Logo
Logo
×

বাতায়ন

কেন বিএনপি মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন?

Icon

সাইদুর রহমান

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৩১ পিএম

কেন বিএনপি মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন?

বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হয়েও বারবার মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন হয়েছে। ২০০৭ সালের ওয়ান এলিভেনের পর ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয় বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির যখন বেশির ভাগ মানুষের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখনই মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের মতো বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বস্তুত উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং উগ্র অসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর টার্গেটে পড়েছে বিএনপি। ২০০৭ সালে উগ্র অসাম্প্রদায়িক চেতনার নামে আওয়ামী লীগ এবং বামপন্থীদের দ্বারা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয় বিএনপি। বর্তমানে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা মিডিয়া ট্রায়ালের সম্মুখীন দলটি। বিএনপির মারাত্মক ইমেজ সংকট তৈরি করতে তৎপর হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এদের সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে ফ্যাসিস্টের দোসররাও। 

মিডিয়াতে বিএনপি ঠেকাতে সরকারি একটি অংশের সমর্থনে জামাতের সঙ্গে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি জোটবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে। মেইনস্ট্রিম গণমাধ্যম এবং স্যোসাল মিডিয়াতে বরাবরই শক্ত অবস্থান আওয়ামী লীগ, বাম এবং জামায়াতপন্থিদের। বিশাল রাজনৈতিক দল বিএনপি কখনোই মিডিয়াতে নিজেদের লোকবল তৈরি করতে পারেনি। বরং বিএনপির হাত দিয়ে জামায়াত মিডিয়াতে লোকবল শক্তিশালী বলয় গড়ে তুলেছে। কে বিএনপি আর কে জামায়াত এটি নির্ণয় করবার নূন্যতম বোধশক্তি বিএনপির অনেক নেতারই নেই। তারই চূড়ান্ত ফসল মিডিয়া ট্রায়াল। 

বিএনপির শক্তিশালী মিডিয়া উইং নেই। যেটি আছে সেখানে প্রকৃত সাংবাদিকরা অনুপস্থিত। কেন্দ্রীয়ভাবে মিডিয়াতে বিএনপি ব্যবসায়ীদের সমর্থিতদের বিনিয়োগ নেই। দুই একটি থাকলেও নিয়ন্ত্রণ আছে ভিন্নমতের মিডিয়া কর্মীদের। এটি মুলত বিএনপি নেতা বা ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে বিএনপিপন্থি সেজে যাওয়ার রাজনীতির দর্শনের বহি:প্রকাশ। মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক কখনোই দলগতভাবে গড়ে উঠেনি, বেশিরভাগ হয়েছে ব্যক্তি সম্পর্ক কেন্দ্রীক। দলকে বাদ দিয়ে ব্যক্তির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সুবিধা দিচ্ছে তথাকথিত বিএনপিপন্থিরা।

বিগত ১৫ বছরে সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ হয়ে গিয়েছিল ফ্যাসিস্টের অনুসারি। স্যোসাল মিডিয়াতে সরকারের গুনগান গাইলেও কোনো অন্যায় বা অনাচার নিয়ে একটি টুশব্দও যারা করেননি, তারাই এখন ফ্যাসিস্ট বিরোধী, বিএনপিপন্থি। এই বিএনপিপন্থিরাই সুকৌশলে বিএনপির বারোটা বাজাচ্ছে। হাসিনা পতনের পর মিডিয়াতে বিএনপিপন্থি সাংবাদিকে সয়লাব হয়ে গেছে। এই প্রচুর বিএনপি সেজে যাওয়া মিডিয়া কর্মীরাই বিএনপিকে বিতর্কিত করে যাচ্ছে। 

বিএনপি কখনোই মেধাবী এবং উচ্চ শিক্ষিত মতাদর্শের সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করেনি। সবসময়ে তাবেদারি মার্কা সাংবাদিকদের মূল্যায়নের ফল পেতে হচ্ছে দলটির। বিএনপি যারা মিডিয়া দেখভাল করেন তারাও দলটির মেধাবী সংবাদকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনার পরিবর্তে কোনঠাসা করে রেখেছে। এমনকি দলটি যখন সাংবাদিকদের সম্মানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তখন আওয়ামী লীগ, বাম এবং জামায়াতপন্থীদের বিচরণ বেশি থাকে। যতদিন বিএনপির নেতাদের তাদের আদর্শিক বোধবুদ্ধির উদয় হবে না, ততদিন এভাবেই দলটি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হবে। 

মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে বিএনপির কেউ আদালত কর্তৃক শাস্তি পাবার আগেই বহুবার শাস্তি পেয়ে যাচ্ছেন, কোনো নির্দোষ বহুবার নির্দোষ প্রমাণেই আগেই বহুবার দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন। সাধারণত খুব চাঞ্চল্যকর কোনো ঘটনা বা কোনো বিখ্যাত-কুখ্যাত ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশে মিডিয়া ট্রায়ালের বড় একটি টেস্ট কেস হলো চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ছাত্রদল নেতা শাওন কাভি। 

মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য দায়ী বেশির অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত সাংবাদিকরাই। যাদের আশ্রয়স্থল রাজনৈতিক দল এবং নেতারা। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া গুজব, অপবাদ, ভুল তথ্য ইত্যাদির একটি বড় জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই বস্তুনিষ্ঠ স্ট্যাটাস দেয়। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু গণমাধ্যমকর্মী রয়েছে যারা টাকার জন্য মিথ্যা তথ্য প্রচার করে, যা আইনের দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধ। আবার বিএনপির বিরুদ্ধে কিছু রাজনৈতিক শক্তি দেশে বা বিদেশে বসে ভুয়া নামে আইডি খুলে অপ্রচারে নেমেছে। উপলব্ধি করতে হবে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য ও ভুয়া খবরের বিস্তার সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে গুজব, চাঞ্চল্যকরতার মাধ্যমে সমাজের মধ্যে বিভাজন ঘটায়। ভুল বার্তা তাৎক্ষণিক ছড়িয়ে দিয়ে ফায়দা নেয়। 

২০০৭ সালে বিএনপির বেশিরভাগ নেতা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হলেও বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ অপশাসন করলেও তাদেরকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখী হতে হয়নি। কারণ মিডিয়াতে আওয়ামী লীগপন্থিদের সরব উপস্থিতি বিদ্যমান। বিএনপির নেতারা যাদের কে বিএনপিপন্থি মনে করেন তারা যে বিএনপি না সেটি কখনোই অনুধাবন করেন না। আগামীতে পারবে কিনা সেটি নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। 

মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনেও ছন্দপতন ঘটে। বিঘ্নিত হয় কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ও ইন্টারনেটের প্রসার মিডিয়া ট্রায়াল প্রবণতাকে আরও প্রবল করেছে। এজন্যই বিএনপির উচিত প্রশিক্ষিত সংবাদকর্মী গড়ে তোলা। উচ্চ শিক্ষিত প্রকৃত দলীয় আদর্শে বিশ্বাসীদের মূল্যায়ন করা। শহর এবং মফস্বলে সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে মনোযোগী হওয়া। ব্যক্তিগতভাবে নয়, মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে দলগতভাবে সুস্পর্ক গড়ে তোলা। স্যোসাল মিডিয়াতে বিএনপির মতাদর্শের লোকদের দিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল প্রতিরোধে কার্যকরী ফোর্স তৈরি করা।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম