Logo
Logo
×

জাতীয়

২০২৩-২৪ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মসূচি

সন্তোষজনক নয় ৭৮৯ প্রকল্পের অগ্রগতি

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৭ এএম

সন্তোষজনক নয় ৭৮৯ প্রকল্পের অগ্রগতি

গত অর্থবছরে ৭৮৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের সন্তোষজনক বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে ২৯২টির আর্থিক ও ২৮৭টির বাস্তব অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল না। বাকি ৮৯টির আর্থিক এবং ১২১ প্রকল্পে বাস্তব অগ্রগতি ছিল একেবারেই শূন্য পর্যায়ে। শেষ হয়ে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) মূল্যায়ন করে এসব তথ্য পেয়েছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

আজ এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন তিনি। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরের এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেওয়া হবে এ বৈঠকে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

প্রকল্পগুলোর এ অবস্থার নেপথ্যে ১১টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এগুলো হলো-অর্থছাড় না হওয়া, দেরিতে অর্থছাড় হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, দরপত্র আহবানে দেরি এবং দরপত্র রেসপনসিভ না হওয়া। আরো আছে-প্রকল্পের ঋণ না পাওয়া, অপ্রতুল বরাদ্দ, মামলাজনিত সমস্যা, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন, আরএডিপি অনুমোদনে দেরি এবং উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে চুক্তি করতে দেরি হওয়া।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন রোববার যুগান্তরকে বলেন, জবাবদিহিতার অভাবে বছরের পর বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এখনে আইএমইডি প্রকল্প পরিচালকদের সরাসরি ধরতে পারে না। এজন্য ভায়া হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলতে হয়। তারা ব্যবস্থা না নিলে কিছু করার থাকে না। তিনি আরও বলেন, শ্রীলংকা ইভাল্যুয়েশন নীতিমালা করেছে, নেপালে ইভাল্যুয়েশন আইন আছে এবং ইন্দোনেশিয়ায় ইভাল্যুয়েশন নীতিমালা আছে। এরকম পৃথিবীর অনেক দেশ অনেক আগেই এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেরকম কোনো বিষয় নেই। ফলে প্রতি অর্থবছর যা হবার তাই হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এত বেশি টাকা কাটছাঁটের বেশ কিছু কারণ আছে। সেগুলো সবারই জানা।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলমান প্রকল্প ছিল এক হাজার ৬৫৯টি। এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এগুলোর মধ্যে বাস্তবায়নের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি অনেক প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে ৭৬ থেকে ৮৯ শতাংশ বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ২৪৪টি প্রকল্পের। ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রগতি ১৭৯টির, ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ১০৮টির এবং ২৫ শতাংশ থেকে তার নিচে বাস্তব অগ্রগতির প্রকল্প ৬১টি এবং শূন্য বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ১২১টি প্রকল্পের। গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ অনুযায়ী আর্থিক অগ্রগতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট বরাদ্দের শতভাগ বা এরও বেশি ব্যয় হয়েছে ২৫১টি প্রকল্পের। এ ছাড়া ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে ৭৫১ প্রকল্পে, ৭৬ থেকে ৮৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে ১৯৩টির, ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে ১৭৬টির এবং ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে ১১৫ প্রকল্পের। এ ছাড়া ২৫ শতাংশ থেকে নিচে ৮৩টির এবং শূন্য অগ্রগতি বা এক টাকাও খরচ হয়নি ৮৯টি প্রকল্পের। এগুলো আর্থিক ও পরিকল্পনা শৃঙ্খলার পরিপন্থি কাজ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এডিপি থেকে কাটছাঁট হচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা : চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে বাদ যাচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ। ৫০ বছরের মধ্যে এত বেশি বরাদ্দ কমাতে হয়নি কখনো। প্রধানত ৫ কারণে এ পরিস্থিতি। এগুলো হলো-আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় না করা, অন্তর্বর্তী সরকারের কড়াকড়ি, অদক্ষতায় সময় মতো কাজ করতে না পাড়া এবং পুরনো সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক। পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন রোববার যুগান্তরকে বলেন, এটা কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এর পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে। তবে বরাদ্দ কমলেও সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম বা অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। কেননা, যে দেশে ১৮ কোটি মানুষের বসবাস, সে দেশের অর্থনীতি এমনিতেই সচল থাকবে।

এনইসিতে উঠতে যাওয়া কার্যপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ছাড়া)। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে দুই লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দ কাঁটছাট হচ্ছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া হবে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা।

আইএমইডি জানায়, গত অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে এসে ২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কাটছাঁট করে মোট বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এ অর্থবছর শেষে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছিল দুই লাখ পাঁচ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দ কমিয়ে যা দেওয়া হয়েছিল তার ৮০ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার তিন কোটি টাকা। অর্থবছরের মাঝপথে এসে ১৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বাদ দিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছিল এরও কম দুই লাখ এক হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ বরাদ্দের ৮৫ শতাংশ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম