খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে যেকোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন: ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১০:০৩ পিএম
সমাবেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ৬ বছর ধরে আটক রেখেছেন। পরিষ্কার করে বলতে চাই- দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, অন্যথায় যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। এ দেশের মানুষ কখনো খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি অবস্থায় থাকতে দেবে না।
শনিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘ আট মাস পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পূর্বঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার থাকা মানেই হচ্ছে দেশ ধ্বংস হওয়া, গণতন্ত্র ধ্বংস হওয়া। তাই নিজেদেরকে রক্ষা করতে হলে সামনের দিনে আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এ দানব সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা ছাড়াও গাজীপুর জেলা ও মহানগর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেন। বেলা পৌনে ৩টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়ে চলে সোয়া ৬টা পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগের হাতে দেশ নিরাপদ নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করে দিয়েছে। সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান আজকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। অবিশ্বাস্য লাগে যখন দেখি পুলিশ বাহিনীর প্রধান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, এনবিআরের কর্মকর্তা কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। সব এখন বেরিয়ে আসছে। কিন্তু আরও যারা বড় বড় রাঘব-বোয়াল, যারা এই চুরির হোতা তাদেরকে এখনো ধরা হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের ‘অপমৃত্যু’ হয়ে গেছে: রিজভী
বিএনপি মহাসচিব বলেন, লক্ষ্য একটা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। কারণ দেশনেত্রী সারা জীবন দেশের জনগণের পাশে থেকে সংগ্রাম করেছেন। তিনি এ দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনের জন্য অনেকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আপনাদের ত্যাগ দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু এটা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত নয়। আমাদের রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভয়ে মারা যাওয়ার চাইতে সাহস করে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হচ্ছে একমাত্র কাজ।
ভারতের সঙ্গে ‘অসম চুক্তির’ সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতে জন্য চুক্তি করেছেন, সবাই বলছেন এটা দেশের স্বার্থবিরোধী। আমরা পানি চাই, অধিকার চাই, সীমান্তে হত্যা বন্ধ চাই, সমস্যাগুলোর সমাধান চাই। তা না করে এই সরকার সবকিছুই বিলিয়ে দিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজ পনেরো বছর আন্দোলন করেছি, ফল আনতে পারি নি। কেন হচ্ছে না? কারণ যথা সময়ে মাঠে থাকি না। ২৮ অক্টোবর আন্দোলন চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল, পালটা প্রতিরোধ করতে পারতাম। কিন্তু কেন পারলাম না? মৃত্যুর ভয় ছিল, রক্ত দেওয়ার ভয় ছিল। আমাদের যে জনসমর্থন, এটাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেকটা কর্মীকে, প্রত্যেক এলাকায় যারা সমর্থক আছে তাদেরকেও মাঠে নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। চোর-ডাকাতরা মুক্তি পেলেও তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও বলেছেন এ দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অথচ, সরকার বলছে তিনি ভালো আছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির যে আন্দোলন তা শুরু হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশনেত্রী এখনো আমাদের মাঝে মুক্ত নন, এখনো তিনি কারাগারে। আবার তিনি চিকিৎসা পান না, যেটা মানুষের মৌলিক অধিকার। তিনি জামিন পান না, অথচ খুনের আসামি জামিন পায়, মৃত্যুদণ্ডের আসামি জামিন পায়। তাই বলব, আমরা যখন নামছি একবার চেষ্টা করি। আমার নেত্রী ৭ বছর যাবত মঞ্চে আসেন না, ৭টি বছর যাবত তার কণ্ঠ জনগণ শুনতে পায় না। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে ঘরে ফেরেন। তাহলেই দেশ মুক্ত, গণতন্ত্র মুক্ত, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মুক্ত।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আজকে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। যেখানে অন্যায় আইনে পরিণত হয়ে যায়, সেখানে প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে যায়। আজকে প্রতিরোধ অনিবার্য। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হলে প্রতিরোধে নামতে হবে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, ফরহাদ হালিম ডোনার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শিরিন সুলতানা, সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ। এছাড়াও ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, নারায়ণগঞ্জ জেলার গিয়াস উদ্দিন, মহানগর সাখাওয়াত হোসেন খান, টাঙ্গাইলের ফরহাদ ইকবাল, গাজীপুর মহানগরের শওকত হোসেন সরকারও বক্তব্য দেন। এছাড়াও ছিলেন-কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, জহির উদ্দিন স্বপন, জিকে গউজ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ডা: রফিকুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন আজাদ, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, তাইফুল ইসলাম টিপু, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, তাবিথ আউয়াল, আকরামুল হাসান মিন্টু, নিপুণ রায় চৌধুরী, মো. মাইনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।