
ফাইল ছবি
প্রশাসনে চলতি মাসে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) কার্যক্রম শেষ। দু’এক দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হতে পারে। স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং বিতর্কমুক্ত পদোন্নতি দিতে সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দাবি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের। এরপরও ফ্যাসিবাদ সময়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি), মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের একান্ত সচিবরা (পিএস) যুগ্ম সচিব হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে তদবির করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এবারের পদোন্নতিতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচকে মূল বিবেচনায় নিয়ে এগুচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এছাড়া ইতিপূর্বে বঞ্চিত বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তারাও পদোন্নতির বিবেচনায় থাকছেন। নিয়মিত এবং আগের বঞ্চিত সব মিলিয়ে ৪৭৫ জন উপ-সচিবের যাবতীয় রেকর্ড যাচাই করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৫ জনের পদোন্নতি হতে পারে। তবে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে যারা ডিসির দায়িত্বপালন করেছেন, তারা রেড জোনে আছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান যুগান্তরকে বলেন, যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে এখনও মন্তব্য করার মতো সময় হয়নি। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মানসুর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১ জুলাই যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পূর্ব নোটিশে বিভিন্ন (গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্সির প্রতিবেদন, শৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন, বার্ষিক গোপনীয় এবং প্রশিক্ষণ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল। ওই সময় সরকারবিরোধী অন্দোলন সংগ্রামের প্রভাব পড়ে প্রশাসনে। নোটিশ জারির পর থেকে অর্থাৎ ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পলায়ন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত এসএসবি’র কোনো বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। ৮ আগস্টের পর প্রশাসনে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে এসএসবি করতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের সঙ্গে বঞ্চিত ২০তম, ২১তম এবং ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ব্যাচের অর্থাৎ ২৪তম ব্যাচের ৩৪৪ এবং তিন ব্যাচের বঞ্চিত ১২৫ জনের যাবতীয় তথ্য যাচাই করা হয়েছে।
জানা গেছে, পদোন্নতি ঘিরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন কর্ণার থেকে তদবির আসছে। একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাবেক সচিবরা এসব তদবির করছেন। সরকারের কমপক্ষে দুজন উপদেষ্টাও যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করেছেন। ১৬/১৭ বছর আগের সচিবরাও তদবিরে নেমেছেন। বিগত সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী পদোন্নতি প্রত্যাশী নিয়মিত এবং বঞ্চিতব্যাচের কর্মকর্তাদের পক্ষে এসব তদবির হচ্ছে। ফ্যাসিবাদের সময়ে ডিসি, পিএস এবং বিদেশ মিশনে পোস্টিং পাওয়া বিতর্কিত কর্মকর্তারা তদবিরের জোরে এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে ডিসি হিসাবে দায়িত্বপালন করা কর্মকর্তারাও পিছিয়ে নেই। বিসিএস ২৪ ব্যাচের ৭২ জন কর্মকর্তা ডিসি হিসাবে দায়িত্বপালন করেছেন। এরমধ্যে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের সময় বিসিএস ২৪ ব্যাচের ২৫ কর্মকর্তা ডিসি ছিলেন।
বিগত সরকারের সময়ে বঞ্চিত এবং অপেক্ষকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তারা অভিন্ন সুরে যুগান্তরকে বলেন, স্বৈরাচারের দোসর সাবেক ডিসি, প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের পিএস এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের লোভনীয় পোস্টিংয়ে থাকা কর্মকর্তারা বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। সরকারের গুডবুকে থাকায় তারা দু’হাতে অর্থ-কড়ি উপার্জন করেছেন। এখন তারা পদোন্নতির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছে। যে কোনো মূল্যে তারা পদোন্নতি পেতে চায়। বিগত ১৬/১৭ বছর আগে সচিবের দায়িত্বপালন করা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ তাদের পক্ষে কথা বলছেন এবং তদবির করছেন। অথচ তারা তাদের চেনা-জানার কথা না। এখন সাবেক সচিবরা অনেক বিতর্কিত উপ-সচিবকে আত্মীয় হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পরস্পর মিলেমিশে পথ চলার সবক দিচ্ছেন অনেকে।
তবে পদোন্নতি সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে যারা ডিসির দায়িত্বপালন করেছেন, তারা রেড জোনে রয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ে যারা ডিসি হিসাবে দায়িত্বপালন করেছেন অর্থাৎ শুধু ডিসি থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কারণ ডিসি প্রশাসন ক্যাডারের সিডিউলভুক্ত একটি পদ এবং যোগ্য যে কোনো কর্মকর্তাকে সরকার ডিসি হিসাবে নিয়োগ দিলে সে দায়িত্বপালন করতে হয়। তারা আরও জানান, ডিসি হিসাবে দায়িত্বপালনের সময় যারা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তাদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর।
এছাড়া বিগত সরকারের সময়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী কিংবা প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের পিএস বা বিদেশ মিশনে যারা পোস্টিংয়ে ছিলেন, এরমধ্যে যারা সৎ, দক্ষ এবং যোগ্য তাদের কোনো ভয় থাকার কারণ নেই। কিন্তু পিএসদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা অন্য কোনো শৃঙ্খল ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয় সরকার নেতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে এক প্রশ্নর জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেছিলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের ডিসি, এসপিদের মধ্যে যারা বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্বপালন করেছেন, তাদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের মধ্যে কমপক্ষে একজনও স্বৈরাচারের বেআইনি আদেশ অমান্য করে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। তা করলে আমরা উদাহরণ দিয়ে বলতে পারতাম। সুতরাং তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে দুদক ব্যবস্থা নেবে। আর নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা সবাই জানতে পারবে।