বিজয়ীর বেশে এগোতে থাকেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দিন যত এগোতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ততই দৃশ্যমান হতে থাকে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ডিসেম্বরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম পায় ভিন্নমাত্রা। এ মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত প্রতিটি দিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ৩ ডিসেম্বর ছিল এক মোড় ঘুরানো দিন। মুক্তিবাহিনীর সর্বাত্মক হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দেশমাতৃকার বিভিন্ন জনপদ একে একে শত্রুমুক্ত করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে সামনের দিকে এগোতে থাকেন। মুক্তিবাহিনী একের পর এক যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁদে ফেলে। চলতে থাকে সম্মুখযুদ্ধ।
কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনী মিয়াবাজারে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলা চালায়। এদিন মুক্তিযোদ্ধারা মিয়াবাজার দখল করে নেন। আখাউড়ার আজমপুর স্টেশনে দুপক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দিনভর যুদ্ধ চালিয়ে যায়। সিলেটের ভানুগাছায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭ মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। নোয়াখালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সোনাইমুড়ী মুক্ত করে। এরপর তারা চৌমুহনীতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়।
রংপুরের পলাশবাড়ীতে ১২ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। সাতক্ষীরা থেকে পিছু হটে দৌলতপুরের দিকে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। পাকিস্তান এয়ারলাইন্স পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করে। সামরিক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সফল হামলায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও চট্টগ্রামের ফুয়েল পাম্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একের পর এক যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের কোণঠাসা করে ফেলেন। এদিনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো, বরগুনায় মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা পরাজয়বরণ করে। মুক্ত হয় বরগুনা জেলা।
এদিকে ৩ ডিসেম্বর ভারতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার পরই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের সম্মিলিত সর্বাত্মক লড়াই শুরু হয়। পশ্চিম ও পূর্ব রণাঙ্গনে গর্জে ওঠে কামান। ভারতীয় বিমানবাহিনী হামলা চালাতে শুরু করে। এতদিন পাকিস্তানি বাহিনীর বোমার আওয়াজে মানুষ আতঙ্কে থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা বিমান নিয়ে পালটা আক্রমণ শুরু করায় আনন্দিত-উদ্বেলিত হন তারা। তাদের সামনে দেখা দেয় মুক্তির আলোকছটা।