Logo
Logo
×

রাজনীতি

পেটানোর দৃশ্য দেখে কাঁদলেন মির্জা ফখরুল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:৪৪ পিএম

পেটানোর দৃশ্য দেখে কাঁদলেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়কে পেটানো হচ্ছে। ছবি: যুগান্তর

রাজধানীর ধোলাইখাল মোড়ে শনিবার অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ওই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা গেছে, গয়েশ্বরকে পেছন থেকে দুজন ধরে আছেন। আর পুলিশ তাকে পেটাচ্ছে। এতে মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে গয়েশ্বরের। এই দৃশ্য দেখে কেঁদেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার আহত গয়েশ্বরকে দেখতে তার নয়াপল্টন কার্যালয়ে গিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব।

শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশান কার্যালয় থেকে অবস্থান কর্মসূচির বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন। তখন তিনি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আহত হওয়ার খবর পান। সেখানে উপস্থিত এক নেতা জানান, তাকে পেটানোর ভিডিও দেখে বিএনপি মহাসচিব চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। পরে বিকালে যখন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে তার নয়াপল্টনের অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়, তখন তাকে ফোন করেন মহাসচিব। ফোনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করে আবারও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মহাসচিব। কীভাবে এটা সম্ভব?-ফোনে এ কথা বলার সময় মহাসচিবের চোখ থেকে পানি পড়তে দেখা যায়। রোববার দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে দেখতে যান তিনি।

একমাত্র মৃত্যু আন্দোলন থেকে আমাকে থামাতে পারবে-গয়েশ্বর : রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘একমাত্র মৃত্যু চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে আমাকে থামাতে পারবে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলমান গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত তিনি যেন আমাকে চিতায় না তোলেন। ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা, চিতায় ওঠার আগে যেন এই সরকারের পতন দেখে যেতে পারি।’

শনিবার রাজধানীর ধোলাইখালে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সড়কে ফেলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে পুলিশ। পরে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে সংস্থাটির পক্ষ থেকে যে খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল, সেই খাবার গ্রহণ করেননি বলে জানান গয়েশ্বর। তিনি জানান, ‘ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের জন্য বাসা থেকে পাঠানো খাবার তিনি খেয়েছেন।’ গয়েশ্বর জানান, ‘ডিবি কার্যালয়ে তার জন্য যে খাবারের আয়োজন করা হয়, তা তার স্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী ছিল না। এ ছাড়া এই খাবার নিয়ে তার সন্দেহও ছিল। সে কারণে তিনি ওই খাবার গ্রহণ করেননি।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘ডিবি প্রধানের (অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ) অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সৌজন্যতা রক্ষায় হারুনের জন্য বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার থেকে ভাতসহ হালকা সবজি ও রুই মাছের একটি টুকরা গ্রহণ করি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, ‘ডিবি প্রধান আমাকে অনুরোধ করেছেন, রুই মাছটি তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আর যেহেতু ডিবি প্রধান নিজেই খাবারটি খাচ্ছেন, তখন আমার মনে হলো, এটা যদি গ্রহণ করি, তাহলে সমস্যা হবে না।’ তখনকার পরিস্থিতিতে খাবার না খেয়ে উপায় ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ডিবি অফিস বিষ দিলে বিষও খেতে হয়।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের ছোড়া ইটের আঘাতে মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল। সেদিকে খেয়াল না দিয়ে নেতাকর্মীদের রক্ষায় বুক পেতে দিয়েছিলাম। এই অবস্থায় আমাকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে সাপ পেটানোর মতো পেটানো হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। আহত অবস্থায় আমাকে পুলিশ একটি দোকানে নিয়ে রক্ত মুছে দেয়। যাতে গণমাধ্যমকর্মীরা রক্ত দেখতে না পায়। এ অবস্থায় ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে আমাকে আপ্যায়ন করে। সেটার ছবিসহ ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় পুলিশ।’ এ ঘটনাকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন বিএনপির এই নেতা।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ কাজটি করেছে, এটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচায়ক। এক ধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক। এতে কি সরকার প্রমাণ করতে চায় যে, আমরা হা-ভাতে? ভিক্ষা করে খাই? গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘খাইয়ে খোঁটা দেওয়া।’ ডিবি অফিসে আমার সঙ্গে যা করা হলো তা ওই রকমই। আমার বাড়িতে তো বিভিন্ন সময় অনেক লোক খায়। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু এই খাবারের ছবি উঠিয়ে কি আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেব? এটা কি আমার জন্য ভালো হবে।’

গয়েশ্বর দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘সরকারের কোনো প্রলোভন গয়েশ্বরকে কিনতে পারবে না। সরকারের কাছে এত টাকা নেই যে, গয়েশ্বরকে কিনতে পারে। সরকার গ্রেফতার করতে পারে, এমনকি প্রাণও নিতে পারে-এই শক্তি সরকারের রয়েছে। কিন্তু গয়েশ্বরকে কিনতে পারবে না।’

চলমান জনসম্পৃক্ত আন্দোলন সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন গয়েশ্বর রায়। তিনি দাবি করেন, শনিবার বিকাল ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে নয়াপল্টনে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। তখনো তার কাছ থেকে কিছু লেখা একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয় ডিবি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম