কেন জরুরি ডিআওয়ামীফিকেশন

ড. মাহবুব হাসান
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ডিকলোনাইজেশনের মানে হচ্ছে কলোনি-কর্তাদের দেওয়া সবকিছু শেকড়-বাকড়সহ উপড়ে ফেলা। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কলোনিয়াল ব্রিটিশ শাসনের কুৎসিত চেহারা দেখেছে, সেটা উপরিকাঠামোর বা বাইরের চেহারা। আমাদের ভেতর মহলের ক্ষতি এখনো সম্পূর্ণভাবে অনুভব বা উপলব্ধি করতে পারিনি। আবার এটাও হতে পারে, তারা উপলব্ধি ও অনুভব করতে পারলেও সেই কলোনিয়াল শাসনের খোল-নলচে কীভাবে উপড়ে ফেলতে হবে, সেই পথের সন্ধান জানে না। সেই পথটি খুঁজে বের করা জরুরি। জাগ্রতবোধও অনেক সময় ডিরেইলড হয়, হতে পারে। এই আমরা যেমন ডিরেইলড বা পথচ্যুত হয়েছি মূল লক্ষ্য থেকে। সেটা হয়েছে ব্রিটিশদের কালচারাল হেজেমনির ফলে। দুটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড আমাদের চিনিয়েছিল ব্রিটিশ-কসাই জেনারেল ডায়ারকে। এর চেয়েও বেশি চিনিয়েছে ব্রিটিশ রাজশক্তির নিষ্ঠুরতা ও রক্তলোলুপতা এবং লুটপাট। নিজেদের স্বার্থে তারা কতটা হিংস্র হতে পারে, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সেই আমলেই আমাদের চিনিয়ে দিয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের ডায়ারের স্মৃতিস্তম্ভ নিবন্ধটি যারা পড়েছেন, তাদের মনে পড়ানোর কথা। যারা পড়েননি, তারা পড়ে দেখবেন নজরুলের শ্লেষাত্মক ভাষার তীরগুলো কতটা বুকে এসে বেঁধে। ডিকলোনাইজেশন এজন্যই সবার আগে প্রয়োজন।
আর দ্বিতীয় উদাহরণটি হলো খেলাফত-অসহযোগ আন্দোলন যখন একযোগে চলছে, তখন চৌরিচৌরায় শাসকদের একটি থানা লুট করে নেয় আন্দোলনের গণমানুষ। ওই থানাগুলো বর্বর ব্রিটিশ শাসকদের স্থানীয় প্রতিভূ ছিল। গণমানুষ স্বাধীনতাকামী, ভেবেছিল শাসকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে লাগবে অস্ত্র। না হলে খালি হাতে অস্ত্রের মোকাবিলা করা যাবে না। ১৯৭১ সালে আমরা দেখিয়েছি বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র লাগে। থানার অস্ত্র লুটে নেওয়ার ঘটনা যখন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর কানে পৌঁছাল, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অসহযোগ আন্দোলন বন্ধ করতে হবে। কারণ হিসাবে বললেন, অসহযোগ আন্দোলন অ্যানার্কিতে রূপ নিচ্ছে। এটা গণবিক্ষোভের সঙ্গে যায় না। খেলাফত নেতাদের সঙ্গে তিনি এ নিয়ে কোনো কথাই বলেননি বা শোনেননি। ফলে গণআন্দোলন, অসহযোগ বন্ধ হয়ে গেল। স্তব্ধ হয়ে গেল গণমানুষের প্রত্যাশা। গণমানুষ চেয়েছিল, এ আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেবে সশস্ত্র সংগ্রামে, যার পরিণামে ব্রিটিশদের হটিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করব। কিন্তু সেই গণ-আকাঙ্ক্ষার গলা টিপে হত্যা করলেন গান্ধী। প্রায় ১৫০ বছরের পরাধীনতা, শাসন ও শোষণে ব্রিটিশদের শেকড়-বাকড় কেন আমরা উপড়ে ফেলতে সাহস পেলাম না? তার কারণ ওই কালচারাল হেজেমনি। তাদের সাংস্কৃতিক আভিজাত্য ও আধিপত্য গান্ধীকে শিখিয়েছিল, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ভেতর দিয়ে এগোতে হবে। কোনোরকম অ্যানার্কিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। ব্রিটিশ আইনের একজন ছাত্র হিসাবে গান্ধী সেটা পালন করেছেন। তিনি দেশের স্বাধীনতার চেয়ে ব্রিটিশ শাসকদের রক্ষা করার মানসিকতাই ধারণ ও লালন করতেন। তাই বিপ্লবী কোনো পথকে তিনি অনুমোদন করেননি। বিপ্লবী পথকে তিনি মনে করতেন ব্রিটিশদের মতোই অ্যানার্কি। গান্ধী ছিলেন ব্রিটিশদের স্বার্থরক্ষাকারী ভারতীয়। সে কারণে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন দেরিতে হয়েছিল।
