ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের জন্য আনা ফুল ফেলে দিলেন ঢাবির নেতারা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:১০ পিএম
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। এর মধ্যেই এই টানাপোড়ের প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছিলেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারীরা তাদের হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একপর্যায়ে শয়নের অনুসারীরা সাদ্দামকে দিতে আনা ফুলের তোড়া ছিঁড়ে ফেলেন বলেও দাবি সলিমুল্লাহ মেডিকেলের নেতাদের। ঘটনাটি শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনের।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার নিরব ও বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান নিবিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী রোকেয়া হলের সামনে আসেন। সেখানে তখন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতারা দাঁড়িয়ে ছিলেন সাদ্দামের অপেক্ষায়। ঢাবির ছাত্রলীগ নেতারা তাদের জিজ্ঞেস করেন, ফুলের তোড়া কাকে দিতে এনেছেন। জবাবে সলিমুল্লাহ ছাত্রলীগের নেতারা জানান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামকে দিতে এনেছেন। ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা তখন বলেন, ফুল দিতে হলে পার্টি অফিসে যান বা নেতার বাসায় যান। এই বলে তারা ফুলের তোড়া কেড়ে নিয়ে ফেলে দেন। নিরব ও নিবির শয়নের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি দুর্জয় পাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কমিটি হয়েছে ৩১ জুলাই। আগস্ট মাস থাকায় শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারিনি। তাই শনিবার সাদ্দাম ভাইকে শুভেচ্ছা জানাতে তিনটি ফুলের তোড়া নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। দেখি ঢাবি শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে আমাদের নারী কর্মীদের জিজ্ঞেস করা হয়, আপনারা কারা? কোত্থেকে এসেছেন? তখন আমরা গিয়ে কথা বলি, নিজেদের পরিচয় দিলে তারা আমাদের হাতে থাকা ফুল ফেলে দেয় এবং বলে দ্রুত এখান থেকে চলে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। পরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় সাদ্দাম ভাইকে দেখতে পেয়ে নতুনভাবে ফুল কিনে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। সাদ্দাম ভাই বিষয়টি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান নিবির। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। মেডিকেলে যাচ্ছিলাম রিকশায় করে, তখন তাদের সঙ্গে কথা হয়, পরিচয় জেনেছিলাম। পরে আমি মেডিকেল থেকে ফিরে এসে দেখি ছেঁড়া ফুল পড়ে আছে সড়কে। আমি ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না।
শাহরিয়ার নিরব বলেন, ‘আমি দুদিন ধরে ক্যাম্পাসে নেই। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।’
মাজহারুল কবির শয়ন জানান, ‘ঘটনা জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ঢাবি শাখার দ্বন্দ্ব নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই কথা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মনোনীতদের কম পদায়ন করা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল ছাত্র সমাবেশে ঢাবি নেতাদের বক্তব্যের সুযোগ না দেওয়া, অধিভুক্ত সাত কলেজকে ঢাবি ছাত্রলীগের অধীনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা, হল শাখা ছাত্রলীগে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের পদায়ন করতে না চাওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাবি শাখার এই বিরোধ। এ নিয়ে বহু গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।