জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে প্রশ্নে যা বললেন নাহিদ

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম

নাহিদ ইসলাম। ফাইল ছবি
ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। জুলাই-আগস্টের সেই গণবিপ্লবের অন্যতম নেতা ছিলেন নাহিদ ইসলাম। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারেরও উপদেষ্টা ছিলেন ছয়মাস। সম্প্রতি সরকার থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দল গঠন করেছেন। হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। নতুন দল নিয়ে ভাবনা, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক, চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নাহিদ। সেটি তুলে ধরা হলো—
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি কি জামায়াতে ইসলামির ঘনিষ্ঠ? তাদের দাবিগুলোর সঙ্গে আপনাদের মিল রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এনসিপি বাংলাদেশে মৌলবাদের বিস্তারে অবদান রাখবে।
নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি), জামায়াত, এনসিপি- আমরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এর অর্থ কি আমরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ? মোটেও না। যদি তেমনটাই হতো তাহলে আমরা জোট গঠন করতাম।
এনসিপি এবং জামায়াত সম্পূর্ণ ভিন্ন দল। তাদের এজেন্ডা আলাদা। যার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াত আমাদের ঘনিষ্ঠও নয়। আমাদের কিছু দাবি মিলে যেতে পারে। যেমন, আমরা প্রথমে সংস্কারের পক্ষে। যার মাধ্যমে গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা এবং বৃহত্তর কাঠামোগত পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দেই। এক্ষেত্রে আমরা মৌলবাদের ওপর নির্ভরশীল বলে যে দাবি তোলা হয়েছে তা একটি মিথ্যা আখ্যান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। যেমন, কেউ কেউ জুলাই অভ্যুত্থানকে সন্ত্রাসী আন্দোলন (টেরোরিজম মুভমেন্ট) হিসেবে চিহ্নিত করছেন, যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনি আন্দোলন থেকে সরকারে গেছেন। পরে আবার রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন এবং এতে সক্রিয় হয়েছেন। আপনার অভিজ্ঞতা কী?
নাহিদ ইসলাম: সরকারকে বাইরে থেকে দেখা আর ভেতর থেকে দেখা সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা। যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল বিশেষ চ্যালেঞ্জিং সময়। আমার জন্য ছিল কঠিন অভিজ্ঞতা। সময়ের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে আমি পদত্যাগ করে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি। এখন, আমি এই অভিজ্ঞতাকে আমার ভবিষ্যতের রাজনৈতিক যাত্রা গঠনের জন্য ব্যবহার করব। যেহেতু সামনের পথটি কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা আমার জন্য নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ, তবে আমি এটি মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অন্তর্বর্তী সরকারে থাকাকালে আপনি কতটা সংস্কার করতে পেরেছেন?
নাহিদ ইসলাম: আমার স্বল্প মেয়াদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা ইন্টারনেট অবকাঠামোর স্তরগুলো সংশোধন করেছি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য একটি সংস্কার রোডম্যাপ তৈরি করেছি এবং উন্নত তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে সেন্সরশিপ আরোপকারী বিভিন্ন আইনের সমাধান করেছি। যদিও এই সংস্কারগুলোর সম্পূর্ণ প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান নাও হতে পারে, তবে আমি নিশ্চিত যে এগুলো দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা বয়ে আনবে।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? এটি কি ডানপন্থি দল হবে নাকি বামপন্থি?
নাহিদ ইসলাম: এর কোনোটাই হবে না। এনসিপি মধ্যপন্থি (সেন্ট্রিস্ট) রাজনৈতিক দল। এই আদর্শ বজায় রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে তরুণ এবং সকল সামাজিক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরি করা। যারা বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছে। আমরা একটি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র (সেকেন্ড রিপাবলিক) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রাখি, যার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন সংবিধান প্রবর্তন করে দেশের ক্ষমতা কাঠামো পুনর্গঠন করতে চাই। আমরা সক্রিয়ভাবে ধারণাগুলো অন্বেষণ করছি এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও স্পষ্ট রূপ দিতে মতামত সংগ্রহ করছি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: অনেকেই বলছেন এনসিপি ‘কিংস পার্টি’। তারা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। এটা কি সত্য?
নাহিদ ইসলাম: যদি এনসিপি ‘কিংস পার্টি’ হতো তাহলে কি আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করতাম? আমি থাকতে পারতাম, আমার অবস্থান ব্যবহার করতে পারতাম এবং ভেতর থেকে রাজনীতি করতে পারতাম। আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছি না। অভ্যুত্থানে আমাদের ভূমিকার জন্য সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কেবল অনুপ্রেরণা এবং স্বীকৃতি পাচ্ছি। তাছাড়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো একদলীয় সরকার নয়। এতে বিভিন্ন আদর্শিক পটভূমির মানুষ অন্তর্ভুক্ত। ফলত, প্রতিটি দল সরকারের কাছ থেকে একই আচরণ পাচ্ছে।