Logo
Logo
×

জাতীয়

কক্সবাজারে জাতিসংঘ মহাসচিবের সতর্কবার্তা

‘তহবিল সংকটে অনাহারে অনেক রোহিঙ্গার মৃত্যু হতে পারে’

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৬ এএম

‘তহবিল সংকটে অনাহারে অনেক রোহিঙ্গার মৃত্যু হতে পারে’

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে জাতিসংঘ মহাসচিব। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সফরের সময় তিনি শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনেন এবং আসন্ন তহবিল সংকটের ফলে তাদের খাদ্য সহায়তা অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এছাড়া, মিয়ানমারের সংঘাত ও ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।  

রোহিঙ্গাদের স্বপ্ন ও আশঙ্কা  

শরণার্থী শিবিরে মহাসচিব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। তিনি জানান, শরণার্থীরা প্রধানত দুটি বার্তা দিয়েছে—প্রথমত, তারা নিরাপদে নিজেদের দেশে ফিরতে চায়, দ্বিতীয়ত, শিবিরে তাদের জীবনমানের উন্নতি চায়।  

তিনি শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, যারা শিক্ষার সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ হলেও স্বদেশ হারানোর কষ্টে ভুগছে। তরুণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অনেকেই আশঙ্কা করছে, জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি)) তহবিল সংকটের কারণে তাদের খাদ্য সহায়তা মাসিক ১২.৫০ ডলার থেকে ৬ ডলারে নেমে আসবে।  

নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশগ্রহণ পরিদর্শনে গুতেরেস একটি পাটপণ্য প্রস্ততকেন্দ্রে যান, যেখানে শরণার্থী নারীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করছে। তিনি তাদের প্রতি সমর্থন জানান এবং আশ্বস্ত করেন যে তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।  

গভীর সংকটের সতর্কবার্তা  

সন্ধ্যায় মহাসচিব ৬০,০০০ শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু খাবার ভাগাভাগির বিষয় নয়, এটি তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি আমার সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক।’ 

তবে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের সম্মুখীন। তহবিল সংকটের কারণে অনেক মানুষ কষ্ট পাবে, কেউ কেউ না খেয়ে মারা যেতে পারে।’  

তিনি বলেন, ‘আমার কণ্ঠ থামবে না, যতক্ষণ না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে যে রোহিঙ্গাদের জন্য বিনিয়োগ করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব।’  

মিয়ানমারে খাদ্য সংকট: বিপর্যয়ের পথে লাখো মানুষ  

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, আসন্ন তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে মিয়ানমারে ১০ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান সংঘাত, বাস্তুচ্যুতি ও প্রবেশাধিকারের সীমাবদ্ধতার কারণে খাদ্য চাহিদা মারাত্মকভাবে বেড়েছে।  

নতুন তহবিল ছাড়া, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) শুধুমাত্র ৩৫,০০০ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সহায়তা দিতে পারবে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া রাখাইন রাজ্যের প্রায় ১,০০,০০০ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে, যার মধ্যে রোহিঙ্গারা অন্যতম।  

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যে জরুরি ভিত্তিতে ৬০ মিলিয়ন ডলার না পেলে মিয়ানমারে লাখ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়বে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা অবিলম্বে এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।  

(এই প্রতিবেদন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকের ব্রিফিং থেকে সংকলিত।)

Jamuna Electronics

img img
Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম