Logo
Logo
×

জাতীয়

আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশদাতা কারা তা এখন বলা যাবে না: আইজিপি

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৯ এএম

আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশদাতা কারা তা এখন বলা যাবে না: আইজিপি

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে পুলিশের কত কর্মকর্তা গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন তা এখনই প্রকাশ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। 

তিনি বলেন, প্রতিটা মামলা আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে ঘটনাগুলো উঠে আসছে। সব মামলার তদন্ত শেষ হলে বলতে পারব, কতজন লোক গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন, কতজন লোক গুলি করেছিলেন। আর কতজন লোক এই কাজে বিরত ছিলেন। 

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সোমবার বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে পুলিশ অপেক্ষায় আছে। আরও বলেন, নিরীহ লোককে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না। এছাড়া পলাতক পুলিশ সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও অবহিত করেন বাহারুল হক।

আজ থেকে তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে।  প্রথম দিন বেলা সাড়ে ১০টায় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের ব্যাজ পরিয়ে দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। বেলা ১টায় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বেলা ২টায় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে তৈরি করা কর্মপরিকল্পনার ওপর ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৫টায় এসবিবিষয়ক প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের প্রেজেন্টেশন। এদিন সন্ধা ৭টায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবদের সঙ্গে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিন ১ মে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত পুলিশ অডিটোরিয়ামে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইজিপি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় পুলিশ অফিসার মেসে বার্ষিক পুনাক সমাবেশ ও আনন্দমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন বেলা সোয়া ১২টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত নাগরিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে মতবিনিময় সভা। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অফিসার্স মেসের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে বিকাল পৌনে চারটায়। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী সন্ধ্যা সাতটায়। রাত নয়টার ডিনারের মাধ্যমে পুলিশ সপ্তাহের সমাপনী ঘোষণা করা হবে।

পুলিশপ্রধান বলেন, মামলা তদন্তের বিষয়ে তাড়াহুড়া করছি না। এক মাসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে ফেলেন- এ রকম করতে গেলে আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারব না। এই জায়গাটাতে মনে হয় আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। তবে ভুল বা মিথ্যাভাবে যাদের আসামি করা হয়েছ তাদের তো স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধা নেই। তদন্ত কাজে কোনো বাধা নেই। বাদী যতই বলুক মামলায় ওনার নাম আছে বা নেই সে কথা কোর্টে কার্যকরী হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত কোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন না যাবে ততক্ষণ বাদীর কোনো স্টেটম্যান আমাদের তদন্তে প্রভাব ফেলবে না। কাজেই ভুল করে অনেকে কোর্টে যাচ্ছেন। এখানে আমরা কোনো আসামিকে প্রটেকশন দিতে পারছি না।

আইজিপি বলেন, আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে পারি ভুল পথে কেউ যাবেন না। প্রতারিত হয়ে কেউ কাউকে টাকা-পয়সা দেবেন না। যদি অসুবিধায় পড়েন পুলিশের কাছেই আসেন। আমি নিজেও মাঝে মাঝে থানায় ফোন করে বলি এই লোকটা আমার কাছে আসছে তাকে কি ধরার জন্য চেষ্টা করছেন? আমরা আসলে এতটুকুই করতে পারছি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও পলাতক তাদের ফিরিয়ে আনা ও গ্রেফতারের ব্যাপারে সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, যারা বাইরে পলাতক আছেন তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে একটা সুবিধা হচ্ছে ইন্টারপোলকে অনুরোধ করতে পারি। তারা বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ পাঠাতে পারি। আমরা ইতোমধ্যে সেটা করেছি। 

সারা দেশে মামলা হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের নামে মামলা হচ্ছে। নতুন করে গতকাল ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেক সময় আমরা আপনাদের মুখ থেকেও শুনি বেশির ভাগ মামলাই মিথ্যা। একটি চক্র এই মিথ্যা মামলার নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে। এ বিষয়ে আইজিপি বলেন, আগে যেটা হতো, কারও মৌখিক অভিযোগের মাধ্যমে মামলা দায়ের হতো। মৌখিকভাবে বলার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটা পুনর্লিখন করতেন। সেখানে অভিযোগকারীর সই-স্বাক্ষর নেওয়া হতো। এটা পাকিস্তান আমলে হতো। এখন যেটা হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগকারী নিজের হাতে অভিযোগ লিখে নিয়ে আসেন। বাদী যখন অভিযোগ নিয়ে আসেন তখন আমরা আইনের বাইরে যেতে পারি না। অভিযোগ সত্য না মিথ্যা সেটা যাচাই করার সুযোগ নেই। অভিযোগকারী যে অভিযোগটা দেন এক্সাক্টলি সেটাই আমাদের মামলা হিসাবে নিতে হয়। এরপর তদন্তে গিয়ে আমরা দেখি যে, কতটুকু সত্য, কতটুকু মিথ্যা। সত্যটুকুই আমরা তুলে ধরে আদালতে পাঠাই।

আইজিপি বলেন, ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে, অনেকে অসৎ উদ্দেশ্যে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় বা হয়রানির মতো অপরাধটা করেছে পাঁচজন বা দশজন। কিন্তু আরও ৩০০ জনের নাম দিয়ে মামলা দায়ের হচ্ছে। গতকালও একটা মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিশ্চিত করতে চাই যে, শুরু থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমি নিজেও বলেছি, সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই নির্দেশ পেয়েছেন যে, নিরীহ কোনো লোককে গ্রেফতার করা যাবে না। তদন্তে শুধু যার বিরুদ্ধে দায় পাওয়া যাবে তার বেলাতেই আমরা ওয়ারেন্ট চাইব। তাকেই শুধু আমরা গ্রেফতার করব।

যারা পুলিশের স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষা করেছেন জীবন বাজি রেখে তাদের কাউকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে। যাদের আমরা পদক দিচ্ছি তারা নিজের কাজের কৃতিত্বের অংশটুকু লিখে পাঠান আমাদের কাছে। কারণ আমাদের পক্ষে প্রত্যেকটা কেস ধরে ধরে জেনে রাখা সম্ভব হয় না। এগুলো উনারাই পাঠান সেগুলো থেকে কমিটি বাছাই করে বিবেচনা করে যে, এই কাজটা সাহসিকতা বা সেবার জন্য পদক প্রদানে বিবেচ্য। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ পুলিশের স্থাপনা বা সম্পদ রক্ষার জন্য পেয়েছেন কিনা তা আমাকে দেখতে হবে।

৫ আগস্টের পর ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের মব তৈরির চেষ্টা হয়েছে। আজও (সোমবার) গাজীপুরে একজনকে মব তৈরির মাধ্যমে মারধর করা হয়। পরে পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। এটা পুলিশের অবহেলার কারণে ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, অবহেলা থাকলে তো অবহেলা অবশ্যই। তবে এটা অবশ্যই প্রতিকার হওয়া উচিত, একজন মানুষ আইন অনুযায়ী অবশ্যই চিকিৎসা পাবেন। এক্ষেত্রে পুলিশের কোনো দায় থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন সম্পর্কে আইজিপি বলেন, এবার পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন আড়ম্বর ও আনুষ্ঠানিক না করে আমরা এবার ফাংশনাল বা কার্যকর করতে যাচ্ছি।

পুলিশের সংস্কার কমিশন গঠনের বিষয়ে আইজিপি বলেন, পুলিশ এখনো অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করছি এটা (স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠন) অ্যাড্রেস করা হবে। আমরা আমাদের কথাগুলো সরকারকে জানাচ্ছি। অনেকে বলেন, এই সরকারের আমলে না হলে আর কখনো হবে না। সেজন্যই আমরা এখনই এগুলো করতে চাইছি। আইজিপি বলেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অভিমত জানাতে পারবেন। এজন্যই বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে সভার আয়োজন করা হয়েছে।

পুলিশ আইজিপি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম