জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মিত্র বাড়াতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটের পাশাপাশি এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতার ছোট-বড় দলগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। আবার যেসব দলের শীর্ষ নেতাদের ভাবমূর্তি ভালো, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদেরও পাশে চায় ক্ষমতাসীনরা।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে স্বাধীনতার সপক্ষের দল ও বর্ষীয়ান নেতাদের পাশে চায় ক্ষমতাসীনরা। এ বিষয়ে একাধিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজও করছে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। একদিকে ১৪ দলীয় জোটের পরিধি বাড়িয়ে জোটকে আরও সক্রিয় করা হতে পারে।
অন্যদিকে জোটের বাইরেও নিজেদের বলয়ে একটি আলাদা প্লাটফরমও হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিচিতি এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি সম্মান জানান এমন বেশ কয়েকজন নেতা ও দলের নাম আলোচনায় রয়েছে। আলোচনা রয়েছে ইসলামি দু-একটি দল নিয়েও।
এছাড়া আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় আছে স্বাধীনতার সপক্ষের দলের সমন্বয়ে বিরোধীদলীয় শক্তি হিসাবে দাঁড় করানো। এ বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে দর কষাকষি চলছে বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও সুলতান মনসুরসহ বেশ কয়েকজনের নাম নানাভাবে আলোচনায় এসেছে। এর আগে কাদের সিদ্দিকী গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর তিনি আওয়ামী লীগে ফিরছেন বা ১৪ দলীয় জোটে যোগ দিচ্ছেন-এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
অন্যদিকে সুলতান মনসুর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। বিএনপির অন্য সংসদ-সদস্যরা পদত্যাগ করলেও ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি এখনো সংসদে রয়েছেন।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মূলত দুটি জোট ছিল। একটি মহাজোট, যা মূলত নির্বাচনভিত্তিক জোট। আরেকটি ১৪ দলীয় জোট, যা গঠিত হয়েছিল আদর্শিক ঐক্যের ভিত্তিতে। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পরে গঠিত সরকারে ১৪ দলের শরিকরা একাধিক মন্ত্রীসহ সরকারে ছিল। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর শরিকবিহীন সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকেই শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। শরিক নেতাদের নানা সময়ে সরকারের প্রকাশ্যে সমালোচনাও করতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ ‘একলা পথ’ চলছে বলেও অভিযোগ শরিকদের কারও কারও।
এরই মধ্যে গত বছরের মার্চে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে জোট নেত্রী শেখ হাসিনা জানান, জোট থাকবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবেন। একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ে জোটকে আরও শক্তিশালী করতে সমন্বয় কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেন তিনি। এরপর থেকে সাংগঠনিকভাবে ১৪ দলের তৎপরতা বাড়াতে ঘন ঘন বৈঠক করতে দেখা গেছে জোট নেতাদের। ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে শরিকদের নিয়ে বৈঠক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ ও জোট শরিক দলের নেতারা মনে করেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। বিএনপিসহ তাদের শরিকরা নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই মুহূর্তে ১৪ দলীয় জোটকেও আরও সক্রিয় করতে হবে। নিজেদের কোনো সমস্যা থাকলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এজন্য সামনে তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকতে হবে।