
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
নতুন আলোচনায় তুরিন আফরোজ, যা বললেন সহকর্মীরা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৫ পিএম

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
আরও পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলায় গ্রেফতার আইনজীবী তুরিন আফরোজকে মঙ্গলবার ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে আলোচিত এই আইনজীবী এবার গ্রেফতারের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বিভিন্ন মামলার বিচারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
তবে শেষটা সুখকর হয়নি, এক আসামির সঙ্গে ‘গোপন বৈঠক করে অসদাচরণের’ অভিযোগ মাথায় নিয়ে তাকে বিদায় নিতে হয় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম থেকে।
২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে তাকে অপসারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার।
ট্রাইব্যুনাল থেকে তুরিনকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে ওই সময় আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের প্রজ্ঞাপনে ‘শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের’ কথা বলা হয়।
তাকে অপসারণের পর তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া ‘জরুরি’ হয়ে পড়েছিল।
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।
২০১৮ সালের এপ্রিলে অভিযোগ ওঠে, মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর তুরিন ২০১৭ সালের নভেম্বরে ওয়াহিদুল হককে ফোন করে কথা বলেন। পরে পরিচয় গোপন করে ঢাকার একটি হোটেলে তার সঙ্গে দেখা করেন।
ওই অভিযোগ ওঠার পর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ওয়াহিদুল ও তুরিনের কথোপকথনের রেকর্ড ও বৈঠকের অডিও রেকর্ডসহ যাবতীয় ‘তথ্য-প্রমাণ’ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের ৯ মে তাকে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তুরিন সেই সময় অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো জবাব দেননি। এক ফেসবুক পোস্টে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও ওই গোপন বৈঠকের কথা তিনি অস্বীকার করেননি।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে কাজ করা তুরিন আফরোজ বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার এক সহকর্মী (নাম প্রকাশ
না করে) বলেছেন, আমরা কেউ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমের ওপর পড়ালেখা করি নাই। ইন্টারন্যাশনাল
ক্রাইমের ওপর লেখাপড়া করে তিনি এখানে এসেছিলেন। অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই, তার তাত্ত্বিক
যে ভিত্তিটা, এটা ছিল অত্যন্ত উঁচুমানের।
বাংলাদেশের যুদ্ধপরাধ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডস
ও হাউজ অব কমন্স, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি,
নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের পার্লামেন্টে শুনানিতে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তুরিন আফরোজের।
‘জেনোসাইড, ওয়ার ক্রাইমস এবং ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি
ইন বাংলাদেশ: ট্রায়াল আন্ডার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭১’
এবং ‘ট্রায়ালস অব ১৯৭১ বাংলাদেশ জেনোসাইড: থ্রো এ লিগ্যাল লেন্স’ নামে বই রয়েছে তার
প্রকাশনার মধ্যে।
সহকর্মীদের চোখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ও বাণিজ্য আইনে বিশেষ
পারদর্শী তুরিন আফরোজের জন্ম ১৯৭১ সালে ঢাকায়। তার বাবা তসলিম উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ
সরকারের রাজস্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। তাদের আদি নিবাস নীলফামারী জেলার
জলঢাকা থানার চাওরাডাঙ্গি গ্রামে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক পাশের
পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও রাজনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি।
এরপর ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এলএলবি করে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনি থেকে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনে এলএলএম করেন।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘আইন ও উন্নয়ন অর্থনীতির’ ওপর পিএইচডি করা
তুরিন আফরোজ ব্যারিস্টার ও সলিসিটর হিসেবে কাজ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস
সুপ্রিম কোর্টে।
দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবী হিসেবে
তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে
পড়িয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
গঠনের তিন বছরের মাথায় প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তুরিন আফরোজ। আগে থেকেই যুদ্ধাপরাধের
বিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
এক প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান
পান্না বলেছেন, তুরিন আফরোজ কিংবা যে কারও ক্ষেত্রে শুধু ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত’ হোক-
কেউ যদি রাষ্ট্রের ক্ষতি করে, তার বিচার করা হোক। আর যদি ক্ষতি না করার পরেও কাউকে
হেনস্তা করা হয়, তাহলে হেনস্তাকারীদেরও বিচার হোক।
পারিবারিক বিরোধে সংবাদের
শিরোনামে: সৎমা
এবং ভাইদের সঙ্গে বাড়ি নিয়ে বিরোধে বিভিন্ন সময়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক এই প্রসিকিউটর।
বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ওই বাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৎভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজের সঙ্গে মামলা চলছে তুরিন আফরোজের।
এ নিয়ে আদালতের রায়ের পর আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সবশেষ গত
১২ মার্চ পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।