‘শাহজাহান-ইব্রাহিম নিজেদের পজিশন বুঝলেন না’
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১০ এএম
বিএনপি থেকে সদ্য বহিস্কৃত হওয়া ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ও সৈয়দ ইব্রাহিম। ফাইল ছবি
দেশের রাজনীতিতে সমসাময়িক নানা ইস্যু নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মানিক রাইহান বাপ্পী।
যুগান্তর: ব্যারিস্টার শাহজাহার ওমর ও সৈয়দ একে একরামুজ্জামান জামিন পেয়েই নৌকায় উঠলেন। তাদের জামিন কি আইনি প্রক্রিয়া, না রফাদফা ছিল?
ব্যারিস্টার পার্থ: এটা বুঝার জন্য আইনজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। এটা জনসাধারণও বুঝে। সরকার বরাবরই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য জুডিশিয়ারিকে ব্যবহার করে। আওয়ামী লীগ তো প্রথম থেকেই জুডিশিয়ারিকে ব্যবহার করছে। আজকে নতুন না।
যুগান্তর: বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই ?
ব্যারিস্টার পার্থ: বর্তমানে রাজনীতি ডেড লকে চলে গেছে। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, সেটি প্রায় এক বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। আমরা ও বিদেশি বন্ধুরা সবসময় একটা ভালো ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করছিলাম। সেখান থেকে এখন নির্বাচন নিয়ে কী হচ্ছে— এটা সাদাপানির মতো পরিষ্কার। সরকার তো ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে রাজি নয়, সংলাপও করল না। এক কথায়— সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে সরকার এগোচ্ছে না। আবার আরেকটি ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে সরকার। একই কায়দায় আরেকটি নির্বাচন দেখতে পাবে পুরো দেশ।
যুগান্তর: বিএনপি ভাঙতে, না অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে ব্যারিস্টার শাহজাহানকে নিয়েছে আওয়ামী লীগ?
ব্যারিস্টার পার্থ: শাহজাহান ওমর তো তৃণমূলে যাননি বা অন্য জায়গায় যাননি। তিনি দল পরিবর্তন করেছেন। দল ভাঙেননি। শাহজাহান ওমর যদি তৃণমূলও যেতেন বা দল ভাঙতেন বা বিএনএফে যেতেন, তা হলে বুঝতাম— বিএনপিকে ভাঙতে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত শাহজাহান ওমরের মূল্য আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে। এ জন্য উনাকে রাতারাতি জেল থেকে বের করিয়ে নমিনেশন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অথচ তার নামে একাধিক মামলা। শাহজাহানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে যে, গাড়ি পোড়া মামলা থাকুক অথবা পুলিশ হত্যা মামলা থাকুক, আওয়ামী লীগে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
যুগান্তর: শাহজাহান ওমরের নৌকায় নির্বাচন করাটা কীভাবে দেখেন?
ব্যারিস্টার পার্থ: আমি কীভাবে দেখি সেটি বিষয় না, জনগণ কীভাবে নিচ্ছে, সেটি বিষয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে শাহজাহান ওমর ও মেজর (অব.) ইবরাহিমকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের ভূমিকা দিয়ে মূল্যায়ন করতে চাই।
সেটার মূল্য আজকের দিনের এমপি-মন্ত্রীর থেকে অনেক বেশি। দুর্ভাগ্যবশত উনারা নিজেদের পজিশন বুঝলেন না। এই বয়সে এসে যদি এমপি হওয়াটাকে অর্জন মনে করেন, তা হলে আমার কিছু বলার নেই।
যুগান্তর: নির্বাচনে ‘ডামি প্রার্থী’— এটি কি আওয়ামী লীগের কৌশল না অসহায়ত্ব?
ব্যারিস্টার পার্থ: কোনো কৌশল নয়, এটা অসহায়ত্ব। শুধু আমেরিকাসহ বিশ্বকে দেখানো যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। এ জন্য একসময় বলছে— স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে। আবার বলছে— নৌকায় ভোট দিতে হবে। একবার ডামি প্রার্থী দাঁড়াও, আবার বলছে— স্বতন্ত্র প্রার্থী সবাই দাঁড়ানো যাবে না। আমরা আবার বাছাই করে নেব। এটাই আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্ব।
আওয়ামী লীগের ধারণা ছিল— বিএনপিকে ভাঙতে পারবে। অথবা বিএনপির সঙ্গে ছোট ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারবে এবং সিনিয়র অনেক নেতাকে বিএনপি থেকে সরাতে পারবে। কিন্তু সেখানে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ডামি প্রার্থী দিচ্ছে। যাতে অন্তত্ব ২০ শতাংশ ভোটারও যদি কেন্দ্রে আসে। আমি বিশ্বাস করি এবারও ৫ শতাংশ ভোটার আসবে না।
দুঃখজনক বিষয় হলো— স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ দলকে ডামি প্রার্থী দিতে হচ্ছে। এর চাইতে বড় দুর্ভাগ্যের কিছুই হতে পারে না।
যুগান্তর: যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোসহ গণতান্ত্রিক দেশগুলো সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকে তাগিদ দিচ্ছে। এর পরও যদি এভাবে নির্বাচন হয়ে যায় দেশে কোনো পড়বে কিনা?
ব্যারিস্টার পার্থ: দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে। বড় ধরনের স্যাংশন আসার সম্ভাবনা আছে। বিশ্বের অনেক দেশ বারবার সতর্ক করছে। তার পরও সরকার যখন পুতুল খেলা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। নির্বাচনের পর যদি আমেরিকা স্যাংশন দেয়, তা হলে তো সরকারের তরফ থেকে কিছু বলার থাকবে না।
এভাবে নির্বাচন সরকার করলে প্রথমত বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হবে। স্যাংশন দিলে এলসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা ও গার্মেন্টসে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এতে লাখ লাখ শ্রমিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমরা তো ইমপোর্টনির্ভর দেশ। আমি মনে করি পুরো দেশের ওপর সাংঘাতিক প্রভাব পড়বে।
যুগান্তর: তফশিল ঘোষণার আগে ডোনাল্ড লু তিন দলকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিকে সরকার কতটা গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে করেন?
ব্যারিস্টার পার্থ: চিঠিকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি আওয়ামী লীগ। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে যে, সংলাপ বা সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না তারা। আওয়ামী লীগ হেরে যাবে, এটা নিশ্চিত হয়েই তো পুতুল খেলা নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ জানে, গত দুটি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে? তাদের ইমেজ তৈরির কোনো উদ্দেশ্য নেই। তাদের মূল টার্গেট ক্ষমতায় থাকতে হবে। সেখানে ডোনাল্ড লু বা ডোনাল্ড ট্রাম্প চিঠি দিলেও এটা আওয়ামী লীগের কাছে কোনো বিষয়ই না।
যুগান্তর: ছাত্ররাজনীতিকে কীভাবে দেখেন?
ব্যারিস্টার পার্থ: এই অল্প বয়সে যারা রাজনীতি বুঝে না, তাদের রাজনীতিতে ঢোকানো রাজনৈতিক ব্যবহার ছাড়া কিছুই নয়। এই বাচ্চা ছেলেরা যখন রাজনীতিকে ব্যবহারসহ বিভিন্ন দাবি আদায় করবে বা বিভিন্ন প্রবলেম সলভ করবে। স্বাভাবিকভাবে তারা মেধা থেকে সরে যাবে। নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ করার নামে ছাত্রদের ব্যবহার করা হয়।
যুগান্তর: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
ব্যারিস্টার পার্থ: আপনাকেও ধন্যবাদ।