ সেক্টরে কোনোরূপ দখলবাজিতে যুক্ত নন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ফেডারেশন, ইউনিয়ন ও টার্মিনালগুলোর নেতারা যাত্রী পরিবহণ, পণ্য পরিবহণ, আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহণসহ পরিবহণ ব্যবস্থা সচল ও  চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে ফেডারেশন, ইউনিয়ন, টার্মিনাল নেতা এবং মালিক-শ্রমিক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন সব মতাদর্শের সমন্বয়ে একটি নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক সংগঠন।