জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই শ্রীলংকার দিকে যাচ্ছি। শ্রীলংকার দিকে যাওয়া কথাটা আমি বলতে চাই না। শ্রীলংকা এখন আমাদের চেয়ে ভালো আছে। তারা এখন আস্তে আস্তে উপরের দিকে যাচ্ছে। তাদের এখানে আমাদের তুলনায় জিনিসপত্রের দাম কম। তাদের রিজার্ভের পজিশন আমাদের চেয়ে ভালো। তারা ভালোর দিকে গেছে। আর আমরা খারাপের চাইতে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ নেই। প্রতিমাসে এক বিলিয়ন ডলার করে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এখন সরকারের হিসাবে ১৭ কিংবা ১৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। অথচ এত বেশি ঋণ এবং পাওনাদার আছে যাদের দিলে আর কোনো রিজার্ভ থাকবে না। অথচ রিজার্ভ ১০ বিলিয়নের কম থাকলে কোনো দেশ এলসি গ্রহণ করবে না। বিদেশ থেকে কোনো জিনিসপত্র আনতে পারবেন না। এদেশে সেই পজিশনের সৃষ্টি করেছে এ সরকার।
শনিবার বিকালে নগরীর কাজির দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব আলীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান, জহুরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও এসএম ফয়সল চিশতী। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিচার বিভাগে কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। বিচার বিভাগে কোনো লোক গেলে সঠিক বিচার পেত। এমনকি এরশাদ সরকারের আমলে এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সেই মামলায়ও এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। সংবাদপত্রে এমন কোনো কুৎসা রটনা নেই যা এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে করা হয়নি। এমন কোনো বিশ্রী কার্টুন নেই এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে করা হয়নি। এরশাদ সাহেব কি কাউকে ধরে নিয়ে জেলে ভরেছেন? কাউকে গুম করেছেন? কারও বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেননি। স্বাধীনতা ছিল সবখানে। দেশের মালিক জনগণ। অথচ সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে জনগণকে মুক্তচিন্তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কঠিন শাস্তির আওতায় রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে ও গণতন্ত্রকে হত্যা করছে। এই সরকার জনগণের জবাবদিহিমূলক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলছে। যে কোনো ধরনের সমালোচনা করলে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উল্লেখ করে সাইবার আইনে মামলা করা হচ্ছে। সমালোচনার স্থানে আইন দিয়ে মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। ডিসি, এসপিরা সরকারের ব্যাজ ধারণ করে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, আপনারা শুনেছেন কিভাবে রিজার্ভ সংকট হলো। এর কারণ ব্যাংকগুলোকে খালি করে দেওয়া হয়েছে। এক লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার কথা সরকার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আমার কাছে প্রমাণ আছে, আইএমএফ বলেছে, তিন লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটপাট হয়েছে। বাংলাদেশের একজন বড় অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম বলেছেন, দেশ থেকে ব্যাংকের সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। এখনও টাকা পাচার হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির কারণে ২০১১-১২ সালে এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা পিডিবি’র লস হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ লস গিয়ে ঠেকেছে এক লাখ ১৫-২০ হাজার কোটি টাকায়। সামনের বার এই লস আরও বাড়বে।
জিএম কাদের বলেন, রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। দুই হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র ভারত করেছে পাঁচ মিলিয়ন ডলারে। সেখানে আমাদের দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের জন্য ১৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেছে। এখনও খরচ হচ্ছে। শতভাগ রাশিয়ার ইঞ্জিনিয়াররা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছেন। তাদের সাহায্য ছাড়া সরকার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতেও পারবে না, বন্ধ করতেও পারবে না।
সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তেব্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য জাতীয় পার্টির নৈতিকভাবে সমর্থন রয়েছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে চিকিৎসার জন্য নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগার থেকে পিজি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছিল। বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সেটা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জেলে মারা গেলে মারা যাক। সেই খালেদা জিয়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। তিনি আজকে একই অবস্থায় পড়ে ভুগছেন।
চুন্নু আরও বলেন, আমরা যখন মহাজোট করি ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি ছিল। এখন সেটা দেড় লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ লাইন তৈরি করা হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছে। সরকারের এমপিরা অনেকে আমেরিকায় বাড়ি করেছেন। তারা কিভাবে টাকা নিয়ে গেছেন সেটা সংসদে প্রশ্ন রেখেছিলাম। সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ টাকা চুরি করেছে। দেশের জনগণের কথা ভাবে না। ফ্লাইওভার করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ বেকার। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি সেগুলো চিন্তা করে না। শিক্ষিত বেকাররা চাকরি পায় না, সেদিকে কোনো চিন্তা নেই।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান চৌধুরী, মহানগর জাতীয় মহিলা পার্টির সভানেত্রী সুলতানা রহমান, মহানগর যুবসংহতির সভাপতি এনামুল হক সুজন, কৃষক পার্টির নগর সভাপতি এনামুল হক বেলাল, জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ।
নতুন কমিটির সভাপতি সোলায়মান শেঠ, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর : সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সোলায়মান আলম শেঠকে পুনরায় সভাপতি এবং আবু জাফর মাহমুদ কামালকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। বিদায়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব হোসেনকে নতুন কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়েছে। কমিটির অন্য পদগুলো পরে পূরণ করে কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য নতুন কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।