কেন জরুরি, সে কথাই বলছি। ২০০ বছরের কলোনিয়াল ব্রিটিশ শাসনের ভেতর দিয়ে আমরা পেয়েছি তাদের সাংস্কৃতিক শিক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশাসন ব্যবস্থা আর সেই অনুযায়ী চিন্তাধারার একটি ধারাবাহিক লিগেসি। এসব অর্জন যদিও লিগেসি শব্দের সঙ্গে যায় না, বরং ওই শব্দটি যে আমাদের পরাধীন করে রাখার রাজনৈতিক প্রশাসনিক কলাকৌশল, সেটা আজ আমরা বুঝতে পারি।
হ্যাঁ, আমরা বুঝতে পারছি ওই লিগেসি আমাদের সাংস্কৃতিকভাবে পরাধীন করে রেখেছে। কিন্তু আমাদের গণমানুষ, যারা অধিকাংশই সাক্ষরহীন, যারা সামান্য পড়াশোনা করেছেন, তারাও বোঝেন না। যারা উচ্চশিক্ষিত, তাদের ১/২ শতাংশ বোঝেন, আমরা আজও ব্রিটিশদের সাংস্কৃতিক প্রবাহের ধারায়ই আছি। মানে আমাদের চিন্তা করার ধারাটা ব্রিটিশদের তৈরি করা পদ্ধতির অন্তর্গত।
এ ব্রিটিশ সাংস্কৃতিক হোল বা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার নামই হচ্ছে ডিকলোনাইজেশন। এ ধারার অতিসূক্ষ্ম বিষয় হলো চিন্তা করার স্বাধীনতা। আমরা কি স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারি? পারি না বলেই গণহত্যাকারীদের মনে করি, তারা কী এমন দোষ করেছে? যেন মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় থাকাটা অন্যায় নয়, সেটা সেই সরকারের রাজনৈতিক অধিকার।
শেখ হাসিনা যখন ইনোসেন্ট বদনে বলেছিলেন, আমার কী অপরাধ; অর্থাৎ তিনি কী করেছেন যে তাকে ক্ষমতার মসনদ থেকে চলে যেতে হবে; কী অপরাধ করেছেন যে তাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিল্লিতে আশ্রয় নিতে হবে-তিনি বুঝতে পারছিলেন না ব্রিটিশ জেনারেল ডায়ার যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, সেই হত্যার চেয়ে তার চালানো হত্যাযজ্ঞ কি তার চেয়ে কম নির্মম? ডায়ার তার স্বদেশি শাসকদের স্বার্থরক্ষার জন্য জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, আর হাসিনা দিল্লির স্থানীয় শাসক হিসাবে নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে দেশের মানুষকে হত্যা করেছেন। এই দুটি হত্যাযজ্ঞের মধ্যে মিল মানসিকতারই কেবল নয়, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক হেজেমনির। অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন কেন্দ্র, তিনি শাসক, তিনি যা চাইবেন তা-ই করতে হবে। তার কাছে বাংলাদেশের মানুষের জানমালের চেয়ে তার নিজের ক্ষমতাই বড়। তার এ অন্ধত্ব ঘোচানোর চেষ্টা আমরা কম-বেশি চেষ্টা করেছি প্রতিবাদী মিছিল-মিটিং ও পত্রিকায় রাজনৈতিক ভাষ্য রচনার ভেতর দিয়ে। কিন্তু তিনি তো অন্ধ, সেসব প্রতিবাদ দেখবেন বা পড়বেন কেমন করে? তার অন্ধত্বের চারপাশে ছিল তারই স্তাবক বাহিনী, যারা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকানা নিয়ে তাকে আপাদমস্তক মুড়ে ফেলেছিল। সেই দুর্ভেদ্য মিডিয়ার দেওয়াল ভেদ করে তার দেখার চোখ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারেনি। জনগণ নামক বোমাটি যে পেকে উঠছে, সেটাও তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি। কারণ দলের ভেতর থেকে কেউ বা কোনো গ্রুপ তাকে চ্যালেঞ্জ করেনি। তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো একজনও ছিল না। