
প্রিন্ট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৮ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম

আরও পড়ুন
জলবায়ু পরির্বতনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সীমিত অংশগ্রহণ অভিযোজন কার্যক্রম প্রক্রিয়ার প্রধান বাধা। নির্দিষ্ট পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা এবং বংশবিস্তারের জন্য জীবের শরীরবৃত্তীয় ও আচরণগত দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন হলো অভিযোজন। সুশাসনের অভাবে অভিযোজনের প্রতি কম গুরুত্ব দেওয়ায় ঘূর্ণিঝড় আইলার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের মৌসুমি বেকারত্ব বাড়ছে। একইসঙ্গে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের কার্যকারিতা: সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক দুটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘সেন্টার ফর পার্টিসিপাটরি রিসার্স অ্যান্ড ডেভলপেমেন্ট (সিপিআরডি) ও ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপেমেন্ট’ (আইসিসিসিএডি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান মিলনায়তনে এক সেমিনারে গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
সিপিআরডি স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা, ঝুঁকি হ্রাস ও প্রতিরোধে কার্যক্রম চিহ্নিতকরণে ক্ষতিগ্রস্ত এলকায় গবেষণাটি করেছে। গবেষণায় কোনো ধরনের অভিযোজন কৌশল সময়ের সঙ্গে কার্যকারিতা হারাচ্ছে দেখা হয়। আইসিসিসিএডির গবেষণায় বাংলাদেশে কার্যকর জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের চ্যালেঞ্জ: দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা এবং উত্তর-পূর্ব হাওর অঞ্চল থেকে প্রমাণ অনুসন্ধান করা হয়।
গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য লিটারেচার রিভিউ, তথ্যদাতা সাক্ষাৎকার, মাঠ পর্যবেক্ষণ, দ্রুত মূল্যায়ন ও পরামর্শ সভা পরিচালনা করা হয়। এতে উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। এছাড়া, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও আদিবাসীদের সঙ্গে দলীয় আলোচনায় করা হয়। দুটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল- হাওড় অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল থেকে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণা ফলাফলে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সুশাসনের অভাব, জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার সংকট ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল কার্যকাক্রম দেখা গেছে। অভিযোজন প্রকল্পগুলোতে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কেন্দ্রিক, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানের ওপর নির্ভরশীল এবং সমাজের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ওপর কম গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণা দেখা গেছে। অভিযোজন কার্যক্রমগুলো প্রয়োজনভিত্তিক নয়, অর্থনৈতিক ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যও বিবেচনায় আনা হয়নি। ভবিষ্যৎ ঝুঁকিগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে যথাযথভাবে মূল্যায়ণ করা হয়নি। স্থানীয় জ্ঞান ও ঐতিহ্যগত ব্যবস্থার ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এছাড়া উপযুক্ত জায়গায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ না করায় যোগাযোগ চ্যালেঞ্জ দেখা গেছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা না রাখাসহ নিরাপত্তার অভাব দেখা চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সুশাসনের অভাব দেখা গেছে।
সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম. আসাদুজ্জামান এবং পিকেএসএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বী সাদেক আহমেদ, আইসিসিসিএডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব হক। বিশেষজ্ঞ আলোচনায় অংশ নেন বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পাবলিক পলিসি অ্যান্ড আরবান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. লরা কুহল, ওপিএম নেপালের জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সিনিয়র পরামর্শদাতা ড. বিমল রাজ রেগমি, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের সিনিয়র ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন স্পেশালিস্ট ফয়সাল রহমান প্রমুখ।