সালমান এফ রহমান ও এস আলম
নিবিড় পর্যবেক্ষণে ব্যাংক হিসাবের সব লেনদেন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলমের ব্যাংক হিসাবের সব লেনদেনের তথ্য নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাদের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ এবং এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ব্যাংক লেনদেনও। পাশাপাশি তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং বেনামি কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে লেনদেন হয়ে থাকলে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) নিজস্ব গোয়েন্দা সোর্স ব্যবহার করে তাদের হিসাবের লেনদেনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে তাদের ব্যক্তিগত, কোম্পানি ও বেনামে বিভিন্ন ধরনের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্ভাব্য সব তথ্য বিএফআইইউ-এর হাতে এলেই আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বিএফআইইউ থেকে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোতে চিঠি দিয়ে এস আলম গ্রুপের ব্যাংক লেনদেনের সমুদয় তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএফআইইউ ইতোমধ্যে ওই দুই আলোচিত ব্যবসায়ী সম্পর্কে নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্র ব্যবহার করে দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে। এগুলো তাদের ডেটাবেজে রয়েছে।
এছাড়া দেশে-বিদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্যও তারা সংগ্রহ করেছে। এখন সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এগুলোর সত্যতা মিললেই আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ব্যাংক ও ফিন্যান্স কোম্পানিগুলোয় চিঠি দিয়ে তাদের লেনদেন ও সম্পদের তথ্য চাওয়া হবে। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের (বিভিন্ন দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর সংস্থা) মাধ্যমে তথ্য চাওয়া হবে।
জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে এস আলমের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশটিতে তাদের বিলাশবহুল একটি হোটেল রয়েছে। এ হোটেলটি এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ভিন্ন একটি কোম্পানির নামে পরিচালিত হলেও এ ব্যবসা সম্পর্কে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ওই হোটেল ব্যবসা পরিচালনার জন্য দেশ থেকে বৈধভাবে কোনো ডলারও নেওয়া হয়নি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টদের ধারণা- ওইসব অর্থ দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে তাদের হুন্ডি ব্যবসার একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশের ব্যাংক খাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গ্রুপটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে লেনদেন করেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের একটি শাখা থেকে হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের আরও একটি ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুটি ঋণই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। বেনামে থাকায় এর দায়ে সরাসরি এস আলম গ্রুপকে খেলাপি করা যাচ্ছে না।
এদিকে সালমান এফ রহমান যুক্তরাজ্যে বিভিন্নভাবে অর্থ পাচার করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশে তার নামে-বেনামে অর্থসম্পদ রয়েছে। ওইগুলো তিনি বিভিন্ন কাজে ব্যবহারও করেছেন। কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করলেও তার মূল্য তিনি দেশে আনেননি। ফলে ওইসব অর্থ পাচার করে দেওয়া হয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রেও পণ্য দেশে না এনে টাকা পাচার করেছেন। এছাড়া অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমেও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
২০০৬ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের তদন্তে সালমান এফ রহমানের নামে বিদেশে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে লন্ডনে একটি ব্যাংকে তার নামে ৩৫০ কোটি ডলারের একটি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের সন্ধান পাওয়া যায়। দেশ থেকে পাচার করা অর্থ তিনি ওই ক্রেডিট কার্ডে রেখেছিলেন।