Logo
Logo
×

অন্যান্য

ইসলাম অভাবী চোরের নয় স্বভাবী চোরের হাত কাটতে বলেছে: চরমোনাই পির

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম

ইসলাম অভাবী চোরের নয় স্বভাবী চোরের হাত কাটতে বলেছে: চরমোনাই পির

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, কেউ না বুঝে ইসলামী আইনের মধ্যে কঠোরতা রয়েছে বলে প্রচার করে। এজন্য প্রকৃত অর্থে ইসলামকে আগে বুঝতে হবে। ইসলামে চুরি করলে হাত কেটে দেওয়া হয় এটা সঠিক। কিন্তু ইসলাম সব চোরের হাত কাটার নির্দেশ দিয়েছে কি না- এটা জানা থাকা দরকার।

তিনি বলেন, চোর দুই প্রকার- একটি অভাবী, আর একটি স্বভাবী। মন্ত্রী-এমপি যারা রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করে, এরা অভাবী চোর নয়, স্বভাবী চোর। অভাবী চোরের হাত কাটা নির্দেশ ইসলামে নেই। ইসলাম স্বভাবী চোরদের হাত কেটে দিতে বলেছে। বাংলাদেশের একজন স্বভাবী চোরের হাত কেটে দেওয়া হলে এদেশে চুরি থাকবে না। তাই বাংলাদেশে চুরি বন্ধে হাত কাটার আইন থাকতে হবে।

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের উদ্যোগে রোববার বিকালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সৃষ্টি যার আইনও হবে তার উল্লেখ করে চরমোনাই পির বলেন, সর্বক্ষেত্রে যদি সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহর) অগ্রাধিকার থাকে তবে তার নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী বিচার বিভাগসহ সবকিছু চলবে এটাই বাস্তবতা। তিনি বলেন, ব্রিটিশসহ অন্যান্য মাধ্যমে বিচার পরিচালনা করার কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি, অসুন্দর, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য করার বহু প্রবণতা আছে। মুসলমান সর্বক্ষেত্রে মানব রচিত আইনের পরিবর্তে কুরআনের আইন বাস্তবায়ন করবে। তারপরও অনেক মুসলমান আইন ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে ইসলামকে গুরুত্ব দিতে চায় না। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, মুসলমান দাবি করলে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মানতেই হবে। ইসলামী নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, অনেকে ইসলামের আইনের কথা শুনলে ভয় পায়। অথচ সম্পত্তি বণ্টনে ইসলামের বিধান অনুসরণ করা হয়। এখানে কোনো বৈষম্য আছে বলে কখনো কেউ বলতে পারেনি।

চরমোনাই পির বলেন, দেশে শান্তি চাইলে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করা জরুরি। মুসলমান হয়ে আল্লাহর ওপর ইমান এনেছি তাই সবাইকে মানতে হবে ‘সৃষ্টি যার আইন হবে তার’। আইনজীবীদেরকে ন্যায়ের পক্ষে আইনি লড়াই করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির আগামী ২০২৫-২০২৬ সেশনের জন্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আতিয়ার রহমানকে সভাপতি, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল বাসেতকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমানকে সহ-সভাপতি, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বায়জিদ হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।

ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান শেখের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ মিয়ার পরিচালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, ময়মনসিংহ জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমেদ, কুমিল্লা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হারুনুর রশীদ, সুপ্রিমকোর্ট বার শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত। 

সম্মেলনে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ফ্যাসিস্ট আল্লাহকে বিশ্বাস করতো না। তারা বলতো মানুষের ভাগ্য ফেরাবে। অথচ তারা মানুষের ভাগ্য ফেরানোর সেই সুযোগ পায়নি। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট যুগে যুগে আসে আবার চলে যায়। ৫ আগস্টের বিপ্লবের রচনা একদিনে হয়নি। দীর্ঘ সংগ্রাম সাধনা এবং ঝড়-ঝাপটা, গুলি, গুম, খুন দীর্ঘ দিন চলে আসার বাষ্প বিস্ফোরণ হয়েছে ৫ আগস্ট। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, মানব রচিত আইন ও ইসলামী আইনের পার্থক্য তুলে ধরতে চাই। মানব রচিত আইনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ নেই। এই মানব রচিত আইন স্বৈরাচার,‌ ফ্যাসিস্ট তৈরি করে, নিরীহ মানুষ হত্যা করে। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল আদালত। এই আদালতকে দলীয় ও ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি দেশকে অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে প্রধান বিচারপতি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে অতীতে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনজীবীরা সঠিক দায়িত্ব পালন করলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। ইসলাম সব যুগের জন্য যে সময়োপযোগী আইন দিতে প্রস্তুত এটা সবাইকে জানাতে হবে। মানুষের মুক্তির জন্য আল্লাহর বিধানকে নিয়ে চিন্তা করুন। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার বলেন, সরকারি আইনজীবী নিয়োগের একটি নীতিমালা থাকা দরকার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম