Logo
Logo
×

রাজনীতি

কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: জিএম কাদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম

কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে স্বাভাবিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ করে কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। 

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনকে সরকার দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে। এমন অবস্থায় বা এমন কাঠামোতে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
 
সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে গণমাধ্যকর্মীদের তিনি এ কথা বলেন। 

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা তার প্রতিকৃতিতে ফুল দেন। 

এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা এমনই রাখবে নাকি কিছু পরির্বতন করবে- তা আমরা এখনই জানি না। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে নির্বাচনের আগে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট শুরু হয়ে গেছে। দুটি দল নিজের অবস্থানে অটল আছে। এমন অবস্থা থেকে তাদের বেরিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। দল দুটি মনে করছে তারা ছাড় দিলে তারা ধংস হয়ে যাবে।

তারা ভাবছে ছাড় দিলে নির্বাচনে তারা টিকবে না এবং তাদের রাজনীতি টিকবে না। তাই সামনের দিকে বাঁচার জন্য দুটি দল জীবনপণ লড়াই করবে। দেশে সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে দেশ ধাবিত হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশ চালানো হচ্ছে গোঁজামিল দিয়ে। অগ্রগতির কথা বলে দেশকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অর্থের অভাবে দেশের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। 

প্রবাসীদের আয় এবং রফতানি থেকে যে আয় হয় তার চেয়ে দেশের ব্যয় অনেক বেশি। দেশের রিজার্ভ আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। এ কারণেই আমরা আমদানি করতে পারছি না, আমদানি অর্ধেক হয়ে গেছে। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিত্যপণের দাম বেড়ে গেছে। ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার আমদানি কমিয়ে দিয়ে, ধার-কর্য করছে এবং বাকিতে মালামাল কিনছে। এটাকে আমারা গোঁজামিল দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে বলে মনে করছি।

জিএম কাদের বলেন, উন্নয়নের নামে আমরা দেখছি বিশাল বিশাল অবকাঠামো হচ্ছে, মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। এর সুফল আমরা এখনো দেখিনি। গেলো বাজেটের সময় ঋণের ভার জনপ্রতি ছিলো প্রায় ১ লাখ টাকা। এখন ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। 

‘সরকারের হাতে টাকা নেই। এমন বাস্তবতায় সরকার নতুন করে ১ লাখ কোটি টাকা ছাপাচ্ছে। এজন্য দ্রব্যমূল্য উর্ধগতি ও মুদ্রাস্ফিতি হচ্ছে। ডলার সংকট চলছে। সরকার রিজার্ভের যে হিসাব দিচ্ছে তা আইএমএফ এর হিসাব অনুযায়ী অনেক কম। ’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সরকার বলেছে রির্জাভ আছে ৩১ বিলিয়ন ডলার আছে। আইএমএফ বলছে- এখানে অন্তত ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার নেই। এই টাকা বিভিন্ন জায়গায় ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং লগ্নি করা হয়েছে। সেই হিসেবে রির্জাভের পরিমাণ ২২ দশমিন ৫ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা। কিন্তু এ বছর ঋণ ও আসল পরিশোধ করতে হবে ২৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। সরকারি হিসেবে বকেয়া ১৮ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি এবং ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সরকারি খাতে, যা এখনই শোধ করতে হবে। অতীতের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে সরকারের হাতে কোনো টাকা থাকার কথা নয়।
 
তিনি বলেন, আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা ঋণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা আমাদের ঋণ না দিলে দেশ যে কোন মুহূর্তে দেউলিয়াত্বের মধ্যে চলে যেতে পারে। উন্নয়নের নামে বড় বড় মেগা প্রকল্প হয়েছে, গুটিকয়েক মানুষ লাখো কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এই টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য অশুভ হয়ে দাঁড়াবে। সরকার জোড়াতালি দিয়ে এবং ধার করে দেশ চালানোর চেষ্টা করছেন। উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বলে প্রতিদিন দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরনের জন্য আমাদের সুপারিশমালা আছে। আমরা তা সময় মত জানাব। আমাদের সুপারিশমালা যদি গ্রহণ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তবেই আমরা সুপারিশমালা দেব। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। অনেক শক্তিশালী এবং গ্রহণযোগ্য মানুষ প্রতিদিন জাতীয় পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। 

তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা হচ্ছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বর্তমানে দেশে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে তার বীজ বপণ করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংস্কারক।

এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, এসএম আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আকতার এমপি, মোস্তফা আল মাহমুদ, আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের এমপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে- জাতীয় যুব সংহতি, জাতীয় মহিলা পার্টি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, জাতীয় তরুণ পার্টি, জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টি, জাতীয় মটর শ্রমিক পার্টি, জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় হকার্স পার্টি, পল্লীবন্ধু পরিষদ, ফ্রান্স শাখা জাতীয় পার্টির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

শ্যামপুর-কদমতলী থানা জাতীয় পাটির উদ্যোগে দোয়া মাহফিল 
রাজধানীর আমির টাওয়ারে দোয়া মাহফিল ও কেক কেটে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উদযাপন করেছে শ্যামপুর-কদমতলী থানা জাতীয় পার্টি। 

জাতীয় পার্টি কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, ভাইস চেয়্যারম্যান সালমা হোসেন, আমির উদ্দিন ডালু, যুগ্ম প্রচার সম্পাদক শেখ মাসুক রহমান, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে, শ্যামপুর থানার সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম মোল্লা প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

মোড়ক উন্মোচন ও জাতীয় পার্টিতে যোগদান 
সোমবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কেক কেটে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন পালন করে। 

এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর মহানগর আহবায়ক আব্দুস সাত্তার মিয়া রচিত “রাজনীতির ষাট বছর” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এতে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক মনি জিএম কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম