ঈদুল ফিতরে বেশিরভাগ রাজনীতিবিদই এবার ঢাকায় অবস্থান করবেন। ঢাকায় যারা ঈদ করবেন, তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ ঈদের নামাজ শেষে নির্বাচনি এলাকায় যাবেন। যোগ দেবেন নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে। ঈদের আগেও অনেকে নিজ এলাকায় ঘুরে এসেছেন। সেখানে তারা গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে ঈদসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা যাবেন নিজ এলাকায়। ঈদের পরপরই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এবার দলীয় প্রতীক না দিলেও নির্বাচনকে আলাদা গুরুত্ব দিয়েই দেখছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ঈদে নির্বাচনি বার্তা নিয়ে তারা এলাকায় যাবেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে কীভাবে উৎসবমুখর করা যায়-সে বিষয়ে তারা দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেবেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ধারাবাহিক ব্যর্থতায় সতেরো বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। গুম-খুন, নির্যাতন ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। এছাড়া আন্দোলন অব্যাহত রাখার বার্তা নিয়েও এলাকায় যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও ঈদ করবেন ঢাকায় সরকারি বাসভবন গণভবনে। ঈদের দিন বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সিনিয়র নেতা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, সিনিয়র সচিব, সচিব ও সমপর্যায়ের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার কথা রয়েছে সরকারপ্রধানের।
ঢাকায় ঈদ করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীও ঈদ করবেন ঢাকায়। ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই তিনি তার নির্বাচনি এলাকা ঘুরে এসেছেন।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে রাজধানীর ইস্কাটনে নিজ বাসায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। ঈদের একদিন পর তিনি নিজ নির্বাচনি এলাকায় যাবেন। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ ঈদ করবেন ঢাকায়। নির্বাচনি এলাকা টাঙ্গাইলে ঈদ উদযাপন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। ঢাকায় নিজ নির্বাচনি এলাকায় ঈদ করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। ঈদের দিন সন্ধ্যা সাতটায় মোহাম্মদপুর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান ঈদ করবেন ফরিদপুর নিজ নির্বাচনি এলাকায়। ঈদের দিন বিকালে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঈদ করবেন চট্টগ্রামে। কুষ্টিয়ায় ঈদ করবেন আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। ঢাকায় ঈদ করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ঢাকায় ঈদ করবেন এমএম কামাল হোসেন। ঈদের একদিন পর তার নিজ নির্বাচনি এলাকা খুলনায় যাওয়ার কথা রয়েছে। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ঈদের দিন চাঁদপুরে অবস্থান করবেন।
অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় ঈদ করবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবার বড় ছেলে তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ ও নাতনিদের ছাড়াই ঈদ করবেন। তবে ভার্চুয়ালি তাদের সঙ্গে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এছাড়া বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম এস্কান্দারসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্যও ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সময় কাটাবেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তার সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দেখা করার কথা রয়েছে। এছাড়া ঈদের দিন সকাল ১১টার দিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া করবেন দলের সিনিয়র নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঢাকায় ঈদ করবেন। ঈদের আগে তিনি নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুরে এসেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দির সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান ঢাকায় থাকবেন। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নরসিংদীতে ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামের নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং সালাউদ্দিন আহমেদ বিদেশে রয়েছেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকায় ঈদ করবেন।
এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ অনেকে ঢাকায় থাকবেন। আর ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকায় এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরে নিজ এলাকায় ঈদ করবেন। সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ নিজ এলাকা মুন্সীগঞ্জে, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুরে, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল ঢাকায় ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম সিরাজগঞ্জের নিজ এলাকায় ঈদ করবেন।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহের নিজ এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন। ঢাকায় ঈদ করে তিনি আবারও নিজ এলাকায় যাবেন। কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোরে নিজ নির্বাচনি এলাকায় ঈদ করবেন। কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল নিজ এলাকা জামালপুরের মেলান্দহে, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ ঢাকায় ঈদের নামাজ পড়ে বরিশালের নিজ এলাকায় যাবেন। কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল নিজ এলাকা ঝালকাঠি ঘুরে এসেছেন, তিনি ঢাকায় ঈদ করবেন। কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন ও তাবিথ আউয়াল বিদেশে রয়েছেন, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ঢাকায় ঈদ করবেন। ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ঢাকায় ঈদ করবেন। মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকও ঢাকায় তার নির্বাচনি এলাকায় ঈদ করবেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আসলাম চৌধুরী, আজিজুল বারী হেলাল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপির এক ডজনেরও বেশি কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে রয়েছেন, সেখানেই এবার তাদের ঈদ করতে হবে।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে ঈদ করবেন। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জে ঈদ করবেন।
এছাড়া এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা ঢাকায় ঈদ করবেন। জেএসডির আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার নিজ গ্রামে ও গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে ঈদ করবেন। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম চিকিৎসার জন্য বিদেশে রয়েছেন। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ঢাকায় থাকবেন। অবশ্য তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেই নির্বাচনি এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন।