আলোচনা সভায় অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
প্রতি গ্রাম ইউনিয়নে আবারও যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম
দেশের প্রত্যেক গ্রাম ইউনিয়নে আবারও যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, বুর্জোয়া রাজনীতির ফলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে রাষ্ট্রের শুধু পোশাক পরিবর্তন হয়েছে, গুণগত পরিবর্তন হয়নি। তাই দেশের বামধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে পুনরায় যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হবে।
রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাসদ আহ্বায়ক আমৃত্যু বিপ্লবী কমরেড আ ফ ম মাহবুবুল হকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বামপন্থিদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
এতে আলোচনায় অংশ নেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, হারুনুর রশীদ ভুইয়া, নাসির উদ্দিন আহমেদ নসু, মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ। সভাপ্রধান ছিলেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আইয়ুববিরোধী ৬৯-এর যে অভ্যুত্থান, সে অভ্যুত্থানের চালিকাশক্তি ছিল বামপন্থিরা। এর সূত্রপাত মওলানা ভাসানী করেছিলেন। তিনিই ছিলেন এর পরিচালক। বামপন্থিদেরই এখানে বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু আমরা ৭০-এর নির্বাচনে কী দেখলাম, ক্ষমতা চলে গেল বুর্জোয়াদের হাতে। রাষ্ট্র ভাঙল না, রাষ্ট্র বদলাল না। রাষ্ট্র ৪৬ এ বদলায়নি, রাষ্ট্র ৭১ এ বদলায়নি। রাষ্ট্র যা ছিল সেটাই রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে আমরা উপনিবেশই দেখছি; আরেক ধরনের উপনিবেশ, ধনীদের উপনিবেশ। ঔপনিবেশিক শাসকরা যেমন এদেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করত, আজকে বাংলাদেশের ধনীরা সেই কাজই করেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন যে অভ্যুত্থান ঘটল সেই অভ্যুত্থানে কোনো বিপ্লব ঘটেনি। একটি চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। এই পতন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঘটলে আজকে যারা পলাতক রয়েছে তাদের পালাতে হতো না, তারা বেঁচে যেত। কিন্তু তারা সেটা চায়নি বলেই এই অভ্যুত্থান হয়েছে।
এখন প্রত্যেক গ্রাম ইউনিয়নে যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন যেই ছাত্ররা বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরছে, পথের সন্ধান পাচ্ছে না; তারা পথের সন্ধান পাবে। আর এই নির্বাচনের পরে যে নির্বাচন হবে, তখন দেখা যাবে বামপন্থিরাই এর প্রধান শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই করণীয় হিসাবে আমাদের যুক্তফ্রন্ট গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই সুযোগ যদি আমরা হারাই তাহলে শুধু আমাদের জন্য ক্ষতিকর হবে তা না, সারা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। ফ্যাসিবাদ আরও নৃশংস হবে, আরও নোংরা হবে।
সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন যে, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির অর্থায়নের কারণে বাংলাদেশে বৈষম্য বেড়েছে এবং শিক্ষা চিকিৎসা বাণিজ্যিকরণ হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের এখানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ভয়ঙ্কর শঙ্কার ভেতর পড়েছে। আর সেই বিশ্বব্যাংক আইএমএফ যদি এখনো দাপট নিয়ে চলে এবং এই সরকার যদি তাদের ওপর ভরসা করে এখনো যদি অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের চিন্তা করে তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হচ্ছে?
২৪-এর আন্দোলন কোনো বিপ্লব নয়, গণঅভ্যুত্থান এমন মন্তব্য করে সভায় মুজাহিদুল ইসমাল সেলিম বলেন, মানুষের মাঝে অহেতুক একটা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে যে, ২৪-এর আন্দোলন একটা বিপ্লব। এটা কোনো বিপ্লব নয়, এটা অভ্যুত্থান।
তিনি বলেন, এবারের আন্দোলনে ৬৯-এর তুলনায় একটি জায়গায় ঘাটতি ছিল। ৬৯-এর সময় সংগঠিত শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ ছিল, এটা এবার ছিল না। যদি থাকত তাহলে আমার ধারণা এই গণঅভ্যুত্থানের পর এখন আমাদের হয়তো এত শঙ্কা বোধ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন হতো না। আসলে বামপন্থা ছাড়া এদেশকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।