কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহ দেবে: জোনায়েদ সাকি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ০৩:৪০ এএম
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আজিজ আহমেদের যদি এতো সম্পদ হয়, তাহলে সরকারের কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের সম্পদ কী পরিমাণ আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বৈধপথে রোজগার করা টাকার ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে। এটা তো ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতিকে উৎসাহ দেওয়া হলো। সোমবার রাজধানীর হাতিরপুলের দলীয় কার্যালয়ে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের মূল লক্ষ্য ধরা হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রথমত মূল্যস্ফীতির হিসেবেই রয়েছে ঘাপলা। সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতি বলা হচ্ছে ৯ শতাংশের বেশি। কিন্তু বিআইডিএসের হিসাব বলছে মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে অনুপস্থিত।
গণসংহতি আন্দোলন মনে করে, বর্তমান সরকার তার ক্ষমতার সহযোগী আমলা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাজেটকেও ব্যবহার করবে। তাদের দুর্নীতি লুটপাটের পথ অবাধ করবে এবং জনগণের সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে এটা এই সরকারের চরিত্র নির্দেশক। ফলে জনগণের স্বার্থে বাজেট প্রণয়ন করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনবান্ধব সরকার দরকার। গণসংহতি আন্দোলন সেই লড়াই এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিশ্র“তিবদ্ধ।
লিখিত বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, প্রতিবছরই শিক্ষাতে যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ইত্যাদি নানা গল্প সরকার করে। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের মান, বরাদ্দের ক্ষেত্র এবং মোট জিডিপির তুলনায় এই বরাদ্দের হার দেখলে বোঝা যায় সরকার আদতে শিক্ষাক্ষেত্রকে খুবই কম গুরুত্ব দিচ্ছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ২.০৮ শতাংশ, ২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১. ৮৩ শতাংশ, ২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১.৭৬ শতাংশ আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১.৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ জিডিপির তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এবং এই বরাদ্দ শিক্ষাক্ষেত্রে আসলে কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এটাও একটা গুরুতর প্রশ্ন।
তিনি বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়েনি তো বটেই বরং গত বছরের সংশোধিত বাজেটের হিসাবে এ খাতে বরাদ্দ কমেছে। দেশে সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। এই ঋণ আদায়ে কোন কার্যকর উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে না থাকলেও উল্টো কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি ঋণ আদায়ে নতুন করে মামলার তোড়জোর চলছে।
আবুল হাসান রুবেল আরো বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোন সংসদ নেই সেটা সত্য। কিন্তু যখন সংসদ ছিল তখনো বাজেট প্রণীত হতো কতিপয় আমলার মাধ্যমে। সংসদের দায়িত্ব বর্তায় কেবল হাত তুলে সমর্থন জানিয়ে বাজেট পাস করিয়ে দেওয়া। আর যেসব বিষয় বিভিন্ন পক্ষ থেকে আলোচনায় আসে তার ভেতর থেকে বাছাই করে মূল বাজেটের খুব বেশি হেরফের করে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনবান্ধব সে কারণে তিনি এগুলো বাতিল করেছেন বা নতুন যুক্ত করেছেন এরকম প্রচার চালানো সহজ হয়, তেমন কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হয়। এবারের বাজেটেও সেরকম প্রক্রিয়ায়ই দেখব। পুরো রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামো আমাদের এরকম নাটক দেখানোর জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্র কাঠামোর একটি সংস্কার ছাড়া, সংসদের কাছে বাজেট প্রণয়নের প্রকৃত ক্ষমতা ছাড়া এবং সার্বিকভাবে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী কোন বাজেট প্রণীত হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-দলের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য হাসান মারুফ রুমী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভ‚ইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলিফ দেওয়ান, মিজানুর রহমান মোল্লা প্রমুখ।