বিএনপির স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ পূরণ হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৩ পিএম
অল আউট আন্দোলন সামনে রেখে দলকে ঢেলে সাজাচ্ছে বিএনপি। কদিন আগে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনে দীর্ঘ সময় নিয়ে তাদের বক্তব্য শুনেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। তারা বৃহত্তর স্বার্থে বহিষ্কার হওয়া সব নেতাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মহানগর-জেলায় সম্মেলনের পর বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় শূন্য পদগুলোও পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় এবং নিষ্ক্রিয়তা ও বেশ কয়েকজনের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কিছু পদ শূন্য রয়েছে। মৃত্যু ও বয়সের কারণে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকটি পদে নতুন মুখ আসতে যাচ্ছে শিগগিরই।
জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ঈদুল ফিতরের পরই রাজপথে নামার কথা ভাবছেন নেতারা। সে লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের ধরন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মত নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই ডাকা হতে পারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভা।
ওই সভায় আন্দোলনের সময় ও কর্মসূচি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। একইসঙ্গে মাঠের আন্দোলনে গতি আনতে পূরণ করা হতে পারে স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদও।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সভার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। দু-একদিনের মধ্যে সভার তারিখ ও স্থান চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান আন্দোলন সামনে রেখে এ সভাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতি দশ দিনব্যাপী সারা দেশের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা আন্দোলন ও নির্বাচনসহ বেশ কিছু ইস্যুতে মতামত দিয়েছেন। এখন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা করার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। এ দুই সভার মতামতকে সমন্বয় করে আন্দোলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এছাড়া আন্দোলনের গতি আনতে স্থায়ী কমিটিসহ সম্পাদকীয় শূন্য পদগুলো পূরণের সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। সেখানে খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব নির্বাচিত হন। এরপর বিএনপির সম্মেলন হয়নি। ওই কাউন্সিলে ১৯ জনের স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আর এ গণি, তরিকুল ইসলাম, শামসুল ইসলাম, এমকে আনোয়ারের মৃত্যু হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। বয়সের ভারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও মাহবুবুর রহমান। সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে অবস্থান করছেন মামলার কারণে। এমতাবস্থায় স্থায়ী কমিটিতে ঠেলে সাজানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বহু পদও শূন্য রয়েছে।
২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এরপর দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় রায়ের কয়েকদিন আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রথম নির্বাহী কমিটির সভা হয়। সে সভায় জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, সম্পাদকমন্ডলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক জেলার সভাপতি (পদাধিকারবলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য) আমন্ত্রিত ছিলেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, মুখের কথায় এ সরকার দাবি মেনে নেবে না এটা পরিষ্কার। তাই মাঠের আন্দোলন ছাড়া আমরা বিকল্প কিছু ভাবছি না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনকে আরও কীভাবে বেগবান করা যায় সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।
জানা গেছে, বিগত আন্দোলনে ঢাকা মহানগর নিয়ে অনেকের নানা অভিযোগ আছে। তারা রাজপথে কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। সারা দেশের মতো ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন হলে সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হতো।
সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাতে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পুনর্গঠন করে। কিন্তু তারপরও থানা এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক এলাকায় থানা বিএনপি নেতাদের কথা অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মানছে না। যার যার মতো করে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সমন্বয়হীনতা দূর করে সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রোজার মাসে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে অন্যান্য মহানগরীতেও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হবে। ইতোমধ্যে যুবদলের পক্ষ থেকে ১০ মহানগরীতে ইফতার পার্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।