এখন ইলেকশন না বলে সিলেকশন বলা যায়: জিএম কাদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৭:২৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচনকে এখন ইলেকশন না বলে সিলেকশন বলা যায়। নির্বাচনের নামে যা চলছে তাকে কোনোভাবেই নির্বাচন বলা যায় না।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিশেষ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, যেহেতু নির্বাচন কমিশন সিলেকশন করবে না, তাই নির্বাচন কমিশনকে আর সিলেকশন কমিশন বলা যাবে না। সিলেকশন করা হবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে, ইলেকশন কমিশনের কাজ হবে সিলেকশনকে বৈধতা দেওয়া। তাই ইলেকশন কমিশনকে বলা যায় ইলেকশন ভেলিডেশন কমিশন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইনগত ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশন করায়ত্ব করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশ শতভাগ বাস্তবায়ন করবে এমন লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশন ইসিতে।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশি ও বিদেশিরা। সরকার ইচ্ছা করলে এই নির্বাচনটা সঠিক করতে পারত। মানুষের প্রত্যাশা অগ্রাহ্য করে নিজেদের মতো করেই নির্বাচনটি করেছে। এ কারণেই ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে চায় না। কারণ তারা জানে যেখানেই ভোট দেবে নির্বাচিত হবে সরকারের পছন্দের প্রার্থী।
তিনি আরও বলেন, ৩০ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের উপনির্বাচনে আমাদের প্রার্থী জানিয়েছেন, ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা আসেননি তাই প্রিসাইডিং অফিসাররা বসে বসে ইভিএমে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আগামীতে নির্বাচনের নামে এমন সিলেকশনে গেলে লাভ কী? বর্তমান সরকার তো তাদের অধীনে নির্বাচনের মডেল দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগ এমন নির্বাচন ব্যবস্থা সাজিয়েছে যাতে তারাই নির্বাচিত হতে পারে।
জিএম কাদের বলেন, ইচ্ছামতো নির্বাচন ব্যবস্থা কায়েম রাখতে সরকার দমন পীড়ন চালু করেছে। দেশে এমন দমন-পীড়ন ও নিমর্মতা কোনো সরকার করে নাই। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা একজন নাগরিকের দায়িত্ব। সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া নাগরিকের কর্তব্য, তাই সমালোচনা করতে দিতে হবে। জবাবদিহিতাহীন একটি সংস্কৃতি সৃষ্টি করতেই সরকার এমন করছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক, বিদ্যুত ও মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট হচ্ছে। জনগণের মাথায় দিনের পর দিন ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে। তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঋণের দায়ে জর্জরিত অর্থনীতি পঙ্গু করে, জোড়াতালি দিয়ে তারা আবারো ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। মাদক বিক্রির সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত আছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে, ইতিহাস বিবৃত করা হচ্ছে।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, নির্বাচনের নামে সিলেকশনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। আমি শুধু আমার উপলব্ধি তুলে ধরছি। দেশের মানুষ অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ। বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের ব্যাপারে বিশ্ববাসী সজাগ আছে। এমন বাস্তবতায় আমরা ঘরে বসে থাকলে দেশ বিপর্যস্ত হবে। জনগণের কাছে এটি মুক্তির লড়াই। জনগণ এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। যারা জনগণের মুক্তির জন্য লড়াই করবে, জনগণ তাদের পক্ষেই থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য যে আন্দোলন তাতে সমর্থন দিতে হলে মাঠেই দিতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা যে বিপর্যস্ত, এ নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। নির্বাচন ব্যবস্থা সঠিক করতে আমাদের কাজ করা উচিত।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, জনগণের পক্ষে থাকলেই তাদের সমর্থন আদায় সম্ভব হবে। অনির্বাচিত বা অসাংবিধানিক সরকার কোনো বিষয় না, আমরা মানুষের ভোটাধিকার চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও সংবিধানের চেতনা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হলেই শাসক গোষ্ঠী জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য হবে।
জিএম কাদের আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকার বা সংবিধানের বাইরে যারা ভোট চাইবে তাদের প্রতিহত করা হবে। কিন্তু সরকার ছাড়া সব দলই নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। কারণ এই নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে না। অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন এখন চলছে।
জাতীয় পাটির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের জরুরি সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলহাজ শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে এবং জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু জিএম কাদের এমপি ও পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না, ভোটাধিকার চায়। সরকার সমর্থকদের লুটপাট আর দুঃশাসনে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। ঘুস না দিলে চাকরি মেলে না। এমন দেশ আমরা চাই না। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির শাসনামল ফিরে পেতে চায়। তারা সুশাসনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের এমপি, সেলিম উদ্দিন, আমানত হোসেন আমানত, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, মাশরেকুল আজম রবি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব সামসুল হক, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন সরকার, হেলাল উদ্দিন, দফতর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম দফতর সম্পাদক সমরেশ মণ্ডল মানিক।
ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানার নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আলাউদ্দিন আহমেদ, প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, জাহিদ হাসান, মোহাম্মদ আলী, আব্দুস সাত্তার, নজরুল ইসলাম সরদার, আলমগীর হোসেন, আবুল বাশার, ইব্রাহিম, রফিকুল আলম সেলিম, এসএম হাসেম, আমিনুল হক, মোকতার হোসেন মাসুম, বজলুর রহমান মৃধা, মেজর (অব) আনিসুর রহমান প্রমুখ।