পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩২ পিএম
সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, সব অর্থনৈতিক সেক্টর ধ্বংসের পর এবার সরকারের কুনজর পড়েছে বৈদেশিক রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্পের ওপর। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি দমনে হত্যা, নিষ্পেষণ, অপিরণামদর্শী সিদ্ধান্ত এবং একটি দেশের স্বার্থে এই সর্ববৃহৎ শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেওয়া হয়েছে।
শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রায় অবধারিত বলে আশঙ্কা করছেন মালিকরা। বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বুধবার পোশাক খাতে আতঙ্কের বিষয়টি মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা এলে বিদেশিরা পণ্য নেবে না। ইতোমধ্যে পণ্যের আদেশদাতারা এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ঋণপত্র খোলার সময়। এমনকি পণ্য জাহাজীকরণের পর নিষেধাজ্ঞা এলেও পণ্য নেবে না তারা।’ ইতোমধ্যে এ খাত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছে। পোশাক শিল্পের মালিকদের ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বললেই পোশাক রপ্তানি বন্ধ হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিলে কিছুই হবে না।’ জনগণ বিশ্বাস করে রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসা এখন অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চায় অবৈধ সরকার।
রিমান্ডে নির্যাতন করে তরুণ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মিথ্যা সাক্ষ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের পর রিমান্ড, জার্মানির ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের’ অত্যাচারের কাহিনীকেও হার মানাবে। দল পরিবর্তনের জন্য কারান্তরীণ গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদদের চরম অসম্মানজনকভাবে তাদের সম্মতি আদায়ের জন্য জুলুম করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
নেতা-কর্মীদের নিপীড়ন, নির্যাতন, হেনস্তা ও হেয় করেও পরাস্ত করতে না পেরে উৎপীড়নের পথ অবলম্বন করছে। সরকার আইন প্রয়োগকারী র্যাব-পুলিশ ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলের নীতি-নৈতিকতা অধঃপতনের দিকে ঠেলে দেওয়ার এক সুগভীর নীলনকশা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তাতে কোনো লাভ হবে না। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ।
রিজভী বলেন, নির্বাচনের নামে তামাশা পুরোদমে চলছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা শুনে ক্ষিপ্ত প্রধানমন্ত্রী, খড়গ হাতে নিয়ে নির্বাচনি মাঠে ‘আদার বনে শিয়াল রাজার মতো’ ছুটে বেড়াচ্ছেন। তিনিই সব, তাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। সুতরাং যারা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলেন, তাদের তিনি ব্যক্তিগত দুশমন হিসাবে বিবেচনা করেন। আর সেজন্য বিরোধী দলের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির আন্দোলন দমাতে নানা পন্থা অবলম্বন করেছেন-যেগুলো নির্মম, পৈশাচিক।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে বোকা ভাবেন, বিদেশিদেরকেও তারা বোকা ভাবতে শুরু করেছেন। তারা ভেবেছেন এভাবে সবার চোখে ধুলো দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের সব মানুষ জানে, এমনকি যারা আওয়ামী লীগ করে তারাও জানেন, সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে সর্বোচ্চ প্রতারণা করছে। বাংলাদেশের সব মানুষকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাজপথে নামতে হবে। আমরা বারবার বলেছি, একতরফা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভ‚ত করবে, বিপর্যস্ত করবে। দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।
রিজভী বলেন, এই পাতানো নির্বাচন কেবল বয়কট নয় গণ-প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের আন্দোলন। শুধু বিএনপির নয়, এই আন্দোলন গণতন্ত্রকামী সব রাজনৈতিক দল ও শ্রেণিপেশার মানুষের। জনআকাঙ্খার সঙ্গে সম্পৃক্ত এই আন্দোলন। গণতন্ত্রহারা মানুষ আজ লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত। মানুষের মনের মঙ্গলকর ও কল্যাণকর প্রবণতাগুলোর বিকাশ ঘটাতে হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বির্নিমাণ অপরিহার্য। এ আন্দোলন সফল হবেই। সরকারের পতন অনিবার্য। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।