Logo
Logo
×

অন্যান্য

চিকিৎসায় শেষ সম্বল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম

চিকিৎসায় শেষ সম্বল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে

ফাইল ছবি

মানুষের চিকিৎসা ব্যয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জনপ্রতি মানুষের চিকিৎসা ব্যয় তিনগুণ বেড়েছে। সরকারি খাতে চিকিৎসা বরাদ্দ কমা, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে। সুপরিকল্পিত রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি করে নাগরিকদের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি হলে ‘ডক্টর ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ডা. চন্দন কান্তি দাসের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডা. এমএইচ লেলিন চৌধুরী, সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার এম আবু সাঈদ, সহ-সভাপতি ডা. রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. এমএইচ ফারুকী বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করতে যথাযথ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বছরে মাথাপিছু ব্যয় হয় মাত্র ৪৫ মার্কিন ডলার। একই সময়ে পাকিস্তানে ৪৫, নেপালে ৫০, ভারতে ২১২, ভূটানে ১০৩, শ্রীলংকায় ১৩১ ডলার ব্যয় হয়। 

তিনি বলেন, বিগত প্রায় ২০টি জাতীয় বাজেটের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাত বরাবরই অবহেলার শিকার। এ দীর্ঘ সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট জাতীয় বাজেটের গড়ে ৫.৫% এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে এবং জিডিপির ক্ষেত্রে সব সময়ই এক শতাংশের নিচে থেকেছে। অর্থাৎ সরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতকে সঠিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি ব্যয়ে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ কমপক্ষে ১৫% এবং জিডিপির কমপক্ষে ৫শতাংশ হওয়া উচিত।

ডা. ফারুকী বলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিসংখ্যান বলছে- দেশে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে ১০০ টাকায় ২০১৫ সালে ব্যক্তির খরচ ছিল ৬৭ টাকা। ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ৬৯ টাকায়। আর স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় ২০১৭ সালে ছিল ২৬ শতাংশ, তা ২০২০ সালে দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট যৌথভাবে পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের তুলনায় গড় মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় ২০২৩ সালে তিনগুণ বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক ১ হাজার ৭০৪ টাকা। 

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট কর্তৃক ২০১২ সালে তৈরি করা ‘স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্রে’ বলা হয়েছিল ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে ৩২ শতাংশ আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যক্তির স্বাস্থ্য ব্যয় কমার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭ সালে ৬৭ শতাংশে আর ২০২০ সালে ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ওষুধে ব্যয় হয়েছে ৪৪ শতাংশ। গত এক বছরে হাসপাতালগুলো রোগ নির্ণয়ে করা বিভিন্ন পরীক্ষার ফি, চিকিৎসকের পরামর্শ ফি ও ওষুধের ব্যয় বেড়েছে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ। ক্যানসার, কিডনি রোগ বা পক্ষাঘাতের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে শেষ সম্বল ভিটা বা জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছেন। এক গবেষণায় উঠে এসেছে বিনামূল্যের সরকারি সুবিধার বাইরেও রাজধানীর হতদরিদ্র বাসিন্দাদের মোট আয়ের এক-তৃতীয়াংশই ব্যয় হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা খাতে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থবছরে স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২- ২৩ অর্থবছরেও গবেষণার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এই টাকা কোনো কাজে লাগানো যায়নি। স্বাস্থ্য অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা প্রতিবছরই অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেওয়াকে এই খাতের বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর মতে, খরচ করতে না পারার পেছনে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। ১. কারিগরি সক্ষমতার অভাব। ২. পদ্ধতিগত সক্ষমতার অভাব।৩. লক্ষ্য নির্ধারণে নীতিগত সক্ষমতার অভাব। পদ্ধতির হিসেবে, স্বাস্থ্য খাতে এখনো বিকেন্দ্রীকরণ হয়নি। মাঠপর্যায়ে স্থাপনা থাকলেও স্থানীয় ব্যবস্থাপকদের অনেক কিছুর জন্যই চেয়ে থাকতে হয় কেন্দ্রের দিকে। জরুরি অনেক কাজ স্থানীয় ব্যবস্থাপকরা করতে পারেন না, তাদের সেই স্বাধীনতা নেই। ফলে অনেক সেবা বন্ধ থাকে!

বর্তমান বাস্তবতায় স্বাস্থ্য সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যতে সবার জন্য সহজলভ্য ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হলে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সঙ্গে একটি সুপরিকল্পিত রোগ-প্রতিরোধ ও নিরাময় ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পুনর্গঠনের জোর দাবি জানান তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম