সুলতানা জেসমিনকে ‘হত্যা’র ঘটনা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই: ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০৮ পিএম
সরকার দেশে পরিকল্পিতভাবে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে ‘নৃশংসভাবে হত্যা’র ঘটনাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। রোববার ডিআরইউতে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার বিনা উসকানিতে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে আক্রমণ করে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত যেসব কর্মসূচি দিচ্ছি তা সবই শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় বলে থাকে তারা সংবিধান মেনে চলবে। সেই সংবিধানে তো পরিষ্কার বলা আছে যে, আমার কথা বলার অধিকার দিতে হবে, প্রতিবাদ করার অধিকার দিতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না? সরকার কি রাষ্ট্র বা সরকার কি গড (স্রষ্টা)? সরকার তো গড নয়। আমি যদি এ দেশের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, অবশ্যই কথা বলব। তার সঙ্গে সরকার একমত নাও হতে পারে। গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছে তারাই কথা বলবে, সেমতে সবাইকে চলতে হবে। ক্রীতদাস হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তো সেটা হতে দেবে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাম্মী আখতার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রুমা আখতার, উত্তরের আহ্বায়ক নায়েবা ইউসুফ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নওগাঁর সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সুলতানা জেসমিনকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। একজন নাগরিক এবং সে সরকারি অফিসে কাজ করে তাকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া আইন ও সংবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এই হত্যাকে খাটো করে দেখার কারণ নেই। এই হত্যা প্রমাণ করে সরকার এভাবে হত্যা, নির্যাতন ও মানুষের ওপর মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
ফখরুল বলেন, র্যাব সদস্যরা বলে থাকেন তারা তো হুকুমের চাকর। উপরের নির্দেশ ছাড়া তারা কোনো কাজ করতে পারেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দুর্নীতির কথা বললেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যখন বলছে যে, এই আইনটির অনেক ধারা সংশোধন করা দরকার এবং দুটি ধারা বাতিল করা দরকার। তখন পরিষ্কার করে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, বাতিল করা হবে না। কী ঔদ্ধত্য তাদের? এই অবস্থা থেকে উত্তরণে নারী সমাজকে আরও সংগঠিত হয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গণফোরামের ইফতারে : বিকালে গণফোরামের একাংশের ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আওয়ামী লীগ দীর্ঘকাল অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় থেকে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। সেই জায়গায় থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে পরিণত করতে মানুষ পরিবর্তন চায়। সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে এ লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে থানা-উপজেলায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
কাকরাইলে রাজমনি ঈসা খাঁ হোটেলে রাজনীতিবিদদের সম্মানে গণফোরাম-পিপলস পার্টির যৌথ উদ্যোগে এ ইফতার মাহফিল হয়। এতে গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, পিপলস পার্টির বাবুল সর্দার চাখারী, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।