নির্বাচনকালীন সরকারের ইঙ্গিত ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার জাল’: মান্না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৩, ০৪:৫৬ পিএম
রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের ইঙ্গিত ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার জাল’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
বুধবার দুপুরে গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব দেননি। উনি নিজে ক্ষমতায় থাকবেন… থেকে প্রথম দিকে বলেছিলেন, তার সেক্রেটারিসহ অন্যান্যদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জায়গা দেবেন। পরে যখন বিএনপি মূল অপজিশন বলল যে, আমরা এটাতে যাবোই না। তখন বলল যে, ওদের কেন নেব?... তখন তারা (সরকার) বলছে, ওদের (বিএনপি) নেব না, যারা সংসদে আছে তাদেরকে দিয়ে...। সংসদে যারা আছে তারা তো তাদের সঙ্গে আছেই।’
মান্না বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য এই সরকারকেই যেতে হবে। তারপরে নতুন করে একটা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশ্ন। বাকি যেগুলো ওরা বলেছেন ওইগুলোতে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, জাল বিছানোর জন্য বলছেন, ওইগুলোতে আমরা খুব কেয়ার করছি না।’
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বে সংসদে থাকা তার রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের সরকার বর্তমান কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নমূলক সরকারের সম্প্রসারণ।’
‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের তামাশাপূর্ণ জ্বালিয়াতির নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম কোনো অবকাশ নেই। সেই কারণে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্তি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি সরকার ও শাসন্যবস্থা পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট ১৪ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ ধারায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে গণসংগ্রাম জোরদার ও বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।’
ঢাকায় অবস্থানরত ছয় দেশের কুটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস ও অস্থিরতা যে তৈরি করবে- তা অনুমান করা কঠিন নয়। সরকারের এসব আচরণ থেকে বুঝা যায় যে, বিশাল বহর নিয়ে তিন দেশে প্রধানমন্ত্রীর ১৫ দিনের সফর দেশ ও সরকারের জন্য তেমন কিছু অর্জিত হয়নি অর্থাৎ ক্ষমতায় থেকে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে কথিত এসব উন্নয়ন অংশীদারদেরকে তিনি ম্যানেজ করতে পারেননি।’
মান্না বলেন, ‘গত ১৫ মে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ও বিবিসিতে দেওয়া তার সাক্ষাতকার এবং সরকারের পদক্ষেপই তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এসব তৎপরতায় সরকারের রাগ ও ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। হতাশা ও ক্ষোভ থেকে নেওয়া এসব বক্তব্য এবং পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করবে, যার সম্ভাব্য মাশুল দিতে হবে দেশ ও দেশের জনগণকে।’
বেলা ১২টায় তোপখানা রোডে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে সংহতি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ ও পদযাত্রার পাঁচদিন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি এটা সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে সরকার পতনের লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ। চূড়ান্ত যে কর্মসূচি সেটা চূড়ান্ত সময় আসবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার নানা কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি। এই সরকার পতনের লক্ষ্যে জনগণের যে একটা অভ্যুত্থান সেটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঘটবে। দিনক্ষণ ঠিক-ঠাক করে আন্দোলনের বিষয়টি আমরা এভাবে বিশ্বাস করি না।’
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, সাকীব আনোয়ার, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, মোশাররফ হোসেন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নি শিখা জামালী, আকবর খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।