জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করলেই ছাত্রদের গণজোয়ার বন্ধ হবে না: গণতন্ত্র মঞ্চ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের গণজোয়ার, গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া সিংহভাগ মানুষের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। আন্দোলনে জীবন দেওয়া ৮৭ ভাগ মানুষের কোনো দলীয় পরিচয় পাওয়া যায়নি। আন্দোলনের স্পট থেকে কোনো জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী আটক হয়নি। কাজেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করলেই ছাত্রদের গণজোয়ার বন্ধ হবে না।
রাজধানীর তোপখানা রোডে বৃহস্পতিবার গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন জোটের নেতারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল হক, গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম ও শহিদ উদ্দিন প্রমুখ।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে ছাত্রদের যে আন্দোলন চলছে সেটা যৌক্তিক, শান্তিপূর্ণ; কিন্তু সরকার পেটুয়া বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মাঝে গুলি ছুড়েছে। আকাশ থেকে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে টিয়ারশেল ও গুলি করেছে। দুই শতাধিকের নিরীহ মানুষকে মারা হলো, যে তালিকা আরও বেশি। আহতদের ওপরেও হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আজ সামরিক বাহিনীকে কলুষিত করা চেষ্টা হচ্ছে। অথচ এখনো সামরিক বাহিনীকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আগে কি কখনো দেখেছেন কারফিউ হলে রাস্তায় মানুষ নেমে পড়ে?
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, হাইকোর্ট এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে পুলিশ গালি দিয়েছে, ‘তোরা রাজাকার’ বলে ছাত্রদের পাকিস্তানে চলে যেতে বলেছে। পুলিশ কি এভাবে বলতে পারে? আজ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে, যেকোনো সময় নিষিদ্ধও হতে পারে; কিন্তু স্পটে কোনো একজন শিবির বা জামায়াত নেতাকর্মীকে আপনারা আটক করতে পেরেছেন? পারেন নাই। কারণ আন্দোলন যারা করছেন তাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। যারা নিহত হয়েছেন তাদের ৮৭ ভাগ মানুষ কোনো দলের সঙ্গে জড়িত না। তাহলে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেই কি আন্দোলন থেকে যাবে? এটা থামবে না। তবে অনেকটাই থেমে যাবে যদি সরকার পদত্যাগ করে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে গুলি করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আহতদের ওপরে চলেছে অমানুষিক নির্যাতন। হাসপাতালগুলোয় গোয়েন্দা আর সরকারের পেটুয়া বাহিনীর মহড়া চলেছে। এরপরও আন্দোলন থেমে যায়নি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সঙ্গে একমত আছি, সংহতি জানাচ্ছি। রাজপথ ছাড়িনি, ছাড়ব না; যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের অধিকার ফিরে না আসে।
শহিদ উদ্দিন বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লুণ্ঠন হয়েছিল। সেটা ফিরে আনার চেষ্টা চলছে। হাইকোর্টে আন্দোলনকারীদের পুলিশ রাজাকার বলেছে। এরা (পুলিশ) কারা? তীব্র নিন্দা জানাই। ঘৃণা জানাতে চাই তাদের বিরুদ্ধে। এ আন্দোলন শুধু কোটা নয়, সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে চলা এ আন্দোলনে আমরা রাজপথে থাকতে চাই।
অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো পার্টি না, রাজনৈতিক দল না। এরা খুনি, তারা খুন করছে, সেই খুনকে প্রতিষ্ঠিত করতে মন্ত্রীরা কথা বলছে। এসব তদন্ত পুলিশি হলে সেটা তাদের ইচ্ছায় হবে। দেশে গণহত্যা করেছে, শিশু হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে খুন করেছে। সেসবের তদন্ত হতে হবে।
সাইফুল হক বলেন, দেশ স্বাধীনের পরও সবচেয়ে বড় ছাত্র গণজাগরণ ছিল এটা। দেশব্যাপী মার্চ ফর জাস্টিস পালনের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ শুরু হয়েছে। আজ আমরা আমাদের বীরদের স্মরণ করছি। তাদের অহিংস দাবির প্রতি পুরো দেশ সমর্থন দিয়েছে আমরাও তাদের প্রতি সংহতি জানাই। ৮৭ ভাগ হত্যার শিকার তাদের কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না। সরকারের মধ্যে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। সরকার শেষ দিনগুলো পার করছে। তারা পালিয়ে গেছে।