হেফাজতের দাবি নিয়ে যা বলছেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২০ পিএম
তাবলিগের দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সংগঠনটির এক সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। হেফাজতের এ দাবির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।
বৃহস্পতিবার মাওলানা সাদ অনুসারীদের পক্ষে মাওলানা জিয়া ইবনে কাসেম, মুফতি ওসামা ইসলাম, মুফতি আযীমুদ্দীন, মাওলানা মুয়াজ আব্দুল্লাহ নূর, মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মুফতি শফিউল্লাহ মক্কী গণমাধ্যমে এক যৌথ বিবৃতি পাঠান।
এতে বলা হয়, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আজীবন বাংলাদেশে আসা নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি অনাধিকার চর্চা। মাওলানা সাদ এ দেশে আসা না আসার বিষয়টি তাবলিগ জামাত সংশ্লিষ্ট। এটি হেফাজতের কোনো বিষয় নয়।
মাওলানা সাদের অনুসারীদের দাবি, দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের বিষয়ে ফতোয়া দিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও বাংলাদেশের কিছু আলেম মাওলানা সাদের বিরোধী পক্ষের হয়ে কাজ করছেন।
প্রশ্ন করে তারা বলেন, মাওলানা সাদ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় মজলিসে বয়ান করতে পারলে, উপস্থিত হতে পারলে, বাংলাদেশে আসতে পারবে না কেন?
হেফাজতের দাবি প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, দেওবন্দের ফতোয়ার অজুহাতে মাওলানা সাদের বিরোধিতার যে পথ ও পন্থা অবলম্বন করছেন আদৌ কি দেওবন্দ তা সমর্থন করে? আহলে দেওবন্দ বা ওলামায়ে কেরাম জাতির অভিভাবক। দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ হলে উভয়কে মিলিয়ে দেওয়া বা উভয়ের ব্যাপারে নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করা আলেমদের দায়িত্ব! কিন্তু আফসোস, এ দেশে আমরা দেখছি একদিকে তারা তাবলিগের একটি পক্ষকে যেমন সমর্থন করছেন, ঠিক তেমনি আরেকটি পক্ষের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেওবন্দের আদর্শকে লঙ্গন করছেন।
তারা আরও বলেন, একজন মানুষ হিসেবে মাওলানা সাদ এবং যেকোনো ব্যক্তি কখনো ভুলের ঊর্ধ্বে হতে পারেন না। দেওবন্দ অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে তাকে সংশোধন করতেই পারেন। কিন্তু সংশোধনের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি যে দেওবন্দ মাওলানা সাদের কোন ইজতেমা ও কোন প্রোগ্রামে যাওয়ার ব্যাপারে এবং তার পোগ্রামে কারো অংশ অংশগ্রহণের ব্যাপারে কখনো কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। না দেওবন্দের ছাত্রদেরকে তার বিরোধিতার জন্য মাঠে নামিয়েছেন। বরং স্পষ্টত বারবার দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি উল্লেখ করেছে যে- আমরা তাবলিগের বিষয়ে কোনো পক্ষাবলম্বন করছি না কিন্তু বাংলাদেশের আলেমরা এ বিষয়ে ঠিক দেওবন্দের বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন।
হেফাজত নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে মাওলানা সাদের অনুসারীরা বলেন, বাংলাদেশে নায়ক-গায়ক, পোপ-যাজক কতজন আসছে; তখন হেফাজতে ইসলাম এসব বিষয়ের প্রতিবাদ না করে মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার বিষয়ে কেন এভাবে উঠেপড়ে লেগেছে আমরা বুঝতে পারছি না! যদি আপনারা বলেন, এটা ধর্মীয় বিষয়। ধর্মীয় অঙ্গন আমাদের কথায় চলবে। তাহলে বলবো, বিভিন্ন মাজারভক্ত তরিকতপন্থি লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতাদের যখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তখন কি আপনারা এদের বিরোধিতা করছেন? এগুলোতো আমাদের দেশেই স্বাধীনভাবে চলছে এবং তাদের মত করে চলছে। কোথায়, আপনারা তো এর বিরোধিতা করছেন না? তাহলে কেন মাওলানা সাদের আসার ব্যাপারে এই বিরোধিতামূলক পদক্ষেপ?
তাবলিগের বিষয়ে হেফাজতকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আমরা বলতে চাই, ওলামায়ে কেরাম তাদের আসনে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখে তাবলিগের বিষয়টি তাদের নিজস্ব কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দিক। মাওলানা সাদ এদেশে আসবেন কি আসবেন না, এটা তাবলিগের মুরুব্বিরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারিত্বের বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বিরা। ২০১৫ সালে তাবলিগের দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিরোধিতা করেন পাকিস্তান ও ভারতের কয়েকজন মুরব্বি।
তাই তাবলিগের মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজামুদ্দীন মারকাজের সমান ক্ষমতা দাবি করে আলমি শূরা গঠন করেন তারা।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশীদারিত্বের বিবাদে দিল্লি-লাহোর জড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিভক্তি।
ওই সময়ের ১১ জন শূরা সদস্যের মধ্যে ৬ জন নিজামুদ্দীন মারকাজ ও মাওলানা সাদের পক্ষে অবস্থান নিলেও বাকি ৫ জন তার বিরোধিতা করেন। হেফাজতপন্থি আলেমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হলে বাংলাদেশেও বিষয়টি নিয়ে উত্তাপ ছড়ায়। এ অংশের বাধায় মাওলানা সাদ ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি। বাংলাদেশে আসলেও ইজতেমায় অংশ না নিয়েই ফিরে যেতে হয় তাকে।
এরপর ওই বছরে ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়। সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও শতাধিক আহত হন।
এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই ভাগ হয়ে পড়ে তাবলিগ জামাত। ২০১৯ সাল থেকে আলাদাভাবে বিশ্ব ইজতেমা পরিচালনা করেন তারা।