আরএফইডি’র নতুন কমিটির অভিষেক
জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, ইঙ্গিত সিইসির

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৩ পিএম

আগামী জুনের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব নয়, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করা। এ লক্ষ্যেই ইসি জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সোমবার আগারগাঁওয়ের ইটিআই ভবনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)’ নতুন কমিটির অভিষেক ও বিদায়ি কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘আগামী জুনের মধ্যে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব’ স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এ বিষয়ে নাসির উদ্দীন আরও বলেন, ‘সংস্কার কমিশন পরামর্শ দিয়েছে, জুনে নির্বাচন করা সম্ভব। সেটি সম্ভব হবে যদি ১৬ লাখ মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া না হয় এবং নতুন ভোটারদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হয়। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী জুন মাসে।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেছে। তারা (কমিশনের সদস্যরা) বিজ্ঞ ও জ্ঞানী লোকজন। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এ বিষয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। নির্বাচন কমিশন এ বিতর্কে জড়াতে চায় না। আগে ভোটার তালিকা হোক। এখনো ভোটার তালিকা করা সম্ভব হয়নি।’
সিইসি বলেন, ‘১৬ লাখ মৃত ভোটারকে বাদ না দিলে, যারা ভোটার হননি তাদের বাদ দিলে স্থানীয় নির্বাচন আগে করা সম্ভব। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হবে জুন মাসের শেষে। সুষ্ঠু ভোটার তালিকা করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন ডাটাএন্ট্রির কাজ চলছে। আমরা যথাসম্ভব ব্যবস্থা রাখছি যাতে ভুলটা কম হয়। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জুনের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন করেছেন। যখন স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করতে পারব, তখন আমরা নির্বাচনের কথা বলতে পারব।’
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে হলে অক্টোবরে তফশিল ঘোষণা করতে হবে উল্লেখ নাসির উদ্দীন বলেন, ‘ভোটার তালিকা তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি জোরেশোরে চলছে। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের অনেকগুলো আবেদন ঝুলে আছে। আইনি জটিলতার কারণে তা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করার জন্য ইতোমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। আরও কিছু বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে নির্বাচন কমিশন। যদি সংস্কার কমিশন গঠন করা না হতো, তাহলেও এটি করতে হতো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার দরকার বলে কমিশন মনে করে, সেটুকু করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
সিইসি আরও বলেন, ‘সরকার থেকে ডিসেম্বর বা আগামী বছরের মধ্যে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। বৃষ্টি ও বর্ষাকাল থাকায় মে-জুনে করা যাবে না। করলে হয়তো এপ্রিলে করতে হবে। আমরা ডিসেম্বর ধরে প্রস্তুতি এগিয়ে রাখছি।’
বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বর আসতে আসতে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যেখানে ভোট ছাড়া মানুষের আর কোনো চিন্তা থাকবে না।
সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, এই একটা বিষয়ে পুরো জাতিই এক জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘সব দলের নিজস্ব দৃষ্টি আছে। এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। গণতন্ত্র মানে হলো ভিন্নমত, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, ভিন্ন চাহিদা থাকবে। যাই হোক আমাদের প্রস্তুতি থেমে থাকবে না। আমাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা নাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য কাজ করছি।’
ত্রাণের আশায় অনেক বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা হয়েছেন জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছি। নানা ধরনের রিলিফ বা ত্রাণের আশায় অনেক বাংলাদেশি নাগরিক স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা হয়েছেন। যার কারণে এখন তারা বাংলাদেশের ভোটার হতে পারছেন না। কক্সবাজার এলাকায় এমন তথ্য পেয়েছি।’
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত সভাপতি দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি কাজী জেবেল এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার গোলাম রাব্বানীসহ কমিটির অন্যরা দায়িত্ব গ্রহণ করেন।