বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচনে উত্তাপ বাড়িয়েছেন এই প্রার্থীরা। ছবি: যুগান্তর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রোববার। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে ভোটের উত্তাপ দেশের সর্বত্র নেই। তবে বেশ কিছু আসনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কপালে ভাজ ফেলে দিয়েছেন নৌকার প্রার্থীদের। ওইসব আসনে এবার ভোটের ফল কী হয় তা জানার অপেক্ষায় দেশবাসী।
দেশের কিছু কিছু আসন কিছু প্রার্থীদের জন্য অনেকটা বরাদ্দই বলা চলে। কারণ ওইসব আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীরা কখনোই পরাজিত হননি।
আরও পড়ুন: বীর মুক্তিযোদ্ধার আক্ষেপ: ৫২ বছর পরও ভোটের জন্য রক্ত দিতে হয়!
তারা এবারও ভোটের মাঠে রয়েছেন। বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচনে উত্তাপ বাড়িয়েছেন এই প্রার্থীরা। তাদের ওপর নজর আছে দেশবাসীর।
অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মির্জা আজম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ অনেকে।
শেখ সেলিম
একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার বিরল গৌরব অর্জন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সেই ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে যে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে আটবার ভোটে জয়ী হয়েছেন শেখ সেলিম। দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমন রেকর্ড আর কারও নেই।
তোফায়েল আহমেদ
আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ ৮ বারের সংসদ সদস্য। দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ১২ তম বারের মতো ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ১৯৭০ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ৫৩ বছর পর ৮০-তে পৌঁছেও দলীয় মনোনয়নে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ‘মুজিববাহিনী’র অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন তিনি। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও পাবনা নিয়ে গঠিত মুজিববাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি গত তিন সংসদের টানা নির্বাচিত এমপি।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
শেখ সেলিমের পরই রয়েছেন জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পিরোজপুর-২ আসনের এই সংসদ সদস্য দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছেই যে জনপ্রিয়, ভোটের মাঠে তার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি এই আসন থেকে ১৯৮৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট সাতবার নির্বাচিত হয়েছেন।
ফারুক খান
গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। জাতির পিতার জন্মস্থান হওয়ায় এটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। এ জেলার তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীরাই বারবার জয়ী হয়েছেন।
ড. আবদুর রাজ্জাক
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ২০০১ সালে কর্মজীবন শেষ করে টাঙ্গাইল-১ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে (ধনবাড়ী-মধুপুর) এই আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন সময় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার
দিনাজপুর-৫ আসনে ৩৫ বছর ধরে সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনি ১৯৮৬ সালে এই আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ধারাবাহিকভাবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তমবারের মতো সংসদ সদস্য হন।
নূর-ই আলম চৌধুরী
আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত মাদারীপুর-১ আসন। এখানে টানা ৩৩ বছর ধরে নৌকার একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন নূর-ই-আলম চৌধুরী। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদে তার বাবা ইলিয়াছ আহম্মেদ চৌধুরী সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় মারা যান। ওই বছর উপনির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন তিনি। এর পর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদের চিফ হুইফ নূর-ই-আলম। এবার সপ্তমবারের মতো এই আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাতুষ্পুত্র।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ
মো. আব্দুস শহীদ বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মির্জা আজম
জামালপুর-৩ আসনের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম। স্কুলজীবন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিনি ১৯৯১ সালে মাত্র ২৮ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ছয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। তিনি অষ্টম সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ এবং নবম সংসদে ক্ষমতাসীন দলের হুইপ ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী হন। সেজন্য সপ্তমবারের মতো দলও তার ওপর আস্থা রেখেছে।
বীর বাহাদুর উশৈ সিং
জাতীয় সংসদের ৩০০তম আসন পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই আসনে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত নেতা বীর বাহাদুর উশৈ সিং। তিনি ছয়বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।
হুইপ আতিক
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক শেরপুর-১ আসন থেকে টানা পাঁচবার, প্রখ্যাত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে টানা চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। বারবার নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তারা দল ও মানুষের আস্থাভাজন হিসেবে রাজনীতিতে আলোচিত হয়েছেন।
জাহিদ আহসান রাসেল
গাজীপুর-২ আসন থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এবারও তিনি এই আসন থেকে লড়ছেন। তার আগে ওই আসন থেকে রাসেলের পিতা আহসান উল্লাহ মাস্টার দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।