ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে ফয়সালা হবে রাজপথে: মির্জা ফখরুল
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার কেবল ভোট নয়, মানুষের পকেটও চুরি করছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে ফয়সালা হবে রাজপথে। এদের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার আদায় করে তারপর ঘরে ফিরব।
শনিবার বিকালে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস্ পার্ক) যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এরা জনগণের টাকা চুরি করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে আমাদের ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ৭শ মানুষকে গুম করেছে। আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনকে ভয় পায়। কারণ তারা জানে জনগণ ভোট দিতে পারলে ১০টি আসনেও জিততে পারবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই সমাবেশ দেখে আমি অভিভূত। এটা তারুণ্যের সমাবেশ। নতুন ভোটারদের সমাবেশ। যারা গত ১৪ বছর ধরে ভোট দিতে পারেননি তাদের সমাবেশ। ভোট যে গণতন্ত্রের সূতিকাগার, সেটাই এখনো অজানা এদের কাছে। অসংখ্য গুম, খুন আর মামলা নির্যাতন-সবকিছুই করছে এই ফ্যাসবাদী সরকার কেবল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।
তিনি বলেন, এই যে আপনাদের বরিশালে সিটি নির্বাচন হলো, ইভিএম জালিয়াতির নির্বাচন, ভোট দিতে পেরেছে কেউ? এখানে চরমোনাইর পিরকে মেরে রক্তাক্ত করা হলো। আর একজন সিইসি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, উনি কি মারা গেছেন? এরা আবার বলে, তাদের অধীনে নির্বাচন হবে। সংবিধানের মালিক দেশের জনগণ। সেই জনগণ যখন ভোট দিতে পারে না, তখন সরকার বৈধ থাকে কী করে?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভোট দিয়ে সংসদে প্রতিনিধি পাঠাই। তারা সংসদে জনগণের কথা বলবে তাই। আর এরা (আওয়ামী লীগ) ভোট করে সংসদে গিয়ে চুরি-চামারি করার জন্য। আমরা আগে জানতাম যে এই চোরেরা সুইস ব্যাংকে টাকা জমায়। কিন্তু হঠাৎ করে দেখা গেল, সুইস ব্যাংক থেকে সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন নাকি সেই টাকা রাখা হচ্ছে অন্যান্য দেশে।
তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিই। সংসদে তারা বলল, দেশে নাকি বিদ্যুৎ অতিরিক্ত। ফেরি করে বিক্রি করার মতো অবস্থা। কুইকরেন্টাল, পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ি আরও কত কত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোথায় বিদ্যুৎ? আজ বরিশালেই তো দেখলাম যে ৪ বার বিদ্যুৎ গেল।
বর্তমান সরকার বিশ্ব পরিমণ্ডলেও আস্থা হারিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশিরাও এখন চায় বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। র্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুশির বিষয় নয়। কিন্তু কেন দিয়েছে? কেননা বর্তমান সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে মানুষের ওপর যত নির্যাতন চালিয়েছে তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে এই র্যাবকে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা তরুণরা এই দেশের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আপনাদেরকে গর্জে উঠতে হবে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারকে আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। এই অবৈধ সরকার আমরা মানি না। আমরা হাসিনার অধীনে নির্বাচন চাই না। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সবাইকে গর্জে উঠতে হবে। এই সরকারের পতন নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে আবার ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে নিতে হবে। চূড়ান্তভাবে বলছি, আমরা রাজপথেই জনগণের দেনা-পাওনার ফয়সালা করব।
তারুণ্যের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু।
অনুষ্ঠান মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, বরিশাল (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম নয়ন, হাসান মামুন, কামরুল ইসলাম সজল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির, বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) যুবদলের সভাপতি এইচএম তসলিম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি মাসুদ হাসান মামুন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তানভির হাসান এবং বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জুসহ স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা।
গতকালের এই সমাবেশে যোগ দেয় যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। বেলা ১২টার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে ঢুকতে থাকে সমাবেশস্থলে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বাস-লঞ্চ বোঝাই হয়ে আর চরাঞ্চল ও বিচ্ছিন্ন উপজেলা-জনপদ থেকে মানুষ আসে ট্রলারে চেপে। সকাল থেকেই এসব ট্রলার ভিড়তে থাকে কীর্তনখোলা নদী তীরে। সব মানুষের গন্তব্য ছিল বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস্ পার্ক)। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মানে সমাবেশ মঞ্চে দুটি চেয়ার খালি রাখা হয়। সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের। সমাবেশস্থলের অদূরে জিলা স্কুল মোড়ে মোতায়েন রাখা হয় জলকামানসহ পুলিশের রায়ট ভ্যান। বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস্ পার্ক) প্রবেশের প্রতিটি পথেই বসানো হয়েছিল চেকপোস্ট।