রাজধানীতে বিএনপির সমমনা ৩৫ দলের পদযাত্রা
সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৩, ১০:৩১ পিএম
সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছে যুগপৎ আন্দোলনের থাকা বিএনপির সমমনা ৩৫ রাজনৈতিক দল।
মঙ্গলবার নয়টি স্পট থেকে এতে যুক্ত হয়েছিল গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট।
এ সময় নেতারা বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে এই সরকারকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনের নামে অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কোন নীলনকশাও এবার আর কাজে আসবে না। লুটেরা মাফিয়া কোন গোষ্ঠীও আর এই ভোট ডাকাত দুর্নীতিবাজ সরকারকে রক্ষা করতে পারবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ অচিরেই এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে।’
বুধবারও বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে দুপুরে মীরপুর- ১২ নম্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্ত্বরে গিয়ে তা শেষ হয়।
পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর আক্রমণ যদি শান্তিপূর্ণ হয়, এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে আমরা যাব না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকলেও এ সরকারকে ভোট চুরি করতে হয়। এদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গণআন্দোলনের চাপে এই সরকার এখন বেসামাল। এরা এখন বিদায়ের দিন গুনছে’।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘হিরো আলমকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস করে না ক্ষমতাসীনরা। সেখানেও তাদের ব্যালটে সিল মারতে হয়।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘এই সরকারের দখলদারি শাসনে গোটা দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে। দেশের মানুষ এখন এদেরকে বিদায় দিতে প্রস্তুত।’
আরও বক্তব্য দেন- রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল - জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।
১২ দলীয় জোট: বিকালে রাজধানীর কাকরাইল মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু করে ১২ দলীয় জোট। এ পদযাত্রা মতিঝিল শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কোনো নির্বাচনেই জনগণ ভোট দিতে পারেনি। সোমবার ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে সরকারের আসল চেহারা আবারও ফুটে উঠেছে। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, তমিজ উদ্দিন টিটু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের রফিকুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আব্দুল মালিক চৌধুরী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, ন্যাপ ভাসানির অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
এলডিপি: সকাল ১১ টায় রাজধানীর পূর্বপান্থপথস্থ এফডিসি সংলগ্ন কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। পদযাত্রাটি মগবাজার, মালিবাগ, কাকরাইল, নয়াপল্টন হয়ে মতিঝিলে গিয়ে শেষ হয়।
পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে দলের প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার বিগত ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে নিশিরাতের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে আছে। যার কারণে জনগণের নিকট তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাদের অব্যবস্থা ও দুর্নীতির কারণে মানুষ চরম বেকায়দায় আছে। হিরো আলমের ওপর হামলা নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হিরো আলমের উপর যেভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে তাতে মনে হয় তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। তাদের কাছে ন্যায় বিচার, সমান আচরণ ও সুষ্ঠু ভোট আশা করা যায় না।
পদযাত্রায় আরও অংশ নেন-এলডিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর নেয়ামূল বশির, ডক্টর আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ সাকলায়েন, কেন্দ্রীয় নেতা মাহে আলম চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন, বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট নিলু, মেহেদী হাসান মাহবুব, আলী আজগর বাবু, ওমর ফারুক সুমন, ঢাকা মহানগরের মো. সোলায়মান, সাহাদাত হোসেন মানিক, অবাক হোসেন রনি, গণতান্ত্রিক ওলামা দলের মুফতি মাওলানা সাদিকুর রহমান, গণতান্ত্রিক যুবদলের আমান সোবহান প্রমুখ।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: দুপুরে বিজয়নগর থেকে পদযাত্রা শুরু করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়-ফকিরাপুল-মতিঝিলের শাপলা চত্বর-ইত্তেফাক মোড়-দয়াগঞ্জ হয়ে রায় সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে এটি শেষ হয়।
পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, এই সরকারের অধীনে কখনো অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যার সর্বশেষ প্রমাণ ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচন।
এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মন্ডল, জাগপার (একাংশ) খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, বিকল্পধারার (একাংশ) শাহ আহমেদ বাদল প্রমুখ।
গণঅধিকার পরিষদ: বিকালে ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে পদযাত্রা শুরু করে। পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তান জিরোপয়েন্টে গিয়ে তা শেষ হয়। এতে অংশ নেন-পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হাসান, যুগ্ম আহবায়ক কর্ণেল (অব.) মিয়া মোহাম্মদ মসিউজ্জামান, যুগ্ম আহবায়ক ড. আব্দুল মালেক ফারাজি, সাদ্দাম হোসেন, মেজর (অব.) আমিন আহমেদ আফসারী, সহকারী আহবায়ক সাকিব হোসাইন, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান, সহকারী সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, শেখ খায়রুল কবীর প্রমুখ।
নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ পৃথকভাবে পদযাত্রা বের করে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে কাকরাইল, মালিবাগ হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর দুটি নামসর্বস্ব দলকে নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত করার প্রতিবাদে আগামী ২৫ জুলাই নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে আরও অংশ নেন- পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিলউজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতেমা তাসনিম, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন, যুগ্ম সদস্যসচিব, মশিউর রহমান, গণনেতা আনিসুল ইসলাম মুন্না, রফিকুল ইসলাম, কামরুন নাহার, শাকিল আহমেদ, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
এছাড়াও বিকালে মতিঝিলের গণফোরাম চত্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা করে গণফোরাম (একাংশ) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। এতে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারীসহ নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে পদযাত্রা বের করে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
বেলা ১১টায় পল্টন মোড়, বায়তুল মোকারম, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে ইত্তেফাক মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে চার দলীয় বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জোটও।