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর এখন যেমন আওয়ামী নেতাকর্মীরা টুঁ শব্দটি করছেন না, ঠিক সেরকম অবস্থাও ছিল হাসিনা ফোবিয়ায়। সেটা বোঝা যায় যখন বলেন ‘শেখ হাসিনা ডরায় না, শেখ হাসিনা পলায় না।’ তার এই বাণীবর্ষণের পরদিনই তিনি পালিয়ে উড়ে গেলেন দিল্লিতে। একে আমরা বলি ডম্ফাই। এ আস্ফালনই তাকে আরও হীনতর স্বৈরশাসকের তকমা দিয়েছে। দলে গণতন্ত্র থাকলে আওয়ামী রাজনৈতিক কালচার রাজা-রানীদের মতো এককেন্দ্রিক হতে পারত না। গণতন্ত্র না থাকায় তিনি ধীরে ধীরে দানবে পরিণত হয়েছেন। তার রাজনৈতিক ভুলগুলো যে তারই পতনের একেকটি পেরেকে পরিণত হয়েছে, সেটা বোঝার মতো মেধা ও মনন তার ছিল না। কেননা তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে ভারতের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বাণিজ্যিক কলোনিতে পরিণত করতে। কলোনি সবসময় সব উপকরণের জন্য নির্ভরশীল থাকে (শাসকের) কেন্দ্রের ওপর। ব্রিটিশদের পর পাকিস্তানি কলোনিতে ২৪ বছর ছিলাম আমরা। তারপর আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যকারী দেশ হিসাবে ভারতের কালচারাল হেজেমনি চলতে থাকে। গত ৫৩ বছর আমরা কোনোভাবেই যেন বুঝতে না পারি যে আমাদের মাথারমণি হিসাবে দিল্লি আছে। সেটা তো ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘আমাদের দিল্লি আছে।’ অর্থাৎ ‘আমরা দিল্লিরই অধীনে আছি।’ ব্রিটিশদের মতো দিল্লি সরাসরি না থাকলেও দেশি এজেন্ট হিসাবে শেখ হাসিনা এবং তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আছে। আমাদের চিন্তায়, আমাদের কল্পনায় দিল্লি চড়ে বেড়াচ্ছে, সেটা আমরা একটু মনোযোগ দিলেই বুঝতে পারব। ঢাকার বেসরকারি টিভি স্টেশনগুলোতে যেসব প্রোগ্রাম চলেছে গত ষোল বছর ধরে, সেগুলোর ন্যারেটিভ (বয়ান) লক্ষ করলেই চেনা যাবে আকরণ (স্ট্রাকচার) কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে আত্মস্বার্থান্ধ বিষয় কতটা প্রকট করে তোলা হয়েছে, যাতে এর কুপ্রভাবে আমাদের সমাজ কাঠামোর ভেতরে ঘুণপোকা বাসা বাঁধে। রাজধানী শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে উচ্চৈঃস্বরে বাজে ভারতীয় ফিল্মের চড়াগলার গান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা দেখেছি ভারতীয় নাচের কুৎসিত মুদ্রা, যা সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও চলেছে। জনগণের কণ্ঠে হিন্দি গানের দু-চারটি পঙ্ক্তি গাইতে গাইতে হেঁটে যেতে দেখেছি অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের যুবককে। সমাজের ভেতরে কেমন করে ঢুকে গেছে ভারতীয় সংস্কৃতির বিষয়গুলো, তা গভীরভাবে লক্ষ না করলে চেনা ও বোঝা যাবে না। গত ষোলো বছর ধরে রাজনৈতিক কালচারে চুরি, ডাকাতি ও লুটে নেওয়ার মন-মানসিকতার যে আধিপত্য, তা প্রমাণ করে আওয়ামী কালচারে দেশপ্রেম বিন্দু পরিমাণ নেই। কেবল দানবীয় আচরণ ও হুমকি-ধমকি বহমান। অর্থাৎ আওয়ামী কালচারই দানব সৃজনের সূতিকাগার হয়ে উঠেছে। একটি রাজনৈতিক দল যখন দানবীয় আচরণ করে, হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ হত্যার পরও যখন বলে আমার কী আপরাধ, তখন কোনো আওয়ামী-কর্মী এর প্রতিবাদ করে না। তারা মেনে নেয় বা তারা হাসিনার ওই দানব চরিত্রকে যখন অনুমোদন করে, তখন মানবতা কোথাও থাকতে পারে না।
আমাদের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যসূচি ও কারিকুলামে কলকাতার লেখকদের প্রাধান্য ও আধিপত্য বিরাজমান। গত ৫৩ বছরেও কি আমাদের সাহিত্যিকদের ভালো রচনা আমরা পাঠ্যসূচিতে রাখার মতো হয়ে উঠিনি? যারা কারিকুলাম রচনায় এক্সটারনাল হিসাবে থাকেন, তারা ওই দিল্লি বলয়ের লোক, যারা মনে করেন, ব্রিটিশ ও পরবর্তীকালে রচিত সাহিত্যের ভালো যা কিছু, সবই পশ্চিমবঙ্গেই হয়েছে, পূর্ব বাংলায় তেমন কিছু হয়নি। এটাই হচ্ছে মানসিকভাবে ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিকে লালনের পথ।
কেন ডিকলোনাইজেশন দরকার, সেটা নিশ্চয় বোঝা গেছে। কেন ডিআওয়ামীফিকেশন দরকার, তাও বোঝা যাওয়ার কথা। যারা বোঝেননি, তাদের বলব বিষয় দুটির তলের প্রবাহ কী সেটা বুঝে নেওয়ার। রাজনীতির উপরিকাঠামোতে চলমান থাকে চেনা কিছু তৎপরতা, যা দেখে মনে হয়, দলটি গণমনের কথাই বলছে। কিন্তু তার ব্যঞ্জনার্থ করা গেলে, তার ডিপার স্ট্রাকচারের অর্থ খুঁজে নিলেই চেনা যাবে আসল চেহারা। হাসিনা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন দিল্লিতে। সেটা তিনি নিতেই পারেন। সেখানে তার বন্ধু আছে। কিন্তু সেই বন্ধুরাষ্ট্রের সব রাজনৈতিক দল মিলে যখন সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা হাসিনাকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেবে, তখন বোঝা যায় তাদের আসল রূপ। দিল্লির প্রতিনিধি হিসাবেই যে হাসিনা বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক রাজত্ব চালিয়ে গেছেন, সেটা পরিপূর্ণভাবে প্রমাণ হয় এ ঘটনায়। হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় দলগুলো না হয় বুঝলাম হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে, কিন্তু কমিউনিস্টপন্থি দলগুলো, কংগ্রেসসহ তার মিত্ররা কেন বিজেপির আশা পূরণে হাসিনাকে আশ্রয় দিতে একমত হবে? কারণ একটাই, হাসিনা ষোল বছর ধরে যা করেছেন, তা তার প্রভুর সন্তুষ্টির জন্যই করেছেন। আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়, তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, আমি দিল্লিকে যা দিয়েছি, তা তারা কখনোই ভুলতে পারবে না। কথা সত্য। সে কারণেই হাসিনাকে আবারও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অকস্মাৎ নদীর পানি ভাটির দেশ বাংলাদেশকে না জানিয়ে ছেড়ে দেওয়া যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, সেই ঝুঁকি নিয়েও মোদি সেটা করেছেন। তিনি বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন। ভারত সীমান্তে এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছেন, যাতে মনে হতে পারে তারা বাংলাদেশে আক্রমণ চালাতে পারে। আক্রমণ করেনি বটে, তবে বুঝয়ে দিয়েছে কীভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নাকাল করতে হয়। আমাদের প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের অপতৎপরতার কারণেও আমরা এত বড় একটি গণ-অভ্যুত্থানের সুফল পাইনি। এসব কারণেই ডিআওয়ামীফিকেশন জরুরি। অপারেশন ডেভিল হান্টের চুনোপুঁটি আটক হয়েছে; যারা হাসিনার ক্ষমতার ছায়াসঙ্গী, তাদের দিকে কেন আঙুল ওঠে না? যারা সিন্ডিকেট করে কাঁচাবাজার ও পাকাবাজারের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের সেই চতুর্মুখী লুটেরা চক্রকে কেন ভাঙছেন না ড. ইউনূস?
ড. মাহবুব হাসান : কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক