Logo
Logo
×

জাতীয়

আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের জার্নি আবরার, যার অর্জন জুলাই বিপ্লব: আসিফ মাহমুদ

Icon

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম

আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের জার্নি আবরার, যার অর্জন জুলাই বিপ্লব: আসিফ মাহমুদ

জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আবরার ফাহাদ আমাদের আগ্রাসন বিরোধী লড়াইয়ের একটা জার্নি। সেই জার্নির অন্যতম অর্জন জুলাই গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থানে এ দেশের তরুণরা জীবন দিতে প্রেরণা পেয়েছে আবরার ফাহাদের থেকে। আগ্রাসন থেকে মুক্তির জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এদেশের তরুণরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজপথে।

তিনি বলেন, অবশেষে আগ্রাসী অপশক্তির সবচেয়ে বড় খুঁটি শেখ হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছি। আমাদের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ ও আগ্রাসনবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদেরকে যেন আমরা সবাই আজন্ম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখি। সেজন্য কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার আবরার ফাহাদের স্মৃতি মুছে দিতে চেয়েছিল। তারা আবরার ফাহাদকে নিয়ে নিউজ করতে দিত না, কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিত না। কর্মসূচি পালন করতে গেলে হামলা করা হতো, জেল জুলুমের শিকার হতে হতো। যারা আত্মত্যাগ করে তাদের নাম কখনো মুছে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আবরার ফাহাদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীর নামে নির্মিত আন্তর্জাতিকমানের এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ শুধু একটি নাম নয়, আবরার ফাহাদ হচ্ছেন আগ্রাসনবিরোধী সংগ্রামের প্রথম শহিদ। তাকে আজীবন স্মরণীয় রাখতে কুষ্টিয়া স্টেডিয়াম তার নামে নাম করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করা হয়। এই স্টেডিয়ামকে আরও আধুনিকায়ন করা হবে জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।

২০২০ সালে স্টেডিয়ামটি শেখ কামালের নামে শেখ কামাল স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে মাসে স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে শহিদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম নামকরণ করা হয়। খুলনা বিভাগের মধ্যে এক মাঠে দুই খেলার এটিই প্রথম স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক মানে নির্মিত এই স্টেডিয়ামে ক্রিকেট মাঠের পাশাপাশি ফুটবল খেলারও সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্ত্বাবধানে ১৩ একর জায়গা নিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছে। এতে কুষ্টিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে সূচিত হয়েছে এক নবদিগন্তের।

কুষ্টিয়ার এই মাঠ থেকেই গড়ে উঠেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, মোহাম্মদ মিথুন, এনামুল হক, বিজয়দের মতো সব তারকা খেলোয়াড়। ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলেও আকরাম, আশরাফুলের মতো তারকা খেলোয়াড়দের জন্ম এই কুষ্টিয়া জেলায়।

আসিফ মাহমুদ বলেন, আগ্রাসনবিরোধী প্রতিটি লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা শহিদ আবরার ফাহাদ। পরাজিত শক্তি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। এধরণের প্রচেষ্টাকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আরও বলেছেন, আবরার ফাহাদ ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে ২০১৯ সালে বুয়েটের ছাত্রলীগের নির্যাতনে শহিদ হন। আবরার ফাহাদ শাহাদাতের পর সেদিন সকালে যখন আমাদের কাছে খবরটা পৌঁছায়। তখন থমথমে পরিবেশ, কিছু করলেই ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশ গ্রেফতার করত। তখন আমরা কোনো কিছু না ভেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করি। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে সবাই ভিজে মিছিলে অংশগ্রহণ করে। তারপর খুনিদের বিচারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকে।

উপদেষ্টা আসিফ আরও বলেন, আগ্রাসনবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে আবরার ফাহাদ অন্যতম নতুন ধাপ সংযোজন করে গেছেন। আবরার ফাহাদকে সামনে রেখে আমরা সেই লড়াইকে চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবছর ৭ অক্টোবর দিনটিকে স্মরণ করতে চেয়েছি। আবরার ফাহাদ স্মরণে পলাশীতে স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করার কয়েকঘণ্টা পর ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুলিশ সেটি ভেঙে দিয়েছিল। আমরা সেটা পুনরায় নির্মাণ করেছি। আবরার ফাহাদের তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণ সভার আয়োজন করেছিলাম। সেখানে ছাত্রলীগ হামলা করে এবং আহতাবস্থায় আমিসহ আমার ২৪ জন সহযোদ্ধাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। এতে দীর্ঘদিন আমরা জেলে ছিলাম। এছাড়া সারাদেশে সরকারি স্থাপনা আত্মত্যাগকারী শহিদ বীরদের নামে নামকরণ করা হবে।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া, সারা দেশে লালনভূমি হিসেবে পরিচিত। সবাই মিলে খেলাধুলাকে প্রমোট করবেন। এই স্টেডিয়াম যেন সবসময় খেলাধুলায় মেতে থাকে। এখান থেকে যেন জাতীয় পর্যায়ের ভালো ভালো খেলোয়াড় পাই সেই প্রত্যাশা থাকবে। বেকারত্ব মাদক নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তরুণ সমাজকে মাদকমুক্ত করার জন্য অন্যতম উপায় খেলাধুলা।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকিসুদ জাহেদী, যুগ্ম সচিব আমিনুল রহমান, আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৭ মিনিটে আবরার ফাহাদের জন্মভূমি কুমারখালীতে শহিদ আবরার ফাহাদ জামে মসজিদের সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বেলা ১১টার দিকে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙা ঈদগাহ ও কবরস্থানে পৌঁছালে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে শহিদ আবরার ফাহাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও কবর জিয়ারত করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। পরে দুপুর ২টায় কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমীতে জেলার সুধী সমাজের সাথে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম