ওবায়দুল কাদেরের কথায় প্রমাণ হয় ‘ডালমে কুচ কালা হায়’: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ১৮ কোটি জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে বিরোধী দল ছাড়া একদলীয় নির্বাচন ঘিরে আতঙ্কে ভুগছে সরকার। তাদের দুশ্চিন্তা এখনো কাটেনি। কিছুদিন ধরে তারা ওয়ান ইলেভেনের আতঙ্কের কথা বলছেন। তাদের ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ নয়, প্রতিবেশী দেশটি আওয়ামী লীগের নির্বাচনহীন অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা কেন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ‘স্বামী-স্ত্রীর’ সম্পর্কের কথা বলে তা দলটির নেতা-মন্ত্রীর বক্তব্যের পর জনগণের অনুধাবন করতে বাকি নেই। তবে পরগাছা, পরজীবী, পরনির্ভর হয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। বাংলাদেশে ভারত আরেকটি ওয়ান ইলেভেন ঠেকালেও ১৮ কোটি জনগণের রুদ্ররোষ থেকে আওয়ামী লীগ রেহাই পাবে না। সরকারের পতন অনিবার্য।
বুধবার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেনে, সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পিটার হাস ভারতে গেছেন; কিন্তু বাংলাদেশে আর ওয়ান ইলেভেন ঘটাতে সমর্থন দেবে না ভারত’। তার এ কথায় প্রমাণ হয় যে, ডালমে কুচ কালা হায়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে সেনা নিয়ন্ত্রিত অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখল করেছিল সেই ওয়ান ইলেভেনের মাস্টারমাইন্ড তাহলে কারা তা ওবায়দুল কাদের প্রকাশ করলেন। ওয়ান ইলেভেন থেকে উত্তরণ, অতঃপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রশ্নবিদ্ধ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর কাহিনি তৎকালীন ভারতের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির লেখা বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’ গ্রন্থে বিবৃত করেছেন। সেই সময় ভারতের স্বনামধন্য সাংবাদিক ও কৌশল বিশ্লেষক কেপি নায়ারের বিশ্লেষণধর্মী এক লেখায় তুলে ধরা হয় কিভাবে প্রণব মুখার্জী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার পথ মসৃণ করে দেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবারো ৭ জানুয়ারির দলহীন নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিবেশী দেশটির ভূমিকা উদ্বেগজনক।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ লুটেরা-ডাকাতের দলে পরিণত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি ডামি নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে কোন কোন লুটেরা শত শত কোটি টাকা-সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কোন মন্ত্রী বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা করলেও নির্বাচনি হলফনামায় এ তথ্য গোপন করেছেন সেই তথ্য তুলে ধরেছে। এ সত্য প্রকাশ করায় আঁতে ঘা লেগেছে নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রী-এমপি-লুটেরাচক্রের। এতেই যেন পিত্ত জ্বলে গেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেছেন- ‘টিআইবি বিএনপির শাখা সংগঠন, মতাদর্শ একই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ২৩ ডিসেম্বর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) রিপোর্টে ১৫ বছরে ব্যাংক থেকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৯২ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের যে চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে সেটি আংশিক চিত্র। প্রকৃত তথ্য আরও ভয়াবহ। এ টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এগুলো আর ব্যাংকে ফেরত আসবে না। এ টাকা দিয়ে কানাডায় বেগমপাড়া, আমেরিকায় বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি-ব্যবসা, দুবাই সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ তিন মহাদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে। সুইচ ব্যাংকে নতুন নতুন অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। আওয়ামী লুটেরাদের দেশে বহুতল বাড়ি, বিলাসী গাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য, জীবনযাপনে জৌলুস উপচে পড়ছে। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ ফতুর হয়ে খেয়ে না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এখন চোর থেকে ডাকাত, লুটেরা, মাফিয়াচক্র ও সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। তারা এখন ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল রাখার চেষ্টা করছে। এবার এদের যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতেই হবে। এই আমি আর ডামি ভোট বর্জন করতে হবে।
১৫ নভেম্বর নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত ১১ হাজার ৬৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি জানান, মামলা হয়েছে ৪১৯টি। আর ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার পর্যন্ত ২৩ হাজার ৬৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট মামলা ৬৮৮টির অধিক। মৃত্যু হয়েছে একজন সাংবাদিকসহ ২৬ জনের।