ভিসানীতিকে সমর্থন করি: জিএম কাদের
যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ০৬:৩৯ পিএম
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মুহম্মদ কাদের বলেছেন, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে সমর্থন করি। ভিসানীতিতে যা বলা হয়েছে তা জনগণের পক্ষে বলা হয়েছে, বিপক্ষে নয়। তাই বলা যায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে মার্কিন ভিসানীতি। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেখানে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকবে। এখানে অখুশি হওয়ার মতো কিছু দেখি না, সরকারও এখানে অখুশি হয়নি। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন কেউ চায় না এ কথা প্রকাশ্যে কেউ বলছেন না। মনে মনে কেউ বলতে পারেন।
সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রীলংকার সঙ্গে আমাদের একটি পার্থক্য আছে। শ্রীলংকার মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, সে দেশের সরকার যেভাবে ট্যাকেল (নিয়ন্ত্রণ) দিয়েছে, তাতে প্রমাণ হয়েছে- পুলিশ যে তাদের বন্ধু, সেটাই তারা দেখিয়েছে। সেখানে বড় কোনো বিরোধী দল ছিল না। মানুষই স্বত:স্ফূর্তভাবে নেমেছে। আমাদের দেশের মানুষ এখনো নামেনি, এটাই পার্থক্য।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করছে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব আমরা কোথাও থেকে পাইনি। তবে বর্তমান শাসন পদ্ধতি এ ধরনের করা হয়েছে, যেখানে শতকরা ১০০ ভাগ শক্তি প্রধানমন্ত্রীর হাতে। সেখানে নির্বাচনকালীন মন্ত্রী বা সংসদে কে কতটা আসন পেল সেটি ম্যাটার নয়। প্রধানমন্ত্রী যদি থাকেন তাহলে নির্বাচনকালীন সরকার, সব সরকার একই ধরনের হবে।
শহরের রাইফেল ক্লাবে আয়োজিত সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, আমি মনে করি যারা শ্রীলংকাকে ফলো করছেন, তাদের রিজার্ভ সংকট ছিল। তারা তেল আনতে পারেনি, কয়লা আনতে পারেনি। যার কারণে তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একসঙ্গে তারা বিভিন্ন পণ্য ইমপোর্ট করতে পারেনি। সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে বিরাট মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। সাধারণ মানুষ চাকরি হারাচ্ছিল। সাধারণ মানুষ আয় ইনকাম হারাচ্ছিল, সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছিল। বাংলাদেশ এখন সেই পরিস্থিতি চলছে। শ্রীলংকায় অনেক পণ্য তারা বাংলাদেশের চেয়ে কম দামে পাচ্ছে। আমাদের মূল্যস্ফীতি হয়েছে, আমাদের মানুষের আয় ইনকাম কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে সঙ্গে সঙ্গে, আমাদের রিজার্ভ কমেছে ও আমাদের ইমপোর্ট কমেছে। সব কিছু মিলে আমরা শ্রীলংকার কাছাকাছি চলে গেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময় আসতে এখনো অনেক গ্যাপ আছে। এ সময় অনেক কিছু, ঘটনা ও প্রবাহ ঘটতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের প্রত্যাশা ও নীতিনির্ধারণী মহল থেকে সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
সম্মেলনের প্রধান বক্তা জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থা নাই। সাধারণ মানুষ তৃতীয় পক্ষ যারা দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করবে এমন কাউকে সমর্থন করতে প্রস্তুত। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি এগিয়ে আছে।
দেশের উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, চীন থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে জনস্বার্থে উন্নয়ন হয়নি। ঋণ নিয়ে জেলা ও উপজেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করা উচিত ছিল। যে হাসপাতাল থেকে তৃণমূলের সাধারণ মানুষ সার্বক্ষণিক সেবা পাবে। কাউকে আর ঢাকায় যেতে হবে না।
বর্তমান শিক্ষার বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষানীতি পরিবর্তন করতে হবে। যে শিক্ষায় দেশের মানুষের বেকারত্ব দূর হয় না, এমন শিক্ষার আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা শিক্ষানীতি পরিবর্তন করব। যাতে একটি শিক্ষিত যুবক পড়াশোনা শেষে কাজ করতে পারে।
জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস ছালাম চাকলাদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কাশেম, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ঢাকা বিভাগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। এ সময় জাতীয় পার্টির জেলা ও উপজেলা নